‘বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা যেন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না’
07 May, 2014
আমি জানি না আপনার হাতে আজকের সংবাদপত্র পৌঁছেছে কি-না। বাংলাদেশে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর একটি অংশকে আদেশ দিয়েছেন তাদের দখল করা কিংবদন্তিতূল্য বাঙালি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের পূর্বপুরুষের বাড়ি খালি করে দেয়ার জন্য। শেখ হাসিনার সরকার চায় দেশটির পাবনা জেলায় সুচিত্রা সেনের পূর্বপুরুষের ওই বাড়িটিতে জাদুঘর স্থাপন করতে। অবশ্য এই পুরো বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট জামায়াত নেতাদের ভালোই সমস্যা রয়েছে। কারণ একজন ফিল্ম স্টারের প্রতি কোনো স্মরণিকা উৎসর্গ করা হলে স্বাভাবিকভাবেই গোঁড়া মুসলমানদের কাছে একে ‘ব্লাসফেমি’ অর্থাৎ ধর্মনাশ বলেই মনে হবে। তবে এক্ষেত্রে এর থেকেও বড় ইস্যু হলো সুচিত্রা সেনের ধর্ম এবং জাতীয়তা। জামায়াতের বিশ্বাস- বাংলাদেশের ওই অঞ্চলে সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করলেও কিংবা তিনি বাংলাভাষী হলেও বর্তমান বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমি পাওয়ার অধিকারও তার নেই।
যখন আমি সংবাদটি পড়লাম, আমার মনে পড়ল আসানসোলে নির্বাচনী জনসভায় দেয়া আপনার বক্তব্যের কথা। আসানসোল আমার জন্মস্থান ধানবাদ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের আপনি একটি নতুন সংজ্ঞায় সঙ্গায়িত করেছেন- বাংলাভাষী ভারতীয়। আপনি বলেছেন, “যারা দুর্গাষ্টমী পালন করেন এবং বাংলায় কথা বলেন, তাদের প্রত্যেকেই আমাদের ভারতমাতার সন্তান। যেকোনো সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের মতোই তারাও একই ধরনের সম্মান পাবেন।”
যদি আমি আপনার দেয়া ভাষণটি সামগ্রিক দিক থেকে না পড়তাম তাহলে অবশ্যই আপনি আমাকে ‘খবরের ব্যবসায়ী’ হিসেবে অভিযুক্ত করতে পারতেন। আপনি বলছিলেন বাংলাদেশে বসবাসরত সেসব হিন্দু জনগোষ্ঠীর কথা যারা বাংলাদেশে অস্তিত্বের সমস্যায় রয়েছেন, বিশেষত জামায়াতে ইসলামী এবং এর শাখা সংগঠনগুলোর কারণে। তাদের সবাইকে ভারতে চলে আসার ব্যাপারে যে অনুমতি দেয়া উচিত এই বিষয়ে আমিও আপনার সঙ্গে পুরোপুরি একমত। ঐতিহাসিকভাবেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হওয়া দেশ ও বাড়িঘর হারানো শরণার্থীদের অনেকবারই আশ্রয় দিয়েছে ভারত, তা সে ইরানের পার্সি কিংবা তিব্বতী কিংবা সর্বশেষ ঘটনায় মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী- যে বা যারাই হোন না কেন।
কিন্তু আপনার এই উদার আমন্ত্রণের বিষয়টি আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার নয়। আমার মনে হয় আপনি কখনো বাংলাদেশে যাননি কিংবা দেশটি নিয়ে, বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অঞ্চলটি নিয়ে খুব একটা কিছু জানেন না। আপনার দেশের বাড়ি গুজরাট কিংবা ছয় কোটি গুজরাটি জনগণের মতোই বাংলা এবং বাঙালিদেরও (পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে ২৫ কোটিরও বেশি বাঙালি মানুষ বাস করেন। এর মধ্যে আসাম, ত্রিপুরা এবং ভারতের আরো শতাধিক অঞ্চলসহ সারা বিশ্বে বসবাসরত বাঙালিদের কথা না হয় বাদই রইল।) জটিল ইতিহাস রয়েছে, এবং সম্ভবত তার চাইতেও বেশি রয়েছে তাদের অস্তিত্বরক্ষার রাজনৈতিক জটিলতার ইতিহাস। আমার অস্তিত্বের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতি মিশে রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মতোই ধর্মও অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিদের মধ্যে অন্যতম নাম স্বামী বিবেকানন্দ ও আপনার নাম একই। শৈশবে আমি এমন একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছি যে পরিবারের দেবী কালীর প্রতি রয়েছে অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। আমি এবং আমার ভাই- দুজনেই বেড়ে উঠেছি ‘যত পথ, তত মত’- এই নীতিকে সামনে রেখে। সম্ভবত এই কারণেই প্রথমে একটি ক্যাথলিক স্কুল এবং তারপর একটি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে (সেই বিশ্ববিদ্যালয় যেটিকে কয়েক বছর আগে আপনি ‘জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া’ অর্থাৎ জঙ্গিবাদের জন্মস্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন) পড়াশোনা করতে আমাকে কোনো সমস্যাতেই পড়তে হয়নি।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সুভাষ চন্দ্র বসুসহ অনেক বাঙালি নেতা এবং এমনকি খোদ আপনার দলের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামা প্রসাদও দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে যখন সাম্প্রদায়িক কারণে দেশভাগের ঘটনা ঘটেছিল, তখন দুটি ভাগের একটি অংশে পড়েছিলেন কিছু বাঙালিও যারা চাইতেন একটি পৃথক রাষ্ট্রে শুধু তারা বাঙালিরা মিলে একটি দেশ গড়বেন। যখন শেষ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সীমারেখা টানা হল তখন আরো একটি অংশ অর্থাৎ আজকের আসামও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপে পরে এই প্রক্রিয়াটি থেমে যায়।
১৯৭১ সালে এই উপমহাদেশে আমরা আবারো আন্দোলন-সংগ্রাম দেখলাম। উর্দু এবং পাঞ্জাবিভাষী পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে পথে নামলেন বাঙালিরা। ভাষা নিয়ে সেই লড়াই এতটাই তীব্র ছিল যে একটি আলাদা জাতিরই জন্ম হলো, আজ যাকে আমরা বাংলাদেশ বলি। হিন্দু বাঙালিদের অধিকাংশই ছিলেন বাংলাদেশী অস্তিত্বের ধারক। কিন্তু তখনই আমরা দেখলাম ইসলামী মৌলবাদের পুনরুত্থান। দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে সংশোধনী এনে অন্তর্ভুক্ত করা হলো ধর্মকে।
তখন থেকেই বাংলাদেশীদের দুটো আলাদা ভাগে ভাগ হয়ে ক্রমাগত লড়াই করতে দেখেছি আমরা (‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত হতে চান না তারা)। দুই ভাগের একটি অংশের দাবি হলো দেশটিকে পাকিস্তানের একটি বাংলা অনুলিপিতে পরিণত করা এবং অন্য ভাগের দাবি হলেো ভারতকে অনুসরণ করা। পরে ক্ষমতায় আসলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যিনি বর্তমানেও দেশটির ক্ষমতায় আছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের (ভারতস্বীকৃত) সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন লাখ লাখ তরুণ বাংলাদেশী রাজধানীর ঢাকার রাজপথে নেমে এসেছিলেন, তখন সেখানে আমিও ছিলাম। সেই কঠিন আন্দোলন ছিল রাজনীতি থেকে ধর্মকে সরিয়ে নেয়ার জন্য। বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের বিনাশের চেষ্টায় ব্রত হাসিনা তখন সেই আগের মূল সংবিধানকেই আবারো পুনর্বহাল করেন।
বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানদানের জন্য আমি আপনার কাছে এই চিঠি লিখছি না। বরং অঞ্চলটির পরিস্থিতির তারতম্য সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করাই আমার উদ্দেশ্য। আসামের খবরও আমার কাছে রয়েছে এবং বাংলাদেশ ও আসামের সীমান্ত এলাকাতেও আমি গিয়েছি। সেখানকার হতদরিদ্র অবস্থা দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন দারিদ্র্যের কারণে একজন মানুষের কী অবস্থা হতে পারে।
আমি আপনাকে অনুরোধ করব, যদি আপনার সময় হয় তাহলে আপনি আসামের ধুবরি জেলায় ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর উপকূলবর্তী অঞ্চল ঘুরে দেখে আসবেন। পুরো অঞ্চলটিই দরিদ্র বাঙালি মুসলিম জনগণ অধ্যুষিত। তাদের অধিকাংশকেই বাংলাদেশী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় অথচ বছরের পর বছর ধরে তাদের পূর্বপুরুষ এবং তারা নদীর উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাস করছেন। দেশভাগের আগে এই মানুষগুলোকে কেউ একবার জানায়ওনি।
যখন আপনার সমাবেশে আপনি বলেন যে বাংলাদেশ বসবাসরত হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক কারণে অশান্তিতে আছেন তখন আমি তার যথার্থতা বুঝতে পারি এবং আপনার এই মতকে স্বাগতও জানাই। ভারতে যেমন কিছু হিন্দুত্ববাদী লোক ক্রমাগত খ্রিস্টানদের চার্চে হামলা চালিয়ে ভাংচুরের ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে চালিয়েই যাচ্ছেন, তেমনি বাংলাদেশেও ইসলামপন্থীরা হিন্দুদের মন্দির এবং দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙচুর করেন।
আপনার এক সাক্ষাৎকারে বৈদেশিক নীতি প্রসঙ্গে আপনি বলেছিলেন একটি প্রয়োগমুখী কর্মনীতি প্রণয়নের জন্য ভাবাদর্শের পরিবর্তে পেশাদারিত্বের ওপর নির্ভর করা উচিত। একইভাবে আমিও আপনাকে অনুরোধ জানাব যে বাংলাদেশী অভিবাসী এবং বাংলাদেশ ইস্যুতে আপনিও ওই একই পন্থা অনুসরণ করুন। যেমন আমাদের নিজেদের দেশের ক্ষেত্রে- যেখানে হিন্দু ও মুসলমানদের অধিকারের বিষয়ে আপনার নিজের দলও নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে, সেই একই চোখে যেন বাংলাদেশকেও দেখা হয়। যখন ‘ভারতে হিন্দুদের আমন্ত্রণ জানানো’ কিংবা ‘ভারত থেকে অ-হিন্দুদের ছুঁড়ে ফেলে দেয়া’র মতো বক্তব্য আপনি দেন, তখন বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের মতোই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন আপনি। অবশ্য এমনও হতে পারে যে হয়তো আপনি নির্বাচনী প্রচারণার জন্য শুধুই বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করছেন মাত্র, কিন্তু মূল বিষয় হলো যে এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুরাও মৃত্যুমুখে পতিত হবেন।
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে ব্রক্ষ্মপুত্রের মাধ্যমে অভিবাসী হিসেবে আসামে অনেক মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, কিন্তু একইসঙ্গে এটাও ঠিক যে এই অভিবাসন ১৯৭১ সালের পর থেকে শুরু হয়নি। উপমহাদেশকে বিভক্ত করতে, বিশেষ করে পূর্ববাংলাকে আলাদা করতে টানা সীমারেখাগুলো এতটাই ভাসা ভাসা যে মানুষগুলো আক্ষরিক অর্থেই অবিভক্ত বাড়ি ও পরিবার নিয়ে বাস করেন। দুই বাংলাকে পৃথক করার জন্য কিংবা আসামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করার জন্য গুজরাটের মতো সেখানে কোনো লবণাক্ত জলাভূমি নেই। বাংলাদেশ ও আসামের মাঝখানে রয়েছে একটি বিশাল নদী, যা বছরের পর বছর ধরে শুধু যে দুই দেশকে বিভক্তই করে রেখেছে তাই নয়, এমনকি দুই উপকূলের মানুষের আয় উপার্জনের প্রধান মাধ্যমও এই নদী।
প্রয়োগবাদের নীতির ধারাবাহিকতায় আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে আপনি এবং আরো অনেক হিন্দুবাদী মনে করেন- এখানেও একটি বৃহৎ বাংলাদেশের রূপায়ন করা হচ্ছে, যেমনটা হিন্দুবাদীরা পরিকল্পনা করেছিলেন ‘অখণ্ড ভারত’-এর জর্ন। আপনার নিজের দলের পাঞ্জাব শাখার ওয়েবসাইটটি সম্প্রতি বাংলাদেশী ইসলামপন্থীরা হ্যাক করেছিলেন, যারা ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ একটি বৃহৎ বাংলাদেশের চিন্তা করেন। আপনার দলের সাবেক উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গুয়াহাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের তেলেগু ভদ্রলোকের সঙ্গেও আমি দেখা করেছি। তার কথা শোনার পর এবং আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য জায়গার পরিবর্তিত জনসংখ্যার চিত্রের দিকে তাকানোর পর আমি বিষয়টি বুঝতে পারি। কিন্তু যখন আমি বিজেপি’র বক্তব্য শুনি, ভারতের বর্তমান জনসংখ্যার মধ্যে আমি আরো একটি বিশাল স্ফূরণ দেখতে পাই। একজন বাংলাভাষী মুসলমানকে বাংলাদেশী হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রবণতা বিপজ্জনক। আসামের মতই পশ্চিমবঙ্গেও বিপুলসংখ্যক মুসলমান জনগণ বাস করেন। অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের মতোই তারাও বাড়িতে নিজেদের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের মতো ভারতের বিভিন্ন শহরে কাজের জন্য আসা-যাওয়া করেন। তালিকায় আপনার দৃষ্টিভঙ্গির আরো অনেক অন্ধকার দিক রয়েছে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার কাছে আমার অনুরোধ, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশের প্রতি প্রয়োগমুখী হয়ে একটু দেখুন আপনি। আসন্ন বছরগুলোতে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কের পথে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম হবে বাংলাদেশ। আমাদের ভারতের একদিকে বঙ্গোপসাগর বাদে বাকি তিনটি দিক ঘিরে রয়েছে একটি মুসলমান অধ্যুষিত দেশ- একটি সদ্য জন্মানো, বেকার ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীবহুল দেশ- বাংলাদেশ। দেশটিতে রয়েছে একটি শক্তিশালী, ধর্মীয় গোঁড়ামিপূর্ণ একটি সাম্প্রদায়িক দল যা দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতি- উভয়ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থিত রয়েছে। এই বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেটি বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বাস্তবে অনিবার্যভাবেই ভূমি হারানোর হুমকিতে রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকিও- ভাগ্যিস বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে।
মনমোহন সিংয়ের সরকার অত্যন্ত বুদ্ধির সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করেছে। আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি মনে করি- বাংলাদেশকে সামনে রাখলে ভারতের যেকোনো সরকার দুটো বড় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবে- প্রথমত, অবৈধ অভিবাসীদের স্থানসংকুলান এবং দ্বিতীয়ত, প্রথমে আশ্রয় দেয়ার পরে আবার ইসলামী মৌলবাদীদের নিশ্চিহ্ন করা। এই দুই সমস্যার সমাধানই হলো আমাদের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো মজবুত করা। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে আমরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার পেয়েছি। আর এখন ভারতের উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে উলটো নিজ দেশেই শেখ হাসিনার সরকারের অবস্থান দুর্বল হবে। তাই বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা যেন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেটাই নিশ্চিত করতে হবে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে।
কোনো সন্দেহই নেই যে ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিক দিক থেকে এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সংগঠনটির অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে। কিন্তু এটা একটি ক্ষুদ্র সাফল্য মাত্র। বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের দৌরাত্মের শিকড় অনেক গভীর।
কিন্তু আপনি যদি ঢাকায় যান, বাতাসে আপনি এখনো অস্থিরতার গন্ধ পাবেন। এটি একটি তরুণ দেশ, আমাদের দেশের মতোই। দেশটির তরুণ-তরুণীরা প্রতিদিন বাড়িতে ফেরেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। ঢাকায় আমার সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণের সময় বাংলাদেশী তরুণদের উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষমতা দেখে আমি অবাক হয়েছি। তারা তাদের পরিচয় নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। ভারতে এসে অর্থ উপার্জনের জন্য তারা সীমান্ত অতিক্রম করার মতো হীন কাজ করতে রাজি নয়। তারা নিজেরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেরাই তাদের জনগণের আয়ের ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়।
সম্পর্কে উপমহাদেশের মধ্যে বড় ভাই হিসেবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা তাই ভারতের কর্তব্য, যেন বাংলাদেশ আর্থিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। দেশটিতে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে এমন অনেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেখানে রয়েছে। বাংলাদেশকে নিছকই একটি বাজার কিংবা অবৈধ ও সস্তা শ্রমের উৎস হিসেবে দেখতে না চাইলে এই বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।তাদের জন্য আরেকটি চীন হতে চাই না আমরা। চীনাদের মতোই দেশটির অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদেরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
ভারতের বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান জাঁকজমকপূর্ণ নির্বাচনী বক্তৃতা নয়, বরং এই সমস্যার সমাধানের জন্য আপনার মোদীত্ব জাদুর কিছুটা দরকার, অবশ্যই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।
উৎসঃ নতুন বার্তা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন