সোমবার, ২ জুন, ২০১৪


পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বাড়ছে লিভ টুগেদার 670 662 Google +2 5 1 0 ঢাকা, জুন ০১: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান ও সুবর্ণা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। এরপর ঘনিষ্ঠতা এবং আজিমপুরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে একত্রে বসবাস শুরু করেন। হাসান সুবর্ণার মতো ঢাকা শহরে অনেক ছেলে মেয়েই এখন বিয়ে না করে একত্রে বসবাস করছেন। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরনের সম্পর্ককে বলা হচ্ছে লিভ টুগেদার। এই লিভ টুগেদার চর্চা ঢাকা শহরে দিন দিন বাড়ছে। রাজধানীর মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরাও এখন আগ্রহী হয়ে উঠছে এ ধরনের সম্পর্কে। এতে করে বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহ হারাচ্ছে আজকের তরুণ প্রজন্ম। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকার লিভ টুগেদার নিয়ে নানা চমকপ্রদ তথ্য। উচ্চবিত্তের দরজা পেরিয়ে লিভ টুগেদার এখন পৌঁছে গেছে মধ্যবিত্তের দরজায়। অনেক টিনেএজও নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন এ গন্তব্যহীন সম্পর্কে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি। অনেকেই নিজেদের বিলাসবহুল জীবনের চাহিদা মেটানোর জন্য এ সম্পর্কের মধ্যে নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন। আমাদের শোবিজের অনেক সেলিব্রেটিই ইদানীং ঝুঁকে পড়ছেন লিভ টুগেদারে। প্রায়ই তাদের এই নিয়ন্ত্রণহীন সম্পর্কের জন্য বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা যায়। এদের মধ্যে কিছু আলোচিত জুটি হলো জেনি-শুভ, শোয়েব-মৌসুমী নাগ, নিরব-সারিকা, হৃদয় খান-সুজানা। আবার হিলে�াল-নওশিনের মতো কোন কোন তারকা জুটিকে চুটিয়ে লিভ টুগেদার করার পর বিয়ের সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখা গেছে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের মূল্যবোধের পিলারে ক্ষয় সৃষ্টির কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে। হাসান এবং সুবর্ণা জানান আমাদের মধ্যে বাধা-ধরা কিছু নেই। এ সম্পর্ককে কোন সামাজিক রূপ দেবেন কি না, তাও তারা জানেন না। লিভ টুগেদার আর বহুমুখী এ সম্পর্কের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. নাসরীন ওয়াদুদ বলেন, লিভ টুগেদার বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আর এর ব্যাপক বৃদ্ধির কারণ হলো আমাদের সমাজে যে পিলারগুলো ছিল তা ক্ষয়ে যাচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রসমাজ তথা পরিবার ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক যে শিক্ষা ছেলে মেয়োরা সেভাবে নিচ্ছে না। আর অপসংস্কৃতির প্রভাব তো আছেই। যাতে প্রভাবিত হয়ে এখনকার ছেলেমেয়েরা এসবের দিকে প্রভাবিত হচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের মধ্যে যেমন এর প্রবণতা আছে, এর সঙ্গে সঙ্গে এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েকে এদিকে বেশি ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে। আর এসবের কারণে সমাজ হারিয়ে ফেলছে তার পরিচয়। এখন মানুষ বিবাহ বন্ধনে বিশ্বাসী না। তারা মনে করে এতে অনেক দায়িত্ব, তাই নিজেরা নিজেদের মতো করে এ সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যাতে তারা পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে পারে। আর এসবের কারণে বাড়ছে ডিভোর্স। ভালবাসা শুধু এখন দেহনির্ভর। যার মধ্যে নেই মনের কোন আবেদন। আর এসবের কারণে দিন দিন সমাজ ধাবিত হচ্ছে ধ্বংসের দিকে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফ আলীর মতে, ছেলে-মেয়েদের বিয়ের জন্য উৎকৃষ্ট বয়স ২২ থেকে ২৮ বছর। কিন্তু আমাদের দেশের বেশীরভাগ ছেলে মেয়ে ৩০ বছরেও নিজেদের ক্যারিয়ারে নির্ভরতার জায়গায় দাড়াঁতে পারে না। ফলে বিয়ে করার মতো দায়িত্ববোধ তাদের মধ্যে তৈরি হয় না। সামাজিক দায়িত্ব এড়াতেই ছেলে মেয়েরা লিভ টুগোদারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। লিভ টুগেদার এর একটা বাস্তব গল্প শুনিয়ে শেষ করবো। একই জেলা শহর থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছেন শামীম এবং তানিয়া। নিজেদের মধ্যে পূর্ব পরিচয় ঢাকায় এসে আরো ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। সম্পকর্কের ঘনিষ্ঠতার সূত্রে শামীম তখন তানিয়ার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহ দেখায়। কিন্তু তানিয়া সামাজিক মূল্যবোধের কথা চিন্তা করে এবং দুজন গোপনে বিয়ের কথা বলে। কিন্তু শামীম এখনই বিয়ে করতে রাজী নয়, নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তারপর বিয়ে করতে চাই। তখন দুজন পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ ছোঁয়ে পরষ্পরের পাশে থাকার শপথ নেয় এবং একত্রে বসবাস শুরু করে। কিন্তু ৭/৮ মাস যাওয়ার পরই শামীম ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার ক্যারিয়ার নিয়ে। এদিকে তানিয়া চাপ দিতে থাকে সামাজিকভাবে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু শামীম এখন আর এই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার ব্যপারে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু তানিয়া যে কোন মূল্যে এ সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে চাই। এই ঘটনাটির সাইকোলজিক্যাল ব্যাখা জানতে চাইলে মানোবিজ্ঞানী ইসরাত খান বলেন, শামীম আসলে শারীরিক সম্পর্কটাকেই গুরুত্ব দিয়ে এই প্রেমের সম্পর্কটা তৈরি করেছিলো। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সম্পর্ক শুরুর সময় শারীরিক বিষয়টা প্রাধান্য পায়। লিভ টুগেদারের পর শামীমের সেই চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেলে সে সম্পর্কটার ব্যপারে আগ্রহ হারায়। যেহেতু সামাজিকভাবে কোন চাপ নাই, তাই শামীমের পক্ষে সম্পর্কটা ভেঙ্গে দেয়া অনেক সহজ। যদি সামজিকভাবে তাদের বসবাসের স্বীকৃতি থাকতো তাহলে হয়তো এমন সহজভাবে সম্পর্কটা ভেঙ্গে দেয়ার ব্যাপারে শামীম ভাবতে পারতো না। ছেলে মেয়েদের মধ্যে শারীরিক আকর্ষণ ২ থেকে ৩ বছর পর আর খুব একটা থাকে না। এরপর সামাজিক দারবদ্ধতা এবং পারষ্পরিক ভালোবাসার মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কগুলো টিকে থাকে। লিভ টুগেদারের মধ্যে শুধুই শারীরিক আকর্ষণ কাজ করে সেখানে ভালোবাসাটা কম গুরুত্ব পায়। শারীরিক সম্পর্কের মোহ কেটে গেলে সম্পর্কটাকে ভেঙ্গে দেয়া হয়। - See more at: http://sharenews24.com/index.php?page=details&nc=05&news_id=41839#sthash.d9nQp5Mt.NYaxo7i3.dpuf

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন