বুধবার, ১১ জুন, ২০১৪


ইরাকে মহাষড়যন্ত্র; কে হচ্ছে নতুন ‘মুরসি’ ও ‘সিসি’? ইরাকের সন্ত্রাস-কবলিত অঞ্চল ইরাকের সন্ত্রাস-কবলিত অঞ্চল ১২ জুন (রেডিও তেহরান) : উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘আইএসআইএল’-এর মাধ্যমে ইরাকের মোসুল ও তিকরিত শহর দখল করার ঘটনার পেছনে দেশি-বিদেশি মহাষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন। জানা গেছে, মাত্র ৫,০০০ বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী মীরজাফর জাতীয় একদল ইরাকি সেনা কর্মকর্তার সহায়তায় প্রায় ৬০,০০০ ইরাকি সরকারি সেনার কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়েই মোসুল ও তিকরিত শহর দখল করতে সক্ষম হয়। সন্ত্রাসীদের কাছে ছিল প্রায় ১,০০০ গাড়ি এবং এইসব গাড়িতে ইরাকি নাম্বার প্লেট ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি বিনা যুদ্ধে পালিয়ে যাওয়া ইরাকি সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন। আর এইসব সেনা কর্মকর্তার অনেকেই দূরবর্তী নিরাপদ অঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে বা আত্মগোপনে থেকে কথিত পরাজয়ের ব্যাপারে নানা সাফাই বা অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ইরাকি সেনা কর্মকর্তাদের অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করে সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্রের গুদাম, ব্যাংক ও কারাগারগুলো ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। অবশ্য এইসব সন্ত্রাসী কুর্দি সুন্নি মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যাপক বাধার মুখে খুব একটা সফল হতে পারে নি। এর আগে সন্ত্রাসীরা ইরাকের শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলেও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তুরস্ক সীমান্তের মাত্র ৩০ কিলোমিটারের মধ্যেই মোসুল অবস্থিত। অবশ্য অনুগত সরকারি সেনারা এরইমধ্যে তিকরিতের কিছু অংশ পুনর্দখলও করেছে। জানা গেছে, বহু সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার দায়ে ইরাকি আদালতে অভিযুক্ত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইরাকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক আল-হাশিমি সৌদি আরব থেকে আইএসআইএল-এর সন্ত্রাসীদের সেনা অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বিষয়টিকে সুন্নিদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তারেক আল-হাশিমি অভিযুক্ত হওয়ার পর প্রথমে কুর্দি অঞ্চলে পালিয়ে যান ও পরে তুরস্কে এবং সেখান থেকে সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছেন, ষড়যন্ত্রকামী শক্তিগুলো ইরাকেও মিশরের মত একজন জেনারেলকে ক্ষমতায় বসাতে চায় যাতে দেশটির গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থী সরকারের পতন ঘটে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী মহল এবং তাদের সহযোগী সৌদি আরব ও কাতার সরকারের অনুচররা ইরাকে সাদ্দামের পতনের পর থেকে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের কার্ড ব্যবহার করে তাদের অশুভ লক্ষ্যগুলো অর্জন করার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হওয়ার পর এখন আল-কায়দার সহযোগী দলগুলোর মত কথিত জিহাদি বা সন্ত্রাসী দলগুলোকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ শিয়া মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে অতীতে সব সময়ই সংখ্যালঘিষ্ঠ সুন্নিদের শাসন প্রতিষ্ঠার নামে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। সিরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ষড়যন্ত্র সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ায় তারা ইরাকে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে জোরদারের চেষ্টা করেছে এবং বিষয়টিকে তারা সুন্নিদের উত্থান বলে প্রচারের চেষ্টা করছে। ইরাকের সাম্প্রতিক নির্বাচনে নুরি আল-মালিকির জোটের বিপুল বিজয় ও বিদেশিদের তাবেদারদের ভরাডুবি দেশটির রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মার্কিন-সৌদি-কাতারি চক্র এবং তাদের ইরাকি অনুচরদের রাজনৈতিক পুঁজি-বিনিয়োগকে পুরোপুরি ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই চক্রের প্রতিনিধি হিসেবে অভিযুক্ত আইয়াদ আলাভির দল ও জোট ইরাকের সাম্প্রতিক সংসদ নির্বাচনে আসন পেয়েছে প্রায় ১৮টি। অথচ এর আগের সংসদ নির্বাচনে তাদের জোট পেয়েছিল প্রায় ৯০ টি আসন। সাম্রাজ্যবাদী চক্র ও তাদের ক্রীড়নক আঞ্চলিক সরকারগুলো ইরাকের সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলের জনগণের কাছে নুরি আল-মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, নুরি আল মালিকির সরকার শিয়াদের সরকার হিসেবে সুন্নিদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় না এবং গোটা ইরাকের ও সুন্নিদের নিরাপত্তা রক্ষা করতেও সক্ষম নয়। তাই এই ব্যর্থ সরকারের পতন ঘটিয়ে ইরাককে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আবারো সুন্নিদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর এক্ষেত্রে ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখানো হচ্ছে সন্ত্রাসী দল আল-কায়েদার নতুন সংস্করণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ‘আইএসআইএল’কে। ইরাকের সুন্নিদের অনেকেই এইসব বিষাক্ত প্রচারণায় প্রভাবিত হচ্ছেন। কিন্তু ইরাকি সুন্নিদের মধ্যে যারা সচেতন তারা এটাও দেখছেন যে, সাবেক বাথিস্টদের সহায়তা নিয়ে এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সুন্নিসহ ইরাকের সব সম্প্রদায়ের ওপরই গণহত্যা চালাচ্ছে। তাই তারা এটা বুঝতে পারছেন যে, বিদেশ থেকে জিহাদের নামে ভাড়া করা এইসব ধর্মান্ধ তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসী আসলে গোটা ইরাকেরই শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের শত্রু। আর এ অবস্থায় তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরাকের সরকারি সেনাদের সঙ্গে সহযোগিতাও করছেন। আর এই সহযোগিতার ‘শাস্তি’ হিসেবেও আরো অনেক সুন্নি ইরাকির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে বিদেশ থেকে আসা সালাফি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকে ঘরের শত্রু বা মীরজাফরদের ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি তাদের বিদেশি প্রভুদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলার জন্য জাতীয় ঐক্য জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। দুই একটি অঞ্চলের ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইরাকিদের দেশপ্রেম ও সচেতনতার কারণেই দেশটিতে সিসি’র মত কোনো নতুন জেনারেলকে ক্ষমতায় আনার বিদেশি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে বলে তাদের ধারাণা।# রেডিও তেহরান/এএইচ/এমআই/১২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন