রবিবার, ২২ জুন, ২০১৪


‘হাসিনা কেন বোরকা পরে সীমান্তে গিয়েছিলেন?’ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার ব্যাপারে শেখ হাসিনা জানতেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বলেছেন, আপনি দেশে আসার ১৩দিন পর জিয়াউর রহমান মারা গেলেন কেন? তাহলে নিশ্চয় একটি কারণ আছে। জিয়াউর রহমানকে মানুষ এতো ভালোবাসতেন যে, তার জানাজা হয়েছিল অনেক বড়। সেদিন মানুষ যখন তার জানাজা পড়তে ঢাকায় জড়ো হয়েছিল তখন আপনি কেন বোরকা পরে বর্ডার দিয়ে পালাতে চেয়েছিলেন? আজ বিকাল চারটায় জয়পুরহাটের রামদেও বাজিলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, জিয়াউর রহমানই তাকে (শেখ হাসিনা) লোক পাঠিয়ে বিদেশ থেকে এনেছিলেন, তাকে বাড়িঘর সব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানই আওয়ামীলীগের পুনর্জন্ম দিয়েছেন। ‘ঈদের পর সব ধরনের কর্মসূচি আসবে’ খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আন্দোলনে নামব। কিন্তু যখন আন্দোলনে নামতে চাই, তখন ভয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। এবার কি ঘরে আটকে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, আন্দোলন কর্মসুচি দেব ঈদের পর। কর্মসূচি দিলে কি আপনারা রাস্তায় নামবেন? আমিও আপনাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকব। আমরা কর্মসুচিতে যদি বাধা দেয়া হয় তখন হরতাল অবরোধ সব ধরনের কর্মসুচি দেয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৯দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সকল দলকে আহ্বান জানাই। বাম-ডান, বড়-ছোট সবাই বলছি। আসুন আমরা দেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই। দেশ রক্ষার জন্য কাজ করি। তিনি বলেন, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে হবে। তাতে দেশের উন্নতি হবে। তখন দেশে বিদেশী বিনিয়োগ হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সে জন্যই আমরা বলেছিলাম, দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান। দেশের সব মানুষ বর্তমান অবৈধ সরকারের হাত থেকে বাঁচতে চায়। নিজেদের জীবন রক্ষা করতে চায়। আপনারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন। ‘বিরোধী দলের নই, আমি জনগনের প্রতিনিধি’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলে, আমি সরকারি দলের কিংবা বিরোধী দলের প্রতিনিধি নই। আমি জনগনের প্রতিনিধি। আর সেই জন্য ৯৫ ভাগ জনগন আমার সঙ্গে আছে। আবারও নিরপেক্ষ সরকারের কথা উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ দল। আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোন নির্বাচন হতে পারেনা। আলোচনা আমাদের সঙ্গেই করতে হবে। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, হয়নি। উপজেলায় আমরা এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে তারা এমন দুর্নীতি করেছে যে আর সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এ আওয়ামী লীগ একটা দুর্নীতিবাজ সরকার। নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জানে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিলে তাদের কি পরিনতি হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। এমনকি পাশের দেশের নির্বাচনেও সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের মাথা ঠিক নেই। তারা আবোল-তাবোল কথা বলছে। আওয়ামী লীগের পাশে জনগন নেই তাই তারা দিশেহারা। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণতো আপনাদের ভোট দেয়নি। তাই আপনারা জনপ্রতিনিধি নন। এ নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। তাই এটা কোন নির্বাচন হয়নি। ৫ই জানুয়ারীর ভোটে দেশের জনগন অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যাতে ভোট দিতে পারে। আমরা সেই ভোট চাই। তারা তা দিতে পারেনি বলে সরকার অবৈধ। বিদেশীরা বলে দশম জাতীয় নির্বাচনে কোন নির্বাচন হয়নি। সে জন্যই এই সরকারকে কেউ সমর্থন দেয়নি। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। সে পরিবর্তন হতে পারে একমাত্র ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি, দেরি না করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে মানুষের সে দাবি পুরণ করুন। ‘হাসিনা গডফাদারের মা’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গডফাদারের মা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, গডফাদারের মা ক্ষমতায় থাকলে দেশের কোন মঙ্গল হবে না। আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত। এরা খুনি। যাদের হাতে মানুষের রক্ত, তাদের হাতে দেশের মানুষে ভালো থাকতে পারে না। তাই আওয়ামী লীগের আমলে কোন ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়। তারা নিরিহ-নিরস্ত্র আলেমদের ওপর মধ্যরাতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। হিন্দুদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বলে, যাই করি না কেন- তারা আওয়ামী লীগের বাইরে যাবে না। তাই আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দুদের মেয়েরা ধর্ষিত হয়, তাদের বাড়িঘর দখল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট হয়। হিন্দুদের মন্দির ভাংচুর ও লুট হয়। এমনকি বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরাও এ সরকারের আমলে নিরাপদ নয়। কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের উপর হামলা, বাড়িঘর লুট ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। তাই সবাইকে বলবো, আপনারা বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন। শান্তিতে থাকবেন। কারণ আমরা সংখ্যাগুরু, সংখ্য লঘুতে বিশ্বাস করি না। আমরা সবার প্রতি সমান আচরণ করি। আমরা সবাইকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই দেখি। ‘মানুষ খুনের জন্য হাসিনাকে জবাবদিহি করতে হবে’ জয়পুরহাটের সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ খুনের জন্য শেখ হাসিনাকে জবাবদিহি করতে হবে। দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিনত হয়েছে। আমাদের দলের (বিএনপি) ৩১০ জনকে হত্যা করেছে, ৫৬ জনকে গুম করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত সরকার এবং সরকারের বাহিনী। এই র‌্যাবকে আমরা গড়েছিলাম জঙ্গি দমনে। আমাদের আমলে র‌্যাবে ভাল ভাল অফিসার নিয়োগ দিয়েছি। কোন রাজনৈতিক বিবেচনা করিনি। সে সময় র‌্যাব বড় বড় জঙ্গি ধরেছে। অথচ এই সরকার জঙ্গি ধরতে পারেনি। বরং সরকারদলীয় লোকরা জঙ্গি ছিনিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেনÑ কিভাবে নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাটে গুম-খুন করা হচ্ছে। জনগনকে মারার জন্য র‌্যাবকে গঠন করা হয়নি। এসব ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের তারেক, জিয়াসহ আরও অনেকে জড়িত। তারা এখন ঘাপটি মেরে আছে। খালেদা জিয়ার তার বক্তব্যে ব্যাবের সমালোচনা করে এর বিলুপ্তি দাবি করেন। ‘জনগনের তত্ত্বাবধায়কের দাবি কেন তবে বৈধ নয়’ আদালতের প্রতি প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত ১৫৪জন নাকি বৈধ। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, মানুষের আন্দোলনের প্রতিষ্ঠিত এবং মানুষের আন্দোলনে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সেটা কেন আদালতের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না। এখন সরকারই তো বিএনপির কাছে বৈধতা চায়। তিনি বলেন, বিচারকরা নিজেদের মতো রায় দিতে পারছেন না, আওয়ামী লীগ তাদের ইচ্ছেমতো রায় দিতে বাধ্য করছে। এখন দেশে দুই রকমের বিচার। বিরোধী দল হলে এক রকমের, আওয়ামী লীগের হলে অন্যরকম। এক দেশে দুই রকমের বিচার চলতে পারে না। বিদেশিরাও বিচার ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন, জনগণ আপনাদের সঙ্গে আছে। ‘আওয়ামী লীগ সুইস ব্যাংকে টাকা জমিয়েছে’ সরকারের দূর্নীতির কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, এ আওয়ামী লীগ একটা দুর্নীতিবাজ সরকার। আওয়ামী লীগ জনগণের টাকা চুরি করে আত্মসাৎ করেছে। তারা পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চুরি করেছে। কাগজে বের হয়েছে সুইচ ব্যাংকে এ বছর রেকর্ড পরিমান অর্থ বাংলাদেশ থেকে রাখা হয়েছে। দুদক সাহেবকে বলছি? আমনারা কি এক চোখা, আপনারা এখন দেখছেন না কেন? এই টাকা কাদের, কারা এত টাকা রেখেছেন। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা জানতে চাইÑ দুদক কেন শুধু বিএনপিকে দেখে তারা আওয়ামী লীগকে কেন দেখে না। তারা কি চোখ বন্ধ করে আছে? তিনি বলেন, ফরমালিনের নামে কৃষকের ফল ধ্বংস করা হচ্ছে। অথচ দেশে ফরমালিন আমদানী করছে শেখ হাসিনা। তাকে ফরমালিন আমদানীর জন্য ধরা উচিত। ‘বিদেশী বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ করব’ ১৯দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য ও লুটপাটের কারণে কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী এদেশে আসে না। দেশের এখন বিদেশী বিনিয়োগ নেই। এদেশের যারা বিনিয়োগকারী তারাও ভয়ে এদেশে বিনিয়োগ করে না। আমি বিদেশীদের বলবÑ বিএনপির নেতৃত্বে দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে আমরা বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করব। আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তা কিছুই দিতে পারে না। আমরা সেগুলোর নিশ্চিত করব। আমরা বিদেশীদের নিশ্চয়তা দেব। তিনি বলেন, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। প্রতিটি জায়গায় শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা করব। দেশকে মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত করব। জয়পুরহাটবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ভারিবৃষ্টি উপেক্ষা করে আপনার এখানে এসেছেন। আপনাদের দেখে আমি সাহস পাচ্ছি। এই জয়পুরহাটে সরকার পতন আন্দোলনে ১২ জন শহীদ হয়েছেন, অসংখ্য লোক আহত হয়েছেন। তাদের অনেককে আমরা আর্থিক সহযোগীতা করেছি। আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সাহসি ভূমিকা রাখার জন্য জয়পুরহাটবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি Related আপডেট হয়েছে বাংলাদেশ সময়: জুন ২২, ২০১৪ at ৭:০৯ অপরাহ্ণ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন