শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


অপরাধ দমনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট
07 Feb, 2014 পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী এবার অপরাধ দমনে পুলিশের আলাদা ডিভিশন চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া শিগগিরই পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (পিবিসিটি) কার্যক্রমও শুরু হতে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি পুলিশ আইন ২০১৩ নিয়েও কাজ চলছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ঘোষণা করতে পারেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ জঙ্গিবাদ নির্মূলে পৃথক ডিভিশন প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ-সুবিধা পাবে। থাকবে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা আলাদা ডিভিশন ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (পিবিসিটি) গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আগামী ৪-৭ মার্চ পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তবে এই তারিখের মধ্যে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত না হলে ১৫ মার্চের মধ্যে তা অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বিগত বছরে পুলিশের ব্যর্থতা-সাফল্য মূল্যায়ন করা হবে। পুলিশ সপ্তাহের সম্ভাব্য তারিখ ৪ থেকে ৭ মার্চ। আবার তারিখ পেছানোও হতে পারে। তারপরও সফলভাবে সম্পন্ন করতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে পুলিশ। দেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ চিরতরে নির্মূল করতে চায় সরকার। সেই আলোকে আমরা অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ সপ্তাহকে সামনে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিপিএম-পিপিএম পদক নির্বাচনসহ পুলিশের কাজে আরও গতি আনতে এবং সরকারের কাছে পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয় কি কি দাবি উত্থাপন হতে পারে তা নিয়ে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। তবে এবারের পুলিশের মূল দাবি হচ্ছে- অপরাধ দমনে পুলিশের আলাদা ডিভিশন করা। এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশের প্রথম দাবিটি প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন এবং পুলিশ সপ্তাহে তা ঘোষণা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের উজ্জীবিত করতে পারেন তিনি। তাছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট চালু ও পুলিশ আইন ২০১৩ ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র আরও জানায়, অন্যান্য বছরের মতো এবার পুলিশ সপ্তাহ নিয়ে তোড়জোড় চলছে। অনুষ্ঠানটি জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলতে পুলিশ কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন। নিজেদের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে একাধিকবার। তাছাড়া ভালো কাজের স্বীকৃতস্বরূপ বিপিএম-পিপিএম পদক দেয়ারও তালিকা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে নানা সমস্যা সমাধানের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। কিছুদিন আগে নতুন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে পুলিশ ডিভিশন যাতে করা হয় সেই জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। এ সময় মন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন, তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। পুলিশ ডিভিশন করা হলে অপরাধ দমনসহ অন্য ইস্যুগুলো নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে পুলিশ সদস্যরা। তাছাড়া তাদের কাজে আরও গতি আসবে। বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ডিভিশন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা দাবিটি ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী তা ঘোষণা করতে পারেন। তিনি বলেন, এছাড়া ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম ও পুলিশ আইন-২০১৩ এর খসড়া প্রস্তুত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এলজিআরডি ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজের সুবিধার্থে ডিভিশন রয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগে কাজে গতি পেয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পুলিশের জন্য পৃথক বিভাগ করা হলে সেবার মান আরও বাড়বে। এতে কমার কোনো সুযোগ নেই বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন। দেশে ১৬ কোটি মানুষের বিপরীতে মাত্র এক লাখ ৫৪ হাজার পুলিশ রয়েছে। পিবিসিটি গঠন নিয়ে তোড়জোড় : সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, সীতাকুণ্ড, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস ও নাশকতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ‘পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম’-পিবিসিটি নামে পুলিশের বিশেষ ইউনিট গঠনের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচ বছর আগে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই ধরনের একটি ইউনিট গঠনের কাজ শুরু হলেও তা তেমনটা এগোয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্তটি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ এসেছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। ২০০৯ সালে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের জন্য তিন হাজার পদ সৃজনের প্রস্তাব যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় তা কমিয়ে এক হাজার নির্ধারণ করে। সেই এক হাজার পদ সৃজন করে পুলিশের নতুন ইউনিট গঠনের কাজও ঝিমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, সীতাকুণ্ড, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ায় সরকার পুলিশকে আরও যুগোপযোগী করতে চায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (নাইন-ইলেভেন) পর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিশেষায়িত বাহিনী গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত হলে জাতিসংঘ এ দেশেও পুলিশ বিভাগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আদলে একটি বিশেষ ইউনিট গঠনের তাগিদ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ২০০৯ সালে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগাীম পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশকে আরও কি কি সুবিধা দেয়া যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা চলছে। তাছাড়া পদক নিয়ে যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারেন সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে এবার। পুলিশ আইন-২০১৩ : পুলিশের জন্য নিজস্ব আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সর্বশেষ সংযোজন বিয়োজনের পর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে এই আইনের যাচাই-বাছাই চলছে। পদস্থ কর্মকর্তারা মনে করছেন এই আইন বাস্তবায়ন হলে পুলিশের কাজে আরও গতি আসবে। বর্তমানে পিবিসিটি ও পুলিশ আইন-২০১৩ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উৎসঃ jugantor Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন