আওয়ামী লীগ মনে করেন, ৭ খুনে বহুমুখী ষড়যন্ত্র
09 May, 2014
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে প্রশ্নের মুখোমুখি ও দলের রাজনীতিকে দুর্বল করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে দলের নেতারা মনে করছেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পরিবারের সদস্যদের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে বিএনপি-জামায়াতের হাত রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। একইভাবে বিএনপি-জামায়াত নারায়ণগঞ্জ তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগকে বিভক্তির মাধ্যমে দুর্বল করতে এ ঘটনা নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জে বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত জোট কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। এখন অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা কেন্দ্র করে তারা সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টার পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার তত্পরতায় লিপ্ত রয়েছে।
এদিকে এই খুনের পিছনে অর্থ লেনদেনের যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তার কোনো সত্যতা এখনও খুঁজে পায়নি সংশ্লিষ্টরা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এরকম কোনো লেনদেনের হদিস পায়নি।
অপহূত ও হত্যকাণ্ডের শিকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন ছয় কোটি টাকা নিয়ে র্যাবের তিন কর্মকর্তা সাত খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই তিন কর্মকর্তার একজন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, যিনি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা। এই টাকা লেনদেনের সঙ্গে মায়ার ছেলে দিপু চৌধুরীর জড়িত থাকারও অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে মায়ার ছেলের জড়িত থাকার অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় বিষয়টি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আর জামাতার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। নজরুলের শ্বশুরের অভিযোগ অনুযায়ী ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শিমরাইল শাখা এবং যমুনা ব্যাংকের রায়েরবাগ শাখাসহ কোনো ব্যাংকে এই অর্থ লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে কোনো তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। সূত্রমতে, মন্ত্রীর জামাতা লে. কর্নেল তারেক সাঈদের অ্যাকাউন্টে সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের বা অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, জামাতা ও ছেলের নামে অভিযোগ দিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে জড়ানোর পিছনে বিএনপি-জামায়াতের হাত রয়েছে। ঢাকা মহানগরে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে মায়াকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং সফলভাবে মহানগরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার সাংগঠনিক দক্ষতায় রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নানামুখী কর্মসূচিতে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত ঢাকায় কোনো কর্মসূচি সফল করতে পারেনি। পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও মায়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের কারণে ঢাকায় আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত ব্যর্থ হয়েছে। মায়াকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে জামায়াত প্রচুর টাকা ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যাওয়ার জন্য দলের অভ্যন্তরেও কেউ কেউ তত্পর রয়েছে। যারা নেতৃত্ব পেতে চায় তারা এই ঘটনার সঙ্গে মায়াকে জড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। মায়াকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে, তাকে সরে যেতে বলা হয়েছে— এ ধরনের নানা গুজবও কৌশলে রটানো হচ্ছে।
সেভেন মার্ডারের মূল কারণকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আড়াল করারও একটি প্রচেষ্টা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া উদ্দেশ্যমূলক কাউকে জড়ানোর চেষ্টা চলতে থাকলে প্রকৃত খুনিরা আড়ালেই থেকে যাবে এবং তারা পার পেয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরই নয়, আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি নারায়ণগঞ্জেও দলের রাজনীতি দুর্বল করতে বিএনপি-জামায়াতের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের একটি মহল সম্পৃক্ত আছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের মধ্যে শুরু হয়েছে বাগ্যুদ্ধ ও কাদা ছোড়াছুড়ি। আইভী এ ঘটনার পরই অভিযোগের তীর ছুড়েছেন শামীম ওসমানের দিকে। তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ একটি পরিবারের কাছে জিম্মি। অপর দিকে শামীম ওসমান অভিযোগ করেছেন, মেয়র আইভীর লোক সুফিয়ান নূর হোসেনকে প্ররোচিত করেছে নজরুলকে হত্যা করার জন্য। এভাবে কাদা ছোড়াছুড়ির ভিতর দিয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত নূর হোসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশ নূর হোসেনের সহযোগিতায় রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। এই নূর হোসেন একসময় বিএনপির নেতা ছিল। নজরুল অপহরণের পরদিন নারায়ণগঞ্জের বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নজরুলের মার্কেট দখল করে নিয়েছেন। এর আগে নজরুলের এই মার্কেট দখলের জন্য গিয়াসউদ্দিন সন্ত্রাসীদের দুই কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন বলে নজরুলের শ্বশুর অভিযোগ করেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, স্থানীয় পরস্পর স্বার্থে নূর হোসেন ও গিয়াস উদ্দিন একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
রাজধানীর অত্যন্ত নিকটে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পশহর নারায়ণগঞ্জে প্রভাব বিস্তার ও নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ দিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি জামায়াত। আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য তারা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল চালিয়ে আসছে। এ জন্য এ দুই দল থেকে অর্থ ছাড়া হচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াত নারায়ণগঞ্জের দখল নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ জন্য জামায়াত থেকে প্রচুর টাকা ছাড়া হচ্ছে বলেও গোয়েন্দা সূত্র ইতিমধ্যে সরকারের শীর্ষ মহলে অবহিত করেছে। প্রশাসনের ভিতরের কিছু লোককে জামায়াত টাকা দিয়ে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করতে বিএনপি-জামায়াত পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উৎসঃ বর্তমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন