রবিবার, ৪ মে, ২০১৪


নজরুল হত্যা চূড়ান্ত হয় ৬ কোটি টাকায়
05 May, 2014 র্যাবের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। শহীদ চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকায় পরিচিত (প্রাক্তন সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন)। নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম আরো অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। সাত জনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলা পর্যন্ত পুরো মিশনে কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার বাহিনীকে র্যাব-১১-এর কিছু সদস্য সহযোগিতা করেছে। গতকাল রবিবার জোহরের নামাজের সময় সিদ্ধিরগঞ্জ মৌচাক জামে মসজিদের একপাশে বসে ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে শহীদ চেয়ারম্যান এসব অভিযোগ করেন। এদিকে র্যাব সদর দপ্তর জানিয়েছে, শহীদ চেয়ারম্যানের উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শহীদ চেয়ারম্যান জানান, গত ২৪ এপ্রিল হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন কাঁচপুর ব্রিজের দক্ষিণপাশে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর তৈরি তার 'জল সাগর' নামের প্রমোদ ঘরে বসে নজরুলকে হত্যার বিষয়টি চূড়ান্ত করে। সেখানে কিলার ও পরিকল্পনাকারীরা উপস্থিত ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে নজরুলকে অপহরণ করা হয়। নজরুলকে অপহরণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার সঙ্গে থাকা দলীয় কর্মী, গাড়ি চালককেও অপহরণ করা হয়। আর এগুলো দেখে ফেলায় আইনজীবী চন্দন সরকারকেও তুলে নেয়া হয় যাতে এ ঘটনার কোন সাক্ষী প্রমাণ না থাকে। নজরুলকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি যাতে ধামাচাপা পড়ে সেজন্য বাকি ৬ জনকেও হত্যা করা হয়। শহীদ চেয়ারম্যান আরো বলেন, অপহরণের ঘটনার ঘন্টাখানেক পর ঘটনাস্থলে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী দুই বালু শ্রমিক জানায়, র্যাবের দুইটি গাড়ি অপহরণের সময় ছিল। নজরুলকে উদ্ধারের দাবি জানাতে তত্ক্ষণাত স্থানীয় র্যাব অফিসের সামনে (নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরাতন কোট এলাকা) কয়েকশ লোক নিয়ে অবস্থান নিই। তিনি বলেন, 'স্থানীয়রাও আমাকে জানিয়েছে দুইটি মাইক্রোবাসে করে নজরুল ইসলামসহ কয়েকজনকে এ অফিসে আনা হয়েছে। সেসময় র্যাব-১১ এর সিইও আমাকে উল্টো ফোন করে বলেন, নজরুলের পরিবার নিয়ে তার অফিসে যেতে।' শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, তিনি ওই কর্মকর্তার অফিসে গেলে তাকে ৬ ঘন্টা ওই অফিসে বসিয়ে রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে নজরুলসহ ৭ জনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয় বলে শহীদ চেয়ারম্যান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে দাবি করেন। শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, নূর হোসেনের মোটা অংকের টাকার লোভে পড়ে র্যাব নজরুলসহ সাত জনকে হত্যা করতে সহযোগিতা করেছে। র্যাবের ওই কর্মকর্তাদের নাম ও জড়িতদের নাম উল্লেখ করে মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। র্যাব কর্মকর্তা ও কিলারদের কয়েকজনের নাম বাদ দিতে বলে পুলিশ। নতুন করে এজাহার গ্রহণ করে পুলিশ। শহীদ চেয়ারম্যান আরো বলেন, চন্দন সরকারের ব্যবহূত মোবাইল ফোনটি নূর হোসেনের ভাতিজা শাহীনের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় নূর হোসেন ও তার কিলার বাহিনী নজরুলসহ সাত জনকে হত্যার সঙ্গে জড়িত। শহীদ চেয়ারম্যান জানান, ২০০০ সাল থেকে নজরুলের সঙ্গে নূর হোসেনের বিরোধ। নজরুলকে কয়েক বার হত্যার চেষ্টা চালিয়ে সে ব্যর্থ হয়। তাদের দফায় দফায় হামলায় নজরুলের বন্ধু আব্দুল মতিন ও রিকশা চালক শুকুর আলী নিহত হয়। বেঁচে যান নজরুল। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা ও এক উপদেষ্টার সঙ্গে নূর হোসেনের আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। তাদের ছত্রচ্ছায়ায় নূর হোসেন দোর্দণ্ড প্রতাপে চলতো। সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্য, জমিজমা দখল, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী এবং অস্ত্র বেচাকেনা করে আসছিল নূর হোসেন ও তার বাহিনী। শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, নূর হোসেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তার ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স আছে। সঙ্গে থাকে সব সময় অবৈধ অনেক অস্ত্র। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই নূর হোসেন অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। শহীদ চেয়ারম্যান বলেন,এর আগে হত্যার হুমকি পেয়ে নজরুল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে দেখা করতে যায়। তখন সে আমাকে ফোনে দিয়ে জানায়, নূর হোসেন র্যাবকে দিয়ে তাকে হত্যা করার জন্য হন্য হয়ে খুঁজছে। আমি তাকে বলি, ভারতের নরেন্দ্রপুর এলাকায় তোমার জন্য ফ্ল্যাট কিনে রেখেছি। তুমি সেখানে গিয়ে নিরাপদে থাকো। ৬ মাস আগে জামাতা নজরুলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করলেন কেন-এ প্রশ্নের জবাবে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, নজরুল তার স্ত্রী মানে আমার মেয়ে সেলিনা ইসলাম বিউটিকে মারধর করেছিল। জমি নিয়ে আমাদের সামান্য পারিবারিক বিরোধ ছিল। নজরুলকে ভয় দেখাতেই এটা করেছি। এ বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, নজরুলের সিদ্ধিরগঞ্জের বাড়ি ও বর্তমান যে বাড়ি সে ব্যবহার করছে এটাও আমার। তাকে আমি কেন মারতে যাব? শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের বালু ভরাট নিয়ে নজরুলের ভায়রা হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা নিজেরাই বসে সমঝোতা করেছে। পরে হুমায়ুন কবীরকে বালু ভরাটের কাজ দিয়ে দেয় নজরুল। বিউটির করা মামলায় আপনার সত্ ভাই ঠিকাদার হাসমত আলী হাসুকেও আসামি করা হয়েছে- এই প্রশ্নের জবাবে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, হাসুর সঙ্গে নজরুলের বিরোধ দীর্ঘদিনের। নূর হোসেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাসু এর আগেও নজরুলকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। হত্যাকাণ্ডের ৬ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি টাকা হাসু দিয়েছে বলে শহীদ চেয়ারম্যান জানান। এদিকে র্যাবের অতিরিক্তি মহাপরিচালাক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা এমন অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। যদি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কতিপয় সদস্যের কারণে র্যাবের মত স্পর্শকাতর একটি বাহিনীর ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া হবে না। জড়িতদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। উৎসঃ ইত্তেফাক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন