বুধবার, ৭ মে, ২০১৪


কখনো হোটেল বা কখনো মেসে নিয়ে ভোগ করতেন মতিনুর, ক্যাম্পাসজুড়ে তোলপাড় 07 May, 2014 ভালো ফলাফলের বিনিময়ে নিজ বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মতিনুর রহমান দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেপরোয়া যৌন জীবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে হল থেকে ওই ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগেও শিক্ষক মতিনুর রহমান মদ খেয়ে গভীররাতে ছাত্রী হলের সামনে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় মাতলামি করেছেন। সে সময়ে মাতাল অবস্থায় হলে ঢোকার চেষ্টা এবং মদের বোতল দিয়ে পুলিশ পিটিয়ে মামলা হলে আলোচনায় আসেন তিনি। বিভাগ ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান ছাত্রজীবনে রাজনীতি না করলেও শিক্ষক সংগঠন ইবি জিয়া পরিষদের সাবেক সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ছিলেন। সম্প্রতি মতিনুর রহমানের বিরুদ্ধে ভালো ফলাফলের বিনিময়ে নিজ বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে বহুদিন ধরে দৈহিক মেলামেশার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষকের লালসার শিকার ছাত্রীর বাড়ি যশোরে। জানা যায়, বিভাগের প্রথমবর্ষে ওই ছাত্রীর জিপিএ ছিল ৩.৪৩। ওই ছাত্রী দেখতে সুন্দরী হওয়ায় শিক্ষক মতিনুর রহমানের নজরে আসেন। এরপর তাকে বশে আনতে ভালো ফলাফলের লোভ দেখান মতিনুর। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক করারও স্বপ্ন দেখান তিনি। এক পর্যায়ে তারা গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কখনো হোটেল অথবা কখনো মেসে নিয়ে ওই ছাত্রীকে ভোগ করতে থাকেন মতিনুর। মূলত মতিনুর রহমানের কারণে ওই ছাত্রী তার ব্যাচে ফলাফলের দিক দিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় বর্ষে তার রেজাল্ট ৩.৬৩ থাকলেও তৃতীয় বর্ষে তা হয়ে যায় ৩.৮১। চতুর্থ বর্ষে ওই ছাত্রী জিপিএ পায় ৩.৯১। এত ভালো ফলাফল ইতোপূর্বে ওই বিভাগের কেউ করতে পারেননি। জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে বিভাগে প্রভাব থাকায় তা কাজে লাগিয়ে অধ্যাপক মতিন ওই ছাত্রীকে প্রথম বানিয়েছেন। বিভাগের নাম রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন হওয়ায় মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের লোকপ্রশাসন অথবা রাষ্ট্রনীতি বেছে নিতে হয়। জানা যায়, ড. মতিনুর রহমান রাষ্ট্রনীতি বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় ভালো ফলাফলে আশ্বাসে ছাত্রী রাষ্ট্রনীতিই বেছে নিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি স্থানীয় এক ঠিকাদারের সঙ্গে রাত কাটানোয় হল কর্তৃপক্ষ গত ২৪ মার্চ ওই ছাত্রীর হলের সিট বাতিল করে দেয়। হলের আবাসিক ছাত্রীরা তার ব্যাপারে প্রভোস্টকে জানালে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। অভিযুক্ত ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়ার হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। ওই হলের কয়েকজন ছাত্রী জানান, ‘গত দুই-তিন মাস থেকে আমরা ওই ছাত্রীকে বেপরোয়া জীবন যাপন করতে দেখে আসছি। হল প্রভোস্টকে বারবার বলার পরে অবশেষে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান কিছু বলতে রাজি হননি। তবে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রী জানান, ‘ব্লাকমেইল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমি এ রকম কোন কাজের সঙ্গে জড়িত নই।’ ড. মতিনুর রহমান বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হন। পরবর্তীতে জাতায়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সুযোগ-সন্ধানী এই শিক্ষক ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট মদ খেয়ে মধ্যরাতে ছাত্রী হলের সামনে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় মাতলামি ও ছাত্রী হলে ঢোকার চেষ্টা চালান। এ সময় টহল পুলিশ তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি মদের বোতল দিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করেন ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় পুলিশের উপর হামলা, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টের অভিযোগে ইবি থানায় মতিনুরের বিরুদ্ধে মামলা (মামলা নং-৫) দায়ের করে পুলিশ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্স এমডিএস’র সমন্বয়কারী থাকা অবস্থায় অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় অধ্যাপক মতিনকে পদচ্যুত করা হয়। এছাড়া ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ড. মতিনের অধীনে ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে সাজিদ হোসেন নামের এক এম ফিল গবেষক ভর্তি করার ঘটনায় তখনও ক্যাম্পাসে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য। আমি নিজেই অবাক হচ্ছি আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ শুনে। এটা আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।’ উৎসঃ আরটিএনএন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন