শীতলক্ষ্যায় প্যানেল মেয়র নজরুল সহ ৬ লাশ উদ্ধার
Shitolokkhaব্রেকিংনিউজবিডি: নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে অর্ধগলিত ৬টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের চার সহযোগীসহ ৭জন অপহৃত হওয়ার ৪ দিনের মাথায় এই এই ৬টি লাশ উদ্ধার করা হলো। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে হাত-পা বাধা আরো একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।তবে ভাসমান এই লাশের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি।
বুধবার বিকেলে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল এর ভাই আব্দুস সালাম ও স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি নজরুলের লাশ শনাক্ত করেন। এছাড়া নজরুলের সঙ্গেই অপহৃত মনিরুজ্জামান স্বপনের লাশ তার ছোট ভাই রিপন এবং তাজুল ইসলামের লাশ তার বোন শিরীন আক্তার শনাক্ত করেন। অপহৃত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের লাশ শনাক্ত করেন তার ভাগ্নে। বাকি দুইটি লাশ এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া লাশের পড়নে ছিলো সেন্ডেল গেঞ্জি ও প্যান্ট। ডান হাতের ৩নং আঙ্গুলে একটি আংটি ও বাম হাতে একটি ব্রেসলেট অথবা ঘড়ি। প্রত্যেকটি লাশের হাত পা বাধা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি লাশের পায়ে ২৪টি করে ইট বাঁধা। সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে নদীতে ডোবানো ছিল। পা ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা। হাতও পেছনে দড়ি দিয়ে বাঁধা। একটি পলিথিন দিয়ে মুখমণ্ডল বেঁধে ক্ষান্ত হয়নি তারা, দুটি পলিথিন দিয়ে গলার কাছে শক্ত করে বাঁধা। এতসব করেও নিশ্চিত না হতে পেরে পেট ফুলে যাতে লাশ ভেসে না ওঠে, সেই আশঙ্কায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেট সোজাসুজি ফেঁড়ে ফেলে।
Shitolokkha 2বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকতার মোর্শেদ জানান,এলাকাবাসীর খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করছি। প্রতিটি লাশই ইট দিয়ে বাঁধা ছিলো। যেনো লাশ ভেসে উঠতে না পারে তারজন্যই দুর্বৃত্তরা এটি করে থাকতে পারে। চেহারা বোঝা যাচ্ছেনা, এসিড দিয়ে চেহারা ঝলসে দেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিহিত লাশটি প্রথমে শান্তিনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। আর এটিই প্যানেল মেয়র নজরুলের বলে শনাক্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুপুরের পর থেকে লাশগুলো ভেসে উঠতে শুরু করে। প্রতিটি লাশের হাত-পা বাঁধা ছিল। মুখ পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিলো। কোনো সংঘবদ্ধ চক্রই এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
উল্ল্যেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের(নাসিক) সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য নজরুলের সঙ্গে অপহৃত হয়েছিলেন- তার প্রাইভেটকারের চালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহসভাপতি তাজুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগকর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও তার গাড়ির ড্রাইভার।
জানা যায়, ওইদিন দুপুর আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলার হাজিরা শেষে সাদা রঙের এক্স করোলা(ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৯১৩৬) দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ফিরে যাওয়ার পথে শিবুমার্কেট এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাতে নজরুলের গাড়িটি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে শালবনের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে তাদের কোনো সন্ধান মিলছিল না।
একইদিন আদালত পাড়া থেকে আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ২জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। চন্দন সরকারেরও গাড়ি পরে ঢাকার নিকেতন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাদেরও হদিস বুধবার পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। আর এ দুটি অপহরণের ঘটনায় ফুঁসে ওঠে নারায়ণগঞ্জ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন