সোমবার, ১২ মে, ২০১৪


এলজিইডির ভুলে ২০ কোটি টাকা গচ্চার আশঙ্কা খিলগাঁও ফ্লাইওভারে নতুন লুপ অমিতোষ পাল | প্রকাশ : ১২ মে, ২০১৪ ১১:১৯:৪৮]
নতুন লুপের কাজ অর্ধেক এগিয়ে নেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, এটা সম্ভব নয়। অমিতোষ পাল সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই না করেই খিলগাঁও ফ্লাইওভারে অতিরিক্ত লুপ সংযোজন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। নতুন লুপের কাজ অর্ধেক এগিয়ে নেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, এটা সম্ভব নয়।এলজিইডির ভুলে ২০ কোটি টাকা গচ্চার আশঙ্কা এমন বাস্তবতায় এ পর্যন্ত ব্যয় করা অর্থের পুরোটাই পানিতে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত লুপের বেশ কয়েকটি র‌্যাম যেখানে বসবে, সেখানে রয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিশাল মার্কেট। সিটি করপোরেশন সেই মার্কেট ভাঙতে নারাজ। যে কারণে অন্য অংশের কাজ শেষ হলেও ওই অংশে কাজ করতে পারছে না এলজিইডি। চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে অতিরিক্ত লুপ তৈরির কাজ। জানা গেছে, মালিবাগ থেকে সায়েদাবাদ যেতে খিলগাঁও ফ্লাইওভার ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও মালিবাগ থেকে রাজারবাগ হয়ে মতিঝিল এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ফ্লাইওভার ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া বাসাবো এলাকার বাসিন্দারাও এ পর্যন্ত ফ্লাইওভারের কোনো সুফল পাননি। সে জন্য বাসাবো পয়েন্টে একটি অতিরিক্ত লুপ সায়েদাবাদ অভিমুখ দিয়ে ঘুরিয়ে রাজারবাগ পয়েন্টে সংযোজনের পরিকল্পনা করে এলজিইডি। সে অনুযায়ী ৮০ কোটি টাকা বাজেট করে কাজও শুরু হয়। কয়েকটি র‌্যামও স্থাপিত হয় বাসাবো পয়েন্টে। পরে শাহজাহানপুর এলাকায় গিয়ে বাধে বিপত্তি। যেখানে র‌্যাম বসিয়ে রাজারবাগ অভিমুখের মূল ফ্লাইওভারের সঙ্গে লুপটি সংযোজন করতে হবে, ওই স্থানে রয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি বিশাল মার্কেট। র‌্যাম বসাতে হলে পুরো মার্কেটই ভেঙে ফেলতে হবে। ওই মার্কেটের জায়গা সিটি করপোরেশনের। মার্কেটের দোকান মালিকদের প্রতিবাদের মুখে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এলজিইডির এক প্রকৌশলী সমকালকে বলেন, এ ধরনের একটি লুপ সংযোজন করার আগে প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। তিনি জানান, এরই মধ্যে চার-পাঁচটি র‌্যাম তৈরিও হয়ে গেছে। ব্যয়ের পরিমাণও অন্তত ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মার্কেটটি না ভাঙলে পুরো কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। আবার সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বিরোধিতাও করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলী বলেন, শাহজাহানপুরে যে পয়েন্ট দিয়ে নতুন লুপটি বাঁক নিয়েছে, সেখান দিয়ে ৬০ ফুট প্রশস্ত একটি রাস্তা আছে। রাস্তাটি সোজা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের কাছে গিয়ে মিশেছে। এ রাস্তা চলাচলের উপযোগী করলে নতুন লুপটি তৈরির প্রয়োজন পড়ে না। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের রাজারবাগ পয়েন্টের আউটলেটে এমনিতেই গাড়িগুলো জ্যামে আটকে থাকে। এখন নতুন লুপ চালু হলে বাসাবো থেকেই ফ্লাইওভারের ওপরে জ্যাম শুরু হবে। অন্যদিকে মগবাজার ফ্লাইওভারের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন প্রকৌশলী সমকালকে বলেন, মগবাজার ফ্লাইওভারেরও একটি আউটলেট রয়েছে রাজারবাগ পয়েন্টে। কাজেই এ ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলে রাজারবাগ পয়েন্টের যানজট অসহনীয় হয়ে উঠবে। নতুন লুপ তৈরির সময় এ বিষয়টি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করেনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের (টিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশিকুর রহমান সমকালকে বলেন, একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন লুপটি তৈরি হচ্ছে। এটির প্রয়োজনীয়তা অবহিত করেছি কর্তৃপক্ষকে। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, শাহজাহানপুর পয়েন্টে ফ্লাইওভারের কাজ বন্ধ থাকলেও বাসাবো এলাকায় চলছে। সিটি করপোরেশনের ওই মার্কেট স্থানান্তর করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিটি করপোরেশনও রাজি হয়েছে। নতুন লুপের ফলে রাজারবাগ পয়েন্টে যানজট বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও রামপুরা-মালিবাগ বা প্রগতি সরণির গাড়িগুলো ফ্লাইওভার ব্যবহার করে। সেগুলো সায়েদাবাদ পয়েন্ট হয়ে ঘুরেই রাজারবাগ গিয়ে নামে। এ কারণে অতিরিক্ত যানজট হবে না। মগবাজার ফ্লাইওভারের আউটলেট রাজারবাগ পয়েন্টে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে তো সমস্যা অনেক। একটির সমাধান হতে না হতেই আরেকটি যোগ হয়ে যায়।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন