শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


হিজাব পরায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে দিলেন শিক্ষক
07 Feb, 2014 জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগে হিজাব পরায় কয়েকজন ছাত্রীকে গালমন্দ করে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন অধ্যাপক খুরশিদা বেগম। এদিকে এ ঘটনায় তোলপাড় হলে উল্টো ছাত্রীদেরকেই ক্ষমা চাইতে হয়েছে ওই অধ্যাপকের কাছে। সোমবার ক্লাস প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপনা) করতে গেলে হিজাব পরা ছাত্রীদের নিয়ে তিনি কটূক্তি করেন এবং তাদেরকে ক্লাসরুম থেকে বের করে দেন। এরপর গতকাল আবার শিক্ষার্থীদেরকে তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। নিজের দোষ ঢাকতে ওই অধ্যাপিকা ফোনে হত্যার হুমকির নাটক সাজিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগমের ক্লাসে ছাত্রীরা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রাখলেও তাদের নিয়ে কটূক্তি করেন তিনি। তাদের তিনি মৌলবাদী, জামায়াত, জঙ্গি, কোটরের মুরগি, অসামাজিক ইত্যাদি বলে গালাগালি করতে থাকেন। সোমবার মাস্টার্সের (৩৮তম ব্যাচ) ৫০৫ নং কোর্স ‘রেস অ্যান্ড এথনিক পলিটিক্স’-এর ক্লাস নেয়ার সময় তিনি আবারও হিজাব পরা ছাত্রীদের নিয়ে কটূক্তি করেন। এর আগেও তিনি বিভিন্ন ব্যাচের বোরকা পরা ছাত্রী নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন বলে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। তবে সোমবার ওই শিক্ষিকা হিজাব সংক্রান্ত কটূক্তির পর ছাত্রছাত্রীদের রোষানলের মুখে পড়েন। এরপর তিনি ভিআইওপি কলের মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানান। তিনি অভিযোগ করেন মোবাইলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। হিজাব নিয়েও কথা বলতে নাকি নিষেধ করা হয়েছে। তবে খুরশিদা বেগমের এই অভিযোগকে সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী। এদিকে অধ্যাপিকা খুরশিদার মোবাইল এখনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট জমা আছে বলে জানা গেছে। লাঞ্ছিত ছাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার হিজাব পরা ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে খুরশিদা বলেন, যারা হিজাব পরে তাদের মস্তিষ্ক অবরুদ্ধ, তারা অন্তঃসারশূন্য। যারা ক্লাসে হিজাব পরে আসবে তাদের প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপনা) আমি নেবো না। যাদেরকে আমার ভাল লাগে না তাদেরকে আমি ক্লাসে কথাও বলতে দেবো না। এমনকি তাদেরকে শ্রেণীকক্ষের অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলেন তিনি। ওই ছাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, যে মেয়েরা হিজাব পরে তারা ক্ষেত, প্যাকেটের মতো মোড়ানো, তাদের মধ্যে কোন আধুনিকতা নেই। এসব মেয়েদের ক্লাস নেবে তেঁতুল হুজুররা। আমি যাদের পড়াবো তাদেরকে সালোয়ার কামিজ অথবা শাড়ি পরে আসতে হবে। এটা আমার ক্লাস, এখানে শুধুই আমার কর্তৃত্ব। ওই শিক্ষক এ ধরনের মন্তব্য করলে হিজাব পরা ছাত্রীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের পর্দা করার স্বাধীনতা আছে। তাই বলে আপনি আমাদেরকে অন্য পোশাক পরে আসতে বাধ্য করতে পারেন না। তাদের এই কথায় অধ্যাপক খুরশিদা বেগম আরও রাগান্বিত হয়ে সন্ধ্যায় ওই ছাত্রীদের রুমে ডেকে নিয়ে আবারও হিজাবের সমালোচনা করেন। তিনি এসব ছাত্রীকে সালোয়ার কামিজ অথবা শাড়ি পরার জন্য পরামর্শ দেন। এ নিয়ে তোলপাড় হলে গতকাল বুধবার তিনি ওই শিক্ষার্থীদেরকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন বলে সূত্র জানায়। অধ্যাপক খুরশিদার এমন আচরণের বিষয়ে এক ছাত্রী বলেন, আমরা ধর্ম পালন না করলেও তার যেমন কিছু করার নেই তেমনি আমরা ধর্ম পালন করলেও তার কিছুই করার কথা নয়। কারণ ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। এ বিষয়ে অধ্যাপক খুরশিদা বেগমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরে কথা বলবো। ঘটনার বিষয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপিকা খুরশিদার যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল তা শিক্ষার্থীরা মিটিয়ে নিয়েছে। এরপর তৃতীয় ব্যক্তি ম্যাডামের ফোনে বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন করে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে ক্ষুদে বার্তাও পাঠিয়েছে। অধ্যাপিকা খুরশিদাকে হত্যার হুমকির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগের সভাপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে এবং তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও তার হত্যার হুমকির নিন্দা জানিয়েছে বলে জানান তিনি। উৎসঃ manabzamin Share on facebook Share on email Share on print 1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন