রবিবার, ১১ মে, ২০১৪


ইন্টারপোল থেকে নূরকে বাঁচাতে সুপারিশ করেন যারা 11 May, 2014 শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে ইন্টারপোলে তালিকাভুক্ত ছিল নূর হোসেন। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড এলার্টও জারি করে। সে সময় তিনি ছিলেন ফেরার। পালিয়ে গিয়েছিলেন দেশের বাইরে। কিন্তু ইন্টারপোলের সন্ত্রাসী তালিকায় তাকে বেশি দিন থাকতে হয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আত্মগোপন থেকে সে বেরিয়ে আসেন প্রকাশ্যে। দখলে নেয় ফেলে যাওয়া রাজত্ব। আর সে সময় ইন্টারপোলের পরোয়ানা থেকে তাকে বাঁচিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, শামীম ওসমান ও আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এইচ টি ইমাম এ সংক্রান্ত একটি চিঠি লেখেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। ২০০৯ সালের ৮ই জুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এইচ টি ইমাম লেখেন, নূর হোসেন আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা, জনদরদি। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৫ সালের ১৬ই এপ্রিল সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করে। সে যাতে আইনের আশ্রয় নিতে না পারে সে জন্য তাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার চেষ্টাও করা হয়। নূরকে আবার ‘ক্রসফায়ারে’ দেয়ার পাঁয়তারা হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এ জন্য তার নিরাপত্তা ‘নিশ্চিত’ করার অনুরোধ জানানো হয়। এমনকি নূর হোসেনকে সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিশেষভাবে ‘অনুরোধ’ করা হয়। এই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে। এর আগে নূর হোসেনের আবেদনে সেই সময়কার নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হাসনাত কায়সার ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সুপারিশ করেন। এই চিঠির পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তার বিরুদ্ধে উঠিয়ে নেয়া হয় ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। পুলিশ সুপার বিশ্বাস আফজাল হোসেন তখন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আগে সন্ত্রাসীর তালিকায় নূর হোসেনের নাম ছিল। বর্তমানে তালিকায় তার নাম নেই। নূর হোসেন সব মামলায় জামিনে আছেন। এরপর আর তাকে পায় কে? নিজের সন্ত্রাস সাম্রাজ্য গুছিয়ে নিতে বেশি সময় নিতে হয়নি তাকে। শিমরাইলে মাদক সাম্রাজ্য, ট্রাকস্ট্যান্ড ঘিরে চাঁদাবাজি, পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে চলাচলরত সব বাস থেকে চাঁদা আদায়, জমি দখল, মার্কেট দখল করে রাতারাতি বনে যায় অন্ধকার জগতের সম্রাট। সখ্য গড়ে তোলে সরকারের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে। ডিসি, এসপিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে নেয় নিজের আয়ত্তে । আর তাই বিনা অনুমতিতে শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে যাত্রার নামে জুয়া, মাদক সেবনের আখড়া চালাতে থাকে দিনের পর দিন। আর এ যাত্রার স্থান পাহারা দিতো পুলিশ। মাঝে মাঝে র‌্যাবের গাড়িও ঘুরে যেতো। নিজেকে আরও প্রভাবশালী বানাতে গিয়ে ধীরে ধীরে তার বাহিনীতে টেনে নিতো উঠতি সাহসী যুবকদের। ফলে সিদ্ধিরগঞ্জ জুড়ে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। সূত্র জানায়, গত দুই বছরে ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেও তার বাহিনীর অধীনে ছিল বহু অবৈধ অস্ত্র। নূর হোসেন বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য অস্ত্র চালানোতে পারদর্শী। ৮০-এর দশকে নূর হোসেনের উত্থান হলেও তার প্রভাব বাড়তে থাকে ১৯৯৬ সালের পর। তখনই সন্ত্রাসী তকমা লেগে যায় তার ললাটে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সে। তখনই তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলের সাহায্য নেয় সরকার। ইন্টারপোল শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সদস্য দেশগুলোতে নূর হোসেনের ব্যাপারে রেড এলার্ট জারি করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দেশে এসে ইন্টারপোলের তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দিতে উঠে পড়ে লাগে। সফলও হয়। তবে ২৩টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কখনও হাতকড়া পরতে হয়নি নূর হোসেনকে। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি সমর্থিত চারদলীয় জোট। এর পরপরই নূর হোসেন তার বাহিনী নিয়ে পালিয়ে যায় ভারতে। একটি মামলার রায়ে অনুপস্থিত নূর হোসেনকে সাড়ে তিন বছরের কারাদ- দেয়া হয় সে সময়। ২০০৭ সালের ১২ই এপ্রিল আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল নূর হোসেনের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে। ইন্টারপোলের ওয়েবপেইজে নূর হোসেন সম্পর্কে বলা হয়, সশস্ত্র অপরাধ, হত্যা ও অঙ্গহানিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সে যুক্ত। উৎসঃ মানবজমিন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন