বুধবার, ৭ মে, ২০১৪


পুলিশ কর্তার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস : এবি সিদ্দিক ও সাত খুনে মুল হোতা র‍্যাব 07 May, 2014
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে র‌্যাবই অপহরণ করেছিল। ঘটনার পর যে দুটি আলামত প্রকাশ পায় তাতে পুলিশের কাছে র‌্যাবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। একইভাবে বেলার নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এবি সিদ্দিককেও র‌্যাব অপহরণ করেছিল। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত র‌্যাব এবং পুলিশের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুস্পষ্ট আলামত পেয়েও কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তবে এসব তথ্য সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল পদস্থ কর্মকর্তা চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাতে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার যুগান্তর কে বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুতর । এনিয়ে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তবে ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম আদালত থেকে জামিনে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে র‌্যাব-১১ এর এক সদস্যকে অস্ত্রসহ আদালত চত্বর থেকে আটক করেছিল সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের দুই কনস্টেবল। মাথায় টুপি-পাগড়ি, মুখে দাড়ি ও পাঞ্জাবি পরা ওই লোকটি সে সময় রফিক ও ওমর ফারুক নামে পুলিশের দুই কনস্টেবলের কাছে নিজেকে র‌্যাব পরিচয় দেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তার পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তিনি জানান, পরিচয়পত্র সঙ্গে নেই। তবে লোকটি নিজের মোবাইলে তোলা র‌্যাবের পোশাক পরিহিত তার ছবি দেখান। এ সময় তিনি পুলিশকে আরও জানান, আদালত এলাকায় একটি অপারেশনে এসেছেন। কিন্তু লোকটি র‌্যাবের সদস্য বলে নিশ্চিত হতে না পেরে পুলিশ সদস্যরা তাকে অস্ত্রসহ আটক করে পিপি’র কক্ষে নিয়ে যান। এর মধ্যে সেখানে মোস্তফা কামাল নামে র‌্যাবের একই ব্যাটালিয়নের অপর এক সদস্য পোশাক পরা অবস্থায় উপস্থিত হন। তিনি বিজিবির হাবিলদার থেকে র‌্যাবে এসেছেন। তিনি দাড়ি-টুপি পরিহিত লোকটিকে তার সহকর্মী পরিচয় দিয়ে ছাড়িয়ে নেন। ২৭ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। একই সময় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম আদালত থেকে বের হয়ে ঢাকার দিকে রওনা হন। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার দিন বিকাল ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মাদক ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল মতিন এসপি নুরুল ইসলামকে ফোন করে জানান, প্যানেল মেয়র নজরুলকে তুলে নিয়ে গেছে র‌্যাব। আদালত চত্বরেই তিনি র‌্যাবের নজরদারির মধ্যে ছিলেন। কিন্তু কোথা থেকে তাকে তুলে নেয়া হয় সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কোনো তথ্য জানাতে পারেননি ওসি। পরে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন নারায়ণগঞ্জের লামাপাড়া নামক স্থান থেকে তাদের র‌্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছেন। গাড়িতে তুলে নেয়ার সময় বেতের লাঠি দিয়ে তাদের পেটানো হয়। এ সময় তাদের গাড়িও নিয়ে যাওয়া হয়। এসপিকেও এ তথ্য জানানো হয়েছিল। ঘটনা শুনেই এসপি ঘটনাস্থল লামাপাড়ার দিকে ছুটে যান। তিনি সেখানে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিন ২৮ এপ্রিল পুরো ঘটনা পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে জানানো হয়। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ তদন্তের জন্য র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আদালত চত্বর থেকে অস্ত্রসহ আটক র‌্যাবের ওই সদস্য এবং তাকে শনাক্তকারী র‌্যাব সদস্য মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইজিপি আরও কয়েকদিন বিষয়টি মনিটরিং করতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এরপর বিষয়টি গোপনেই তদন্ত করা হচ্ছিল। সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, এ ঘটনার পেছনে পুলিশ প্রাথমিকভাবে যেসব তথ্য পেয়েছে তাতে নজরুলসহ ৭ জনকে অপহরণ ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা একইভাবে রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এবি সিদ্দিককেও তুলে নেয় র‌্যাব।’ উল্লেখ্য, “পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার দেয়া সাক্ষাৎকারের রেকর্ড যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।” উৎসঃ যুগান্তর

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন