রবিবার, ১১ মে, ২০১৪


জামায়াতীদের দাপটে বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ বুয়েটে! 12 May, 2014 বিভাষ বাড়ৈ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের নামে সংগঠন করতে গিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের বাধার মুখে পড়েছেন প্রগতিশীলরা। ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ’ নামে সংগঠন করতে চাইলেও বাধার কারণে প্রগতিশীল শিক্ষক ও গবেষকরা আদর্শ, উদ্দেশ্য ঠিক রেখে ‘বুয়েট শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ’ গঠন করেছেন। তবে তাতেও বাধার মুখে পড়েছেন তাঁরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা সংগঠনের সদস্য হতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এমন সব বক্তব্য থাকায় উল্টো প্রগতিশীলরাই এখন চাপের মুখে। শিক্ষক সমিতিতে সরকারবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলদের দাপট থাকায় পুরো সমিতিই এখন প্রগতিশীল এ সংগঠনকে হুমকি মনে করছে। কেবল তাই নয়, ইতোমধ্যে নতুন এ সংগঠন করার জন্য ডিনদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের। এ অবস্থায় উদ্বেগের মধ্যে আছে প্রগতিশীল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তারা। জানা গেছে, কেবল বঙ্গবন্ধু নাম নয় বরং প্রগতিশীলদের যে কোন সংগঠন করার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে বুয়েটের সরকারবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। এ কারণে সংগঠনের নাম পাল্টে ‘বুয়েট শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ’ রাখা হলেও বাধা দেয়া হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরসহ উগ্রবাদী গোষ্ঠী গ্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর নামে কোন সংগঠন নয় বলে দেয়া হচ্ছে হুমকি। প্রশ্ন উঠেছে, বুয়েটে কি তাহলে বঙ্গবন্ধুনিষিদ্ধ? নিষিদ্ধ কি প্রগতিশীলদের যে কোন সংগঠন? এর আগে বুয়েটে জামায়াত-শিবির ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের আস্তানা নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে নানা তথ্য প্রকাশ হয়েছে। ট্রাইবুনালে দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হরতালে নাশকতা চালাতে গিয়ে আটকও হয়েছেন একাধিক বুয়েটের ছাত্র। কয়েক শিক্ষকের সঙ্গে শিবির ও হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যদের চাঁদা দেয়া ও ই-মেইল, ফেসবুকে যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বুয়েটেই উগ্রবাদীরা হত্যা করেছে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী মেধাবী ছাত্র দ্বীপকে। বুয়েটের আরেক প্রগতিশীল সংগঠক তন্ময় আহমেদকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানেরই উগ্রপন্থী শিক্ষক নেতা হাফিজুর রহমান রানা গেল বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাফিজুর রহমান রানা স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘হায়েনা ওই হায়েনা তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন তুই বুয়েট কে খাবি... পারবি না...আমরা বুয়েটের শিক্ষকরা ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা হচ্ছি শিকারি। প্রথমে তোর মাথাতে গুলি করব, তারপর তোর পেটে। তারপর তোর মাথা কেটে বুয়েটের গেটের সামনে টানিয়ে রাখব। যাতে আর কোন হায়েনার আক্রমণে বুয়েট আক্রান্ত না হয়। এখানেই শেষ নয়, ইতোমধ্যেই সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মাত্র ২২ ভাগ শিক্ষক বর্তমান সরকার ও প্রগতিশীল মতাদর্শের অনুসারী। ৭০ ভাগ শিক্ষকই বিএনপি-জামায়াত ও হিযবুত তাহ্রীরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ৮ ভাগ শিক্ষক মোটামুুটি নিরপেক্ষ। শিক্ষক সমিতির অধিকাংশই সরকারের ঘোরতর বিরোধী এবং তারাই হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রদের মদদ দিচ্ছেন। এমন এক অবস্থায় প্রগতিশীল শিক্ষক, গবেষকরা কিছুদিন ধরেই ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য উদ্দেশ্য যখন চূড়ান্ত তখন নানা ধরনের হুমকি পেয়ে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক রেখে ‘বুয়েট শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ’ গঠনের উদ্যোগ নেন প্রগতিশীলরা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম নজরুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেই শিক্ষক, গবেষকরা এক পর্যায়ে কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেন। এই মুহূর্তে উপাচার্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তবে চিহ্নিত গ্রুপটির কারণে প্রগতিশীলদের সংগঠন এখন হুমকির মুখে পড়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটের পুরো প্রশাসনে সরকারবিরোধীদের একচ্ছত্র দাপট থাকায় উপাচার্য এখন অনেকটাই তাদের হাতের পুতুল। শিক্ষক সমিতিসহ প্রভাবশালী শিক্ষক নেতারা যাই বলেন উপাচার্য তার বাইরে যেতে পারেন না। আবার শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন আছেন যাঁরা সরকার সমর্থক হলেও নানা লাভক্ষতির বিবেচনা করে বিএনপি-জামায়াতের গ্রুপের সঙ্গে আপোস করে চলেন। ফলে প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করার পক্ষে অবস্থান আছে কমসংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তারই। এ অবস্থার মধ্যেই সম্প্রতি বুয়েট শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নামে সংগঠন করা হয়। একই সঙ্গে সংগঠনের আদর্শ ও সদস্য হওয়ার নিয়মাবলী সংযুক্ত করে বিতরণ করা হয়েছিল। যার আদর্শ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সহযোগিতা প্রদান করা। সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা সম্পর্কিত/সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নীতিনির্ধারণ এবং উৎকর্ষ সাধনে সহযোগিতা প্রদান করা। সদস্যদের স্ব স্ব কাজে জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে এবং দক্ষতা অর্জনে সম্ভাব্য প্রচেষ্টা চালানো/অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। নিয়মিতভাবে ক্রীড়া, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও চিত্তবিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। বন্যা, ঝড়, দুর্ভিক্ষ, মহামারী বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত মানুষকে যথাসাধ্য সাহায্য করার প্রচেষ্টা চালানো। সকল ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখা এবং এতদসংক্রান্ত পরিবেশকে ব্যাহত করে এমন যে কোন কর্মকান্ড প্রতিহত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা। এর জন্য প্রয়োজনবোধে অত্র সংগঠন তার আদর্শ ও উদ্দেশ্যাবলীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাংলাদেশের এক বা একাধিক বা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল সংগঠন/সংগঠনের সমন্বয়ে ফেডারেশন গঠনের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত অধিকার, স্বার্থ ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যৌথ প্রচেষ্টা চালাবে। সদস্য হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়, সংগঠন এবং গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষক/গবেষক এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন। তবে কোন সদস্য অবসর গ্রহণের পর সদস্যপদ অব্যাহত রাখতে চাইলে তাঁকে আবেদন করতে হবে। সদস্য হওয়ার অযোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়, মুুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সংগঠনের নীতিতে বিশ্বাসী অথবা এরূপ সংগঠনের সঙ্গে অতীতে বা বর্তমানে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি সদস্যপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে সংগঠনের এমন অবস্থানকেই নিজেদের জন্য হুমকি মনে করছে উগ্রবাদীরা। শিক্ষক সমিতির নেতারা কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, এই সংগঠন সমিতির সমান্তরাল কিছু করতে চায়। এই অবস্থায় ডিনরা সংগঠন সম্পর্কে জবাবদিহি করতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে চিঠি দেন। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ডিনদের কাছে ইতোমধ্যেই সংগঠনের বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়েছে শিক্ষকদের। ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে বুয়েটজুড়ে। প্রগতিশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে শিবির, হিযবুত তাহ্রীরের মতো সংগঠনের কমিটি আছে সেখানে প্রগতিশীলদের সংগঠন বাধার মুখে পড়ছে। এ অবস্থার জন্য অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের রহস্যজনক নীরবতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত এক বছরে এখানে উগ্রবাদীরা অনেকে চিহ্নিত হলেও মন্ত্রণালয়ের আপোসের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ডিনদের একজন অধ্যাপক আমিনুল হক অবশ্য দাবি করেছেন, নতুন এ সংগঠন বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, বুয়েট নাম থাকলে এভাবে সংগঠন করা যাবে না। তাহলে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ হলে কি বৈধ? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই ক্ষেত্রে তো আবার কেউ কেউ বলতে পারে জিয়ার নামে সংগঠন করবে। তাতে তো বিভাজন তৈরি হবে। বুয়েট নামে সংগঠন হবে না বলে বলা হলেও জানা গেছে, বুয়েট উত্তরবঙ্গ সমিতি, বুয়েট কুমিল্লা সমিতি, বুয়েট নোয়াখালী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন এখানে সক্রিয় আছে। শিক্ষকরা বলছেন, আসলে অর্ডিন্যান্স কেবল ছুঁতো। প্রগতিশীলরা এক হচ্ছে এটাই প্রতিপক্ষের জন্য সমস্যা। উৎসঃ জনকন্ঠ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন