মাদরাসাগুলোর ওপর নজরদারি বেড়েছে : তথ্য জানাতে ডিসি এসপিদের নির্দেশ
11 May, 2014
জঙ্গিবাদ দমন ও নির্মূলের লক্ষ্যে জোর তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশের আলিয়া ও কওমি মাদরাসার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী জুমার নামাজে মসজিদের ইমামদের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা ও তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর বিশেষ নজর রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে। অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থার বাইরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সুশীল সমাজ, সমাজের সচেতন মহলসহ এনজিও কর্মকর্তাদের মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের কর্মকাণ্ডের ওপর বিশেষ নজর রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্ররা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে বা কর্মকাণ্ড সন্দেহজনক মনে হলে সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন মহলকে অভিহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
এছাড়া মাদরাসাভিত্তিক ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক লেখকদের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস জানার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে সম্প্রতি তথ্য চেয়েছে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর দেশব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি এ নজরদারি কাজে সহযোগিতা করবে স্থানীয় ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আবার তাদের সব তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বর্তমান আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের ইতিহাস, স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম বিষয়ে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও কওমি মাদরাসাগুলোতে এসব বিষয়ে বাধ্যতামূলক কোনো সিলেবাস নেই। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চলমান পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে দেশের ইতিহাস এবং ধর্ম সম্পর্কে ক্রমাগত ভুল তথ্য শিক্ষা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে এসব বইয়ের লেখক ও প্রকাশকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কওমি ও আলিয়া মাদরাসায় প্রতিদিন জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় কি-না এবং জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেয়া হয় কি-না তা পর্যবেক্ষণ করতে।
জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং সরকারি দফতরে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অর্থের উৎস শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় ওই নির্দেশনায়। এছাড়া গত ২০ এপ্রিল ইস্যুকৃত নির্দেশনায় জঙ্গিবাদ সম্পর্কে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানান, কওমি এবং আলিয়া মাদরাসার (ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর) কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইফার মহাপরিচালক (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের) সামীম আফজাল আমাকে কওমি এবং আলিয়া মাদরাসার বেশকিছু পাঠ্যপুস্তক দিয়েছেন, যেগুলোতে জিহাদ সংক্রান্ত বিষয়ক অনেক তথ্য রয়েছে। তিনি গণমাধ্যমকে আরো বলেন, এই নজরদারির পদক্ষেপটি আকস্মিক গ্রহণ করা হয়নি। এটি ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার মানবকণ্ঠকে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর নিয়ন্ত্রণে আছে। অনেকাংশে আমরা জঙ্গিবাদ দমনে সমর্থ হয়েছি।
দেশের কওমি ও আলিয়া মাদরাসার ওপর সরকারের নজরদারি রাখার ব্যাপারে হেফাজতের নায়েবে আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী মানবকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গি তৎপরতা কেউ সমর্থন করে না। কওমি ও আলিয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়।
উৎসঃ মানবকন্ঠ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন