বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০১৪


ইসলামের শরিয়া আইন ও ব্রুনাই সুলতানের লাম্পট্যময় জীবন 08 May, 2014
আরব বিশ্বের শরিয়া আইন কেবল মাত্র দেশগুলোর সাধারণ মানুষ আর অসহায় নারীদের জন্য। দেশগুলোর ক্ষমতাসীনরা শরিয়া আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লিপ্ত থাকে নানান অসামাজিক কর্মকান্ডে। ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে নারীদের পিছনে ব্যয় করে অঢেল অর্থ। আবার নিজের প্রাসাদে হাজারো উপপত্নী রাখার বিধান চলছে বংশপরম্পরায়। সমকামিতা, ব্যভিচার, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন আর মদ্যপ আরব বাদশা-সুলতানদের ইসলামভক্তি ও ব্যক্তি জীবনে ব্যভিচারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসান আল বলকিয়া। ব্রুনাইয়ের সুলতান সম্প্রতি দেশটিতে শরীয়াভিত্তিক আইন প্রতিষ্ঠায় নতুন দন্ডবিধি জারি করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। শরীয়া আইন অনুযায়ী এ দন্ডবিধিতে যেসব শাস্তি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সেগুলো হল, ব্যভিচারের করলে পাথর ছুঁড়ে ছুড়েঁ মেরে ফেলা, চুরির অপরাধে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা; গর্ভপাত, মদ্যপান ও সমকামিতার জন্য প্রহার করা। এই আইন সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজ্য হলেও সুলতানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে মনে করেন সুলতানের কাম-লালসার শিকার জিয়িান লরেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার বই ‘সাম গালর্স: মাই লাইফ ইন এ হারেম’ এর লেখক জিলিয়ান লরেন, ব্রুনাইয়ের সুলতানের ভাইয়ের উপপত্নী ছিলেন। এই সময়ে সুলতান তাকে জোর করে কয়েকবার ধর্ষণ করেছেন। এমনকি দুই ভাই একত্রে তার উপর নির্যাতন চালিয়েছে। এর পরেও শরিয়া আইন মোতাবেক তাদের কোন শাস্তি হবে না। কারণ তারা ক্ষমতাবান। ব্রুনাইতে ধর্মীয় শরিয়া আইন চালু করা ‍সুলতানের ব্যভিচার, মদ্যপ ও ধর্ষকামী জীবনের কাহিনী তুলে ধরেছেন লরেন। লরেনের আত্মকথন: গত মঙ্গলবার, সকালের খবরে চোখ বুলাতে গিয়ে পরিচিত একটি মুখ দেখে আনন্দিত হয়ে উঠি। খবরের শিরোনাম ছিল, ব্রুনাইয়ের সুলতান। আমি যখন তাকে চিনতাম, তার তুলনায় এখন সে অনেক বয়স্ক হয়ে গেছে; এখন যা আছে তা হলে চর্বিসর্বস্ব থলথলে মুখ। আমি তখনও কিশোরী, ব্রুনাইয়ের প্রিন্স (সুলতানের ভাই)–এর উপপত্নী ছিলাম। আমার স্বাভাবিক ঢঙ এমন ছিল যেন তারা কখনোই খারাপ নন। পার্থক্য এই যে তারা অসম্ভব ধনী। আমি প্রায়ই ভেবে অবাক হতাম যে ওদের জায়গায় যদি আমি থাকতাম; বিশ্বের সব ক্ষমতা, অর্থ যদি আমার হাতে থাকত তবে আমি কী করতাম! তবে কখনোই এর সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাইনি। সুলতান এখন ব্রুনাইয়ে শরীয়া আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে শিরোনাম তৈরি করছে। যে শরীয়া আইনে আছে, ব্যভিচার করলে বর্বরভাবে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মেরে ফেলা, চুরি করলে অঙ্গচ্ছেদ করা; গর্ভপাত, মদ্যপান ও সমকামিতার অপরাধে নির্মমভাবে প্রহার করার মত নিষ্ঠুর সব পদ্ধতি। ধর্ষণ ও পুরুষদের সমকামিতার জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্পর্কে আমি বিশেষজ্ঞ নই। তারপরও এসব ব্যাপারে আমার মন্তব্য করার যোগ্যতা রয়েছে। কেননা ’৯০-এর শুরুর দিকে এক সন্ধ্যায়, পেন্টহাউস স্যুট এ উন্মত্ত মাতাল অবস্থায় উপরোক্ত অপরাধগুলোর মধ্যে কমপক্ষে দুটি আমি ও সুলতান- আমরা করেছিলাম্। এই অপরাধগুলোই এখন নতুন বাস্তবায়িত দন্ডবিধির আওতাধীন। অদ্ভূত ঠেকছে তো? আগে আমাকে নিজের সপক্ষে কিছু কথা বলতে দিন। আমার তখনো ১৮ বছর পুরোপুরি হয়নি, আমি নিজেকে নিউইয়র্কে রিটজ-কার্লটনে “কাস্টিং কল”-এ আবিষ্কার করি। সেখানে আমাকে বলা হয়, আমাকে সিঙ্গাপুরের নাইটক্লাবে কোন একটা পজিশনে থাকতে। চাকরিটা পাওয়ার পর আমি দেখলাম সেটা আসলে পুরোপুরি সিঙ্গাপুরে ছিল না। তার পরিবর্তে আমাকে ব্রুনাইয়ের সুলতানের সবচেয়ে ছোট ভাই, কুখ্যাত উচ্ছৃঙ্খল প্লেবয় প্রিন্স জেফরি বলকিয়াহর ব্যক্তিগত অতিথি হিসেবে থাকতে হবে। সোজা কথায় সুলতানের ছোট ভাইয়ের মনোরঞ্জন করতে হবে। সেসময়, সুলতান ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালীদের মধ্যে একজন। আর আমার ছিল ভ্রমণের উদগ্র আকাঙ্ক্ষা। আমি অবশ্যই নিষ্পাপ ছিলাম না, কিন্তু যেই সময় আমি আমন্ত্রণটা গ্রহণ করি, তখন আমি খুব, খুব কমবয়স্ক ছিলাম। ব্রুনাইয়ে পৌঁছার পর দেখতে পেলাম, প্রিন্স প্রতি রাতেই অর্থহীনভাবেই প্রাসাদে জাঁকজমকপূর্ণ পার্টি দেয়। পিকাসো’র আঁকা ছবি থাকে তার বাথরুমে, এমনকি কার্পেটও বোনা হয় সত্যিকারের স্বর্ণ দিয়ে। এই পার্টিগুলোতে নিয়মিত মদ্যপান (আইনগতভাবে যা বৈধ ছিল না), নাচ-গান চলত। কিছু অত্যাধিক হাসিখুশি কারাওকে থাকত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, সারাবিশ্ব থেকে প্রায় ৩০-৪০ জন সুন্দরীকে ঐ পার্টিগুলোতে হাজির করা হত। বলা চলে একটা ছোটখাট হারেম। প্রিন্স ছিল লম্পট স্বভাবের, অত্যন্ত চালাকও, আবার মাঝে মাঝে চমৎকারও। পরের বছর আমি ওখানেই কাটালাম। তার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে কিছু পরিবর্তন আসল। একসময়, এটা অনেক গ্ল্যামারাস ও উত্তেজনার ছিল। নীতি ভঙ্গ করে প্রিন্স তার ভাই সুলতানের হাতে আমাকে ‘উপঢৌকন’ হিসেবে তুলে দিয়ে(কুয়ালালামপুর স্যুইটে) চূড়ান্ত অপমান করলেন আমাকে। যদিও আমি কোন অর্থেই কারাবন্দী ছিলাম না, কিন্তু আমি আমার খুশিমত কোথাও আসা-যাওয়া করতে পারতাম না। সেখানে কাটান সময় শেষে আমার বয়স আরো ১০ বছর বেড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছিল। এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। অনেক সময় লেগেছিল আমার হারানো পথ পুনরুদ্ধার করতে। অবশেষে আমি আমার পথ খুঁজে পেয়েছি। আমার যুদ্ধগুলো ছিল অভ্যন্তরীণ, এগুলো সম্পূর্ণ আমার নিজের। একদিক দিয়ে, সেগুলো আমার জন্য সুবিধাই ছিল। এখন ১৫টি দেশে পাথর ছুঁড়ে মৃতুদন্ড দেওয়ার চর্চা কিংবা আইন আছে। আনুপাতিকভাবে এই শাস্তি সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করা হয় নারীদের উপর, এবং অধিকাংশই ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে। হিউম্যান রাইটস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এটাকে বর্বর, অস্বাভাবিক নির্যাতন মনে করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, মুসলিম আইনের অধীনে যেসব নারীরা বসবাস করছে, তাদের মৌলিক স্বাধীনতা ও যৌন আকাঙ্ক্ষা দমন, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়া নারীদের উপর হিংস্রতার সবচেয়ে নির্মম রুপগুলোর একটি। এবং প্রিন্স ও সুলতানের অন্যায় আচরণের এই আরেক সুযোগ। এই দুই ভাইয়ের ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার এসব আইন। ব্রুনাই সীমান্তের মধ্যে মুসলিম-অমুসলিম যারাই বাস করেন, তাদের স্বাধীনতা সবসময়ই সীমাবদ্ধ থাকে, অবরুদ্ধ থাকে। এই সীমাবদ্ধতাকে আইন করে এখন সম্ভবত নির্মম সহিংসতায় পরিণত করা হচ্ছে। এরচেয়ে বরং আমাকে পাথর ছুঁড়ুন, আমি অতীতে যে পাপ করেছি তার জন্যে। এই পাথর অবশ্য আক্ষরিক অর্থে নয়। যতক্ষন না পর্যন্ত আমি অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি কিংবা আইন ভাঙছি, ততক্ষণ পর্যন্ত একটি মুক্ত সমাজের নাগরিক হিসেবে আমার নিজের ইচ্ছেমত কাজ করার অধিকার আমার রয়েছে। আমি কার সাথে ঘুমাব সেটা একান্তই আমার ব্যাপার, আমার অধিকার। সে প্রিন্স হোক আর যাই হোক, যার সাথে আমি থাকতে পছন্দ করি, তার সাথে ঘুমাব। আমি নিজের পছন্দ নিয়েই বাস করি, বেঁচে থাকি। এখন ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রজনরা তাদের অধিকার ভঙ্গের মুখোমুখি হয়েছে। আমার মনে হয়, যে লোকটাকে আমি একসময় চিনতাম, সে হয়তো কোথাও কোন ফিটফাট হোটেলে, হয়তোবা কোন আমেরিকান কিশোরীকে কোলে নিয়ে, অনৈতিকভাবে এই নৈতিক আইন তৈরি করছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন