বাগদাদের কাছেই সুন্নী বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোর লড়াই
সর্বশেষ আপডেট মঙ্গলবার, 17 জুন, 2014 13:09 GMT 19:09 বাংলাদেশ সময়
ইরাকের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সুন্নী জঙ্গীদের জোর লড়াই চলছে।
বাগদাদ থেকে মাত্র ষাট কিলোমিটার দূরে বাকুবা শহর থেকে সরকারি কর্মকর্তারা জানান, নিরাপত্তা বাহিনী বিদ্রোহীদের কাছ থেকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়
আন্তর্জাতিক
আনবার প্রদেশের কয়েকটি এলাকায় জোর লড়াই চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সেখানে বিদ্রোহীরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছে।
ইরাকের উত্তরে সরকারি বাহিনী তাল আফার শহর পুর্নদখলের চেষ্টা করছে। সোমবার বিদ্রোহীরা এই শহরটি দখল করে নেয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে তারা ইরাকে ১৭৫ জনের একটি সামরিক দল মোতায়েন করছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরাকে মার্কিন নাগরিক ও তাদের সম্পদ রক্ষার্থে এদের পাঠানো হচ্ছে।
বাকুবায় তীব্র লড়াই
বেসামরিক লোকজনকে পাহারা দিচ্ছে সরকারি বাহিনী
বাগদাদের কাছাকাছি সবচেয়ে বড় শহর বাকুবা গত রাতে বেশ কিছুটা সময়ের জন্য আইসিসি এবং সুন্নী জঙ্গীদের হাতে চলে গিয়েছিল। তবে জানা গেছে সরকারি সৈন্যরা শিয়া মিলিশিয়াদের সাহায্য নিয়ে শহরটি পুর্নদখল করেছে।
তবে বাগদাদ থেকে বিবিসির রিচার্ড গ্যালপিন জানাচ্ছেন, বাকুবা থেকে তার কিছু সূত্র জানিয়েছে শহরের বেশ কিছু মহল্লা এখনও আইসিসের নিয়ন্ত্রণে এবং শহর থেকে ভয়ে বহু মানুষ পালাচ্ছে।
রিচার্ড গ্যালপিন জানাচ্ছেন, আইসিসি শুধু হুমকির জন্য শুধু হমকি দেয়নি, সত্যিই তারা বাগদাদের দিকে এগুনোর চেষ্টা করছে। বাগদাদের পশ্চিম দিকে ফালুজা নামে একটি শহরে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।
আইসিসের যোদ্ধারা সেখানে একটি সামরিক হেলিকপ্টার গুলি করে নামিয়েছে। কয়েকটি ট্যাংকও তারা ধ্বংস করেছে। তবে মসুল বা তিকরিত থেকে গত সপ্তাহে সরকারি বাহিনীকে যেভাবে বিনা যুদ্ধে পালাতে দেখা গিয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আকাশ পথে এবং স্থলপথে সরকারি বাহিনী এবং শিয়া মিলিশিয়ারা আইসিসের মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে।
তাল আফর নামে যে শহরটি গতকাল আইসিসের হাতে পতন হয়েছিল, সেটি পুনর্দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইরান এখন সরাসরি সাহায্য করছে বাগদাদের সরকারকে।
ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের একটি এলিট ইউনিটের কমান্ডার কাশেম সোলাইমানি তিনি এখন বাগদাদের বসে সরকারি বাহিনী এবং শিয়া মিলিশিয়াদের সামরিক কর্মকান্ড সমন্বয় করছেন্।
ইরাকের অখন্ডতা নিয়ে উদ্বেগ
গোত্রগত সংঘাত যেভাবে আবার তীব্র হয়ে উঠেছে তাতে ইরাক ভেঙ্গে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে।
বেশ কিছুদিন ধরেই এই উদ্বেগ বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে।
ইরাকের সুন্নি সম্প্রদায় মনে করছে বাগদাদের সরকার একটি শিয়া সরকার, তারা শুধু শিয়াদের স্বার্থই দেখছে। আইসিসের এই সামরিক সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ ইরাকের সুন্নি সম্প্রদায়ের শক্ত সমর্থণ তারা পাচ্ছে। সুন্নিদের বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠি তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। সাদ্দাম হোসেনের ইরাকের সেনাবাহিনীতে সুন্নিদের প্রাধান্য ছিল। এদের অনেকেও এখন আইসিসের সাথে হাত মিলিয়েছে। ফলে পুরোপুরি এদেরকে সামরিকভাবে পরাজিত করা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ দিন দিন গাঢ় হচ্ছে।
অনেক পর্যবেক্ষকই বলছে ইরাক শিয়া, সুন্নি এবং কুর্দি এই তিনটি সম্প্রদায়ের লাইনে হয়ত বিভক্ত হয়ে যাবে।
ইরাকের কুর্দিদের স্বশাসিত অঞ্চল রয়েছে। তাদের নিজের সরকার রয়েছে, নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। কুর্দিস্তানের সরকারের প্রধানমন্ত্রী নেচিরভান বারযানি এখন বলছেন, সুন্নিদের জন্য এখন একটি স্বশাসিত অঞ্চল হলে সবার জন্যই ভালো। সেটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
বাগদাদ থেকে বিবিসির জন সিম্পসন জানিয়েছেন, শিয়াদের অনেকেও এখন এই ধারণা সমর্থন করছেন। তারা ভাবছেন, সেটা হলে তাদের নিরাপত্তাহীনতা হয়ত দূর হতে পারে।
ইরানের সাথে সম্পর্ক
আমেরিকা এবং ব্রিটেন বলে দিয়েছে তারা ইরাকে সৈন্য পাঠাবে না। আইসিসকে ঠেকাতে অন্য কিভাবে ইরাকের সরকারকে সহযোগিতা করা যায় সেটা নিয়ে তুমুল চিন্তাভাবনা চলছে।
এই দুটি দেশই তাদের অভিন্ন শত্রু ইরানের কাছ সহযোগিতা চাওয়ার কথা ভাবছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী উইলিয়াম হেগ আজ বলেছেন, তেহরানে নতুন করে দূতাবাস চালু করতে চাইছে সরকার। ২০১১-তে তেরানে ব্রিটিশ দূতাবাসে এক হামলা, ভাংচুরের পর ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করেছিল ব্রিটেন।
মিস্টার হেগ গত সপ্তাহান্তে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে টেলিফোনে কথাও বলেন।
ভিয়েনাতে ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি নিয়ে এক বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা ইরাক নিয়ে ইরানী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
তবে ইরানের সাথে সামরিক সহযোগিতার কোন সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে শত্রুর যে শত্রু তারা সাথে কৌশলগত বন্ধুত্বের পথে যদি আমেরিকা বা ব্রিটেন যায় অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন