সোমবার, ২৩ জুন, ২০১৪


বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম *ভয়াবহ জলাবদ্ধতা *জিম্মি ৫০ লাখ মানুষ *বাজেটে বরাদ্দ নেই প্রকাশ : ২৩ জুন, ২০১৪ ০০:০০:০০আপডেট : ২৩ জুন, ২০১৪ ০৩:৩৮:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলছে না চট্টগ্রাম নগরবাসীর। হালকা বৃষ্টিতেও থৈ থৈ হয়ে যায় বন্দরনগরী। বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় নগরী। প্রাকৃতিকভাবে মৌসুমি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ওঠে নগরের নিম্নাঞ্চলে। সৃষ্ট সংকটের কাছে অসহায় নগরের ৫০ লাখ মানুষ। জলাবদ্ধতার এ অভিশাপের জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া, সঠিক পরিকল্পনার অভাবসহ বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলম মনে করেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে ২৯৭ কোটি টাকার একটি খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত একটি নতুন খাল খনন করা হবে। জানা যায়, প্রাকৃতিকভাবে মৌসুমি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ওঠে নগরের নিম্নাঞ্চলে। অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ ও নানা প্রকারের বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট সংকটের কাছে চরমভাবে অসহায় নগরের ৫০ লাখ মানুষ। ফলে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার মতো চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়। সরেজমিন দেখা যায়, গত তিন দিনের টানা বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণে নগরবাসীর নাগরিক জীবন অনেকটাই পানিবন্দী। ইতিমধ্যেই তলিয়ে গেছে নগরীর অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল। চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও অফিসগামীরা। জলাবদ্ধতার কাছে অসহায় আÍসমর্পণ করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। পানি ঢুকেছে সরকারি বেসরকারি অফিসে। কোমর পানি উঠেছে বাসা-বাড়িতে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকায় বন্ধ রয়েছে ক্রয় বিক্রয়। বন্ধ রয়েছে সড়কে যান চলাচল। যাত্রীদের চলাচলের এখন ভরসা ভ্যান কিংবা প্যাডেল রিকশা। ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে নগরীর আগ্রাবাদ, ছোটপুল, বড়পুল, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, পাহাড়তলি, সরাইপাড়া, সাগরিকা, কাঁচারাস্তার মাথা, পতেঙ্গার নিম্নাঞ্চল, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, নাসিরাবাদ, বায়েজিদ, ষোলশহর দুনম্বর গেট, চকবাজার, পাঁচলাইশ, ডিসি রোড, খাজা রোড, চান্দগাঁও, মোহরা, বাকলিয়া, চাক্তাই, রাজাখালি, দেওয়ানবাজার, অক্সিজেন, হামজারবাগ, মুরাদপুর, আতুরার ডিপো ও রউফাবাদ। তিন দিনের প্রবল বর্ষণ ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা জাহাজে পণ্য খালাস হচ্ছে না। শুক্রবার থেকে একটি লাইটারেজ জাহাজও বহির্নোঙরে অবস্থান করা মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস করেনি। একই অবস্থা বিরাজ করেছে কর্ণফুলীর ১৬টি ঘাটে এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে। পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় কাস্টমসে শুল্কায়ন ও অন্যান্য কার্যক্রমও তেমন ছিল না। ফলে বন্দর-কাস্টমসে কার্যত অচলাবস্থা চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বহির্নোঙরে গতকাল পর্যন্ত খোলা ও বস্তাবন্দী পণ্যবাহী ২২টি জাহাজ অবস্থান করেছে। বহির্নোঙরে এসব বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতে দুই দিনে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দিলেও একটিও পণ্য খালাস করতে পারেনি। নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং খাল ভরাটের ফলে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হালকা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় নগরীতে। তার দাবি, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়াও জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ। আবহাওয়া অধিদফতরের এক সতর্কবাণীতে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমি লঘুচাপের প্রভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এতে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।বাজেটে বরাদ্দ নেই : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের জন্য প্রায় ১২শ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। কিন্তু চসিকের গতকাল ঘোষিত বাজেটেও জলাবদ্ধতা নিরসনে পৃথক কোনো বরাদ্দ কিংবা কোনো পরিকল্পনার কথা উল্লেখ নেই। জলাবদ্ধতা ইস্যু চট্টগ্রাম নগরের ‘টক অব দ্য টাউন’ হলেও সিটি করপোরেশনের এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুধীজনরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন