মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০১৪


এপারের ভোট ওপারের দুশ্চিন্তা
06 May, 2014 'আচ্ছা ভাইয়া, মন্দিরডা কি না হইলে আপনাগো খুব অসুবিধা হবে কু? আহা। কত পুরনো মসজিদ আছিল।' রং চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে একটু বিষম খেলাম আর কি! প্রশ্নকর্তা তপন চক্রবর্তী ঢাকা থেকে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে কেরানীগঞ্জে এক চিলতে চায়ের দোকান চালান। দোকানে আমার কলকাত্তাইয়া পরিচয় পাওয়ার পর (পড়ুন ইন্ডিয়ান) একটু পজ নিয়ে প্রথম প্রশ্ন। বাউন্সাল সামলে উত্তর দিতে না-দিতেই পরের প্রশ্ন- 'আচ্ছা, সত্যি কি আপনাগো দ্যাশে গুজরাটে অনেক উন্নতি হইসে?' বাংলাদেশে তথ্যচিত্র করতে এসে এই প্রশ্নের উত্তরে কী বলব, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাংলাদেশের জনৈক চক্রবর্তী বামুন মসজিদ ভাঙা নিয়ে শোকপ্রকাশ করছেন! একি সেই চেনা, 'মিলে সুর মেরা তুমহারা' গোছের মিষ্টি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গপ্পো না কি অন্য কিছু। উত্তরটা পাশের চেয়ারে বসা আমার বন্ধু মিথুন দিয়ে দিল, 'আসলে পেঁয়াজের দরের মতোই এ দেশের সামাজিক পরিস্থিতিও অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভর করে।' এটা নেহাতই কোনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গপ্পো নয়। বরং, একেবারেই নিজের ভিটে, মাটি, দরজা, জানালা, ভাত, মাছ, ইস্কুল আগলানোর গপ্পো। প্রায় দশ বছর আগে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ঘোষণা করে বোমা হামলা, লেখক, বুদ্ধীজীবী হত্যার চেষ্টা যার মধ্যে আছেন শামসুর রহমান, কবি হুমায়ুন আহমেদ। প্রসঙ্গত এই চেষ্টাগুলি 'প্রকাশ্য রাস্তা' ঘটেছিল। এতো পুরনো কাসুন্দি না-ঘেঁটে সাম্প্রতিক কালেও 'চাপাতি দৌড়' খেয়েছেন অনেক সাধারণ মানুষই। কয়েকটি শব্দ, না, বরং শব্দ না-বলে 'ভয়ঙ্কর শব্দ' বলা যেতে পারে। যেগুলি শুনলে মানুষ এখনও আঁতকে ওঠে। পাল্টে যায় চোখ-মুখের ভাষা। জামাত ও ইসলামি ছাত্র শিবির। এই শব্দ দু'টি বাংলাদেশের মানুষের জীবনে যে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে, তা ভোলার নয়। যাদের ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা পাননি কেউই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার হুসেন অর্থমন্ত্রী শামস এ এম এস কিবরিয়া, এরা কেউই নিরাপদ ছিলেন না নিজের বাড়িতেও। আর বাংলাদেশের মানুষ জানে জামাত লুকিয়ে কিছু করে না। প্রতিটি সন্ত্রাস প্রকাশ্য রাস্তায় তারা সংগঠিত করেছে। তার পর বুক চিতিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে রাস্তায়। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর ওপর ১৯ বার গ্রেনেড হামলা সত্যিই এ উপমহাদেশে বিরল। ও না! বোধ হয় বিরল নয়। আফগানিস্তানে তালিবানিরাও একই ভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে দীর্ঘ দিন। ফলত এটাই আফগানিস্তানের স্যাম কাকা অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু পোড়া বাংলাদেশে কেউই অবতীর্ণ হননি সেই একাত্তরের পর। ভারত তার নীতিতে অনড় থেকেছে। এদিকে জামাত দাপিয়ে বেড়িয়েছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাসের ঘটনার লিস্ট দিতে গেলে সংবাদপত্র উপচে পড়বে। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামি লিগের আশ্বাসে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর স্বপ্ন দেখতে শিখছে বাংলাদেশবাসী। যে দেশে ২০০১ থেকে তথ্য পাচারের আশঙ্কায় তত্কালীন সরকার দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, সেই দেশ আস্তে আস্তে মুখ তুলে তাকাতে শিখছে। প্রাণ খুলে গান গাইতে পারছে। আগে গান গাইলেও জামাতের শাসানি আসত। ঢাকায় একদা প্রকাশ্য স্লোগান উঠেছিল-- 'আমরা সবাই তালেবান/ বাংলা হবে আফগান।' কিন্তু এ সবের সঙ্গে ভারতীয় নির্বাচনের কি যোগসূত্র? যোগসূত্রটা খুব সোজা। ভারতের নির্বাচনে মোদী যে ভাবে গণমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন এবং দেশের মিডিয়া জুড়ে প্রায় জিতেই গেছেন ভাব দেখাচ্ছেন, তাতে হাত গুটিয়ে বসে নেই জামাতিরাও। তারাও তলে তলে ঘুঁটি সাজাচ্ছে এ দেশে। ভারতে রাম মন্দির হলেই, ইসলামি ঝান্ডা নিয়ে তারাও নেমে পড়বে বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশের হিন্দুরাই শুধু নন, আক্রান্ত হবেন ধর্ম নির্বিশেষে প্রগতিশীল সমস্ত মানুষ। জামাত এই সুযোগই খুঁজছে বাংলাদেশে। আবার বাংলাদেশে নেমে আসবে অন্ধকার যুগ। এমনটাই আশঙ্কা সবার। যে দল ক্রিকেট খেলার গান-- চার ছক্কা হই হই গান শুনলে 'চাপাতি' নিয়ে হাজার হাজার মানুষকে তাড়া করে এই সাম্প্রতিক টি টোয়েন্টির সময়েও, তারা যে বিশাল ক্ষমতার অধিকারী, তা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। জনসাধারণ থেকে শুরু করে আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিল্পী, নামী লেখক গোষ্ঠী সবার মধ্যে এমন ভাবে আত্মগোপন করে আছে জামাত যে বোঝার উপায় নেই, কে জামাত আর কে জামাত নন। ধর্মের জিগির এখানে আসলে রাষ্ট্র দখলের খেলা। আমার বন্ধুর মা, ষাটোর্ধ্ব হিমিকা বেগম তার ছেলের কলকাতা থেকে আগত হিন্দু বন্ধুকে ভাত দিতে দিতে বলছিলেন বাবরি মসজিদ ও সাম্প্রতিক গুজরাট দাঙ্গার পরে জামাতের কার্যকলাপ। প্রতি বাড়ি থেকে জোর করে টাকা তোলা হয়েছিল সে সময়ে ইসলামকে রক্ষা করার নামে। যারা হিন্দুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা অনেকেই মৃত। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ। আসলে ধর্মকে সামনে রেখে ক্ষমতা দখলের খেলাই বার বার চালিয়ে এসেছে 'জামাতি'। এবার তারা বদ্ধপরিকর। অনেক ঝামেলা করেও যখন শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বের এগিয়ে চলা প্রগতিশীল বাংলাদেশকে তারা তালিবান রাজ্য বানাতে ব্যর্থ হয়েছে বার বার, তখন ভারতীয় সমাজে মোদী ও তার হিন্দুত্ববাদী দলের জয় জামাতের তরোয়ালে যে পরোক্ষ শান দিয়ে দেবে, তা বলাই বাহুল্য। আর সেই তরোয়ালে শুধু হিন্দুরাই নন, গলা কাটবে 'ডিজিট্যাল বাংলাদেশের', হার মানবে প্রগতিশীল নব বাংলাদেশ। আবার নেমে আসবে তালিবানি অন্ধকার। এটাই আশঙ্কা। উৎসঃ নতুন বার্তা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন