সোমবার, ৫ মে, ২০১৪


আসামে কেন খুন হলো ৩৭ মুসলমান?
05 May, 2014 রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস যখন স্বাধীনতাকামীদের উপর নিপীড়ন চালায়, তখন নিপীড়িতরা তুলনামূলক দূর্বলদের উপর প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। এমন ঘটনাই চিরন্তন সত্য বলে প্রমাণিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে। আর সেই চিরন্তন সত্যের সর্বশেষ উদাহরণ আসামে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের মৃত্যু। আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আক্রমণে নিহত হয়েছে বাংলা ভাষাভাষী ৩৭ জন মুসলিম ভারতীয় রাষ্ট্রজন। রাজ্যটিতে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক পরপরই এই আক্রমণ চালান হলো। মূলত স্বাধীন বোডোল্যান্ডের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলনকারী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোডাল্যান্ড দলের সদস্যরা এই হামলা চালিয়ে বলে সরকার ও আসামের রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ। জানা গেছে, বোডো মিলিটারী গ্রুপের সদস্যরা গত ৩ মে আসামের বোডাল্যান্ডের বকসা ও কোকরাঝাড় জেলায় হামলা চালায়। প্রাথমিকভাবে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার পরে গ্রামবাসীর উপর হামলা শুরু করেন জঙ্গিরা। নিহতের সবাই বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান বলে জানা গেছে। হত্যার কারণ: ভারতের সাম্প্রদায়িক-জাতিগত ও আঞ্চলিক রাজনীতির শিকার হয়ে নিরীহ রাষ্ট্রজনদের মৃত্যু হয়েছে বলেই ভারতীয় বিশিষ্টজনদের মতামত। ভারতের সহিংস রাজনীতির সর্বশেষ নগ্ন উদাহরণও এই আক্রমণ। শুধুমাত্র বোডো সন্ত্রাসীদের সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার কারণে বাংলা ভাষাভাষীদের উপর এই আক্রমণ চালান হয়েছে। জানা যায়, ২৪ এপ্রিল আসামে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অধিকাংশ বাংলা ভাষাভাষীরা নবো কুমারকে ভোট দিয়েছে বলেই প্রচার। নমো কুমার আসামের আরেক স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফা সমর্থিত প্রার্থী। নবো কুমারের বোডা স্বাধীনতাকামীদের স্বাধীন বোডো ল্যান্ডের দাবিকে অস্বীকার করে। আর বাংলা ভাষী মুসলমানদের শতকরা ৮০ ভাগ ভোট উলফার বাক্সে গিয়েছে, এমন চিন্তা থেকেই তাদের উপর হামলা করেছে বোডোরা। অবশ্য বোডোদের সাথে বাংলা ভাষীদের দ্বন্দ্ব আরো দীর্ঘদিনের ও পুরাতন। বিবাদমান দুটি জনগোষ্ঠীর জাতিগত দ্বন্দ্বের কারণে কেবলমাত্র ২০১২ সালে ১০৫ জন নিহত হয়েছে। আর একই কারণে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বাসিন্দাকে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। শুক্রবারের হামলার পরেও কোকরাঝাড় এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে বাংলা ভাষী মুসলমান রাষ্ট্রজনরা। যদিও বোডোল্যান্ড এলাকার কাউন্সিল প্রধান জনগোষ্ঠীকে নিজের বাসস্থান ছেড়ে না পালাতে অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছে। তবে আসামে বাংলা ভাষী মুসলমান, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বোডো স্বাধীনতাকামী সংগঠনের হামলা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ১৯৮৬ সাল থেকেই চলছে বোডোদের সন্ত্রাসী আক্রমণ। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের অক্টোবর বোডো সিকিউরিটি ফোর্স নামে বোডো জাতিগোষ্ঠীর একাংশ একটি সশস্ত্র দলের সৃষ্টি করে। যাদের লক্ষ্য ছিল, ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে বোডোল্যান্ডকে স্বাধীন করে সমাজতান্ত্রিক বোডোল্যান্ড প্রতিষ্ঠা। সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ভারত। ১৯৯৪ সালে দলটির নতুন নামকরণ করা হয় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোডোল্যান্ড। সন্ত্রাসী সংগঠনটি সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালে ভারতের পুলিশের বিরুদ্ধে আক্রমন শুরু করে। প্রথম হামলায় তারা হত্যা করে ১২ পুলিশ সদস্যকে। সেই থেকে আজো চলছে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসী সংগঠনটির হামলায় ১৬৭ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও ১২ শত সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত সাধারণ মানুষদের অধিকাংশই বাংলা ভাষী মুসলমান। ২০০৫ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে অস্ত্র বিরতি করে বোডো সন্ত্রাসীরা। তবে অস্ত্র বিরতিকে কেন্দ্র করে দলটির মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। একটি দলের নেতৃত্ব দেন, অবিভক্ত বোডো যোদ্ধাদের প্রধান দামিয়া যিনি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে সাক্ষর করেননি। আর অপর দলের নেতৃত্বে আসেন সংবিজিত। সেই সময়ে সরকারের সাথে অস্ত্র বিরতিতে সম্মত হয় সংবিজিৎ। তবে এবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের উপর সংবিজিতের দলের সদস্যরাই এই হামলা চালিয়ে বলে দাবি সরকারপক্ষের। ৩০ এপ্রিল দলটির তিন ক্যাডারকে আসামের তেজপুরে হত্যা করে পুলিশ। তার প্রতিশোধ নিতেই নিরীহ বাংলাভাষীদের উপর নিমর্ম হামলা চালায় দলটি। যদিও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিরাপত্তা বাহিনীকে আগেই হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। কিন্তু হামলা মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোন রকম প্রস্তুতি না থাকার বিষয়টি নিয়েও তৈরি হচ্ছে নানান প্রশ্ন। উৎসঃ নতুনদিন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন