রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


সরেজমিন সাতক্ষীরা-২ : বুলডোজারে পিষ্ট এক ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত’ জনপদ : শত শত বাড়িঘরে আগুন লুটপাট এরশাদুল বারী সাতক্ষীরা থেকে ফিরে
114 পরের সংবাদ» গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাত্ করেই কিছু লোকজন এসে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১০ নম্বর আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের কাশেমপুর গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের (৪৫) দোতলা বাড়ির দরজা-জানালা ভাংচুর শুরু করে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা বিধ্বংসী বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় দোতলা বাড়ির ছাদ, বেলকুনি ও নিচের বারান্দা। ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর ও মালামাল লুট করা হয়। ঘটনার ১৬ দিন পর ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে কলম ও নোট-প্যাড হাতে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া সাদা পোশাকধারী ৭-৮ জন লোক ওই বিধ্বস্ত বাড়িতে আসেন। এরপর ছবি তোলার নাম করে গল্প করার এক পর্যায়ে আনোয়ারুলকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওইদিন দুপুর ১টার দিকে উপজেলার শিকড়ী এলাকার একটি ফাঁকা মাঠে আনোয়ারুলের লাশ পাওয়া যায়। নিহত আনোয়ারুল ইসলাম ১০ নম্বর আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা। গত বছরের এপ্রিল মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত করে। নিহত আনোয়ারুলের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় যৌথবাহিনীর লোকজন এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে আনোয়ারুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাশিমপুর গ্রামের বিধ্বস্ত ওই দোতলা বাড়ির সামনেই আনোয়ারুলকে কবর দেয়া হয়েছে। আনোয়ারুলের মতোই গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাতক্ষীরা জেলা সদরসহ শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা, আশাশুনি, তালা ও কলারোয়া উপজেলার বিএনপি, ছাত্রদল, জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, আসবাবপত্র লুটপাট করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬০-৭০টি বাড়ি-ঘর বুলড্রোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে এ ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, যৌথবাহিনীর উপস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ ধ্বংসযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়েছে। সাতক্ষীরা জেলার বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাড়িঘর ঘুরে ও ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘরের লোকজন দিনের বেলায় বাড়ি-ঘর দেখাশোনা করলেও সন্ধ্যা নামলেই তারা সেখানে আর থাকছেন না। যৌথবাহিনীর আতঙ্কে তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকছেন অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, ওই সময় সাতক্ষীরার পরিস্থিতি চরম খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তবে তিনি হত্যা, বাড়িঘরে, হামলা-ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত নয় দাবি করে বলেন, এগুলো যা ঘটছে তা যৌথবাহিনীই করছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি ৮০ ভাগ স্বাভাবিক বলে তিনি জানান। তবে আওয়ামী লীগের নেতার ওই বক্তব্য মানতে নারাজ সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল করিম। তিনি জানান, বাড়ি-ঘরে, হামলা-ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে কিনা আমার জানা নেই। তবে গত দুই মাসে মাত্র কয়েকটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন মারা গেলেও এগুলো ‘আইনগতভাবেই’ হয়েছে বলে তিনি জানান। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার চিত্র বলতে যা বোঝায় তার অনেক নিদর্শনই এখন বিদ্যমান দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলাতে। জেলা সদর থেকে শুরু করে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের অন্ততপক্ষে দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে এসব বাড়ি-ঘর ভাংচুর, অসিংযোগ, লুটপাট ও বুলড্রোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এসব ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে রাতের মধ্যভাগে অথবা শেষ রাতে-অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর অভিযোগ, হামলার সময় নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও রেহাই পায়নি। পুড়িয়ে দেয়া হয় দোকানপাট, বাড়ির ধান-চাল, কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র ও হাঁস-মুরগি। রক্ষা পায়নি পবিত্র কোরআন, হাদিস শরিফ, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার বই-পুস্তক। তবে শুধু বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরেই যে হামলা-ভাংচুর হয়েছে তা নয়। একই ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও। এক্ষেত্রে দায় চাপানো হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপরেই। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশলীয়া, গোবিন্দপুর ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা অর্ধশতাধিক বসত-বাড়ি ও দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। এসব ধ্বংসকাণ্ডে ৫টি হিন্দুর দোকানও পুড়ে যায়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়। অগ্নিসংযোগের সময় এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের কোনো সদস্যকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনও এ হামলা থেকে রেহাই পায়নি। গত ১৬ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার দেবহাটায় সুনিতি কুমারের বাড়িতে আগুন দিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবদুল গফফারকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। এছাড়া কালিগঞ্জে সুশান্ত, বিশ্বজিত্, গোপাল ও প্রদীপসহ ৭-৮ জন হিন্দু লোকের বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রতিনিয়ত এসব হামলার ঘটনা ঘটলেও গণমাধ্যমে তা সঠিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে খুব কমই। প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার কোনো মিল নেই। এজন্য গণমাধ্যমের প্রতি তাদের অনেকটা ক্ষোভও লক্ষ্য করা গেছে। সাতক্ষীরা জেলা সদরসহ জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা, আশাশুনি, তালা ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যৌথবাহিনীর হাতে ২০ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। সরকার দলীয় স্থানীয় লোকজন ও যৌথবাহিনীর এসব ধ্বংসযজ্ঞ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাতক্ষীরা জুড়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। যৌথবাহিনী দেখলেই মানুষ পালিয়ে থাকছে। ভয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা এখন পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নারী-শিশু ও বৃদ্ধরাও। জনগনের ভোটে নির্বাচিত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। কাউকে আটক করা হলেই তাকে হয় হত্যা নয় পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। যৌথবাহিনীর ভয়ে এখানে পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাত শুরু হলেই আতঙ্কে বিভিন্ন স্থানে চলে যায় নারীরাও। বুলডোজারে পিষ্ট বাড়ি-ঘর সাতক্ষীরা সদরসহ ৭টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে ও ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর শুরু হলেও সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটে পরের দিন বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরে। সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আলীপুর ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি ডা. আনিছুর রহমান ও তার ভাই সীমান্ত আদর্শ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের বাড়ির কয়েকটি ঘর ও বাড়ির সামনে বারান্দা, টিনের চালা বিধ্বস্ত অবস্থায় পরে আছে। স্থানীয়দের কথা বললে তারা জানায়, ১৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশে যৌথবাহিনীর লোকজন এ ভাংচুর চালায়। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল বুলড্রোজার। বাড়ির সামনের বারান্দা, হাস-মুরগি ও গরুর খামার গুড়িয়ে দেয়া হয়। ঘটনার সময় আনিছুর রহমান ও আজিজুর রহমান বাড়িতে না থাকলেও পরিবারের কয়েকজন সদস্য ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পাশের বাড়ির প্রতিবেশী ও সম্পর্কে ভাতিজা আনোয়ার ইসলাম জানান, ওই রাতে যৌথবাহিনীর লোকজন এসে তাদের দুই ভাইয়ের বাড়িঘরে হামলা ও আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তারা বিএনপি করে জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছে। প্রতিবেশী বকুল ইসলাম জানান, যৌথবাহিনী বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘর গুড়িয়ে দেয়ার পর থেকেই ভয়ে তারা আর বাড়িতে আসেনি। পালিয়ে থাকছে। পরিবারের কেউ মাঝে মাঝে এলেও একটু দেখাশোনা করেই চলে যায়। একইদিন একই গ্রামের বিএনপি নেতা রেজাউল সানার ওপর হামলা ও তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় হামলাকারীদের হাতে রামদা, চাইনিজ কুড়াল ছিল। রেজাউল সানার বাবা নুর আলী সানার। এরআগে একইদিন রাত ১০টার দিকে আলীপুর ইউনিয়নের জামায়াতের নেতা ও মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা শফিকুল ইসলামের বাড়িঘরে দুই ঘণ্টা ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। প্রতিবেশীরা জানায়, হামলার সময় বুলডোজার ও যৌথবাহিনীর লোকজন উপস্থিত ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বিশিষ্ট ইটের ওই দালান ঘর বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়িতে কোনো কাকপক্ষীও নেই। বাড়ির সামনেই বুলডোজারের চাকার চিহ্নিত এখনও বিদ্যমান। শফিকুল ইসলামের প্রতিবেশী শফিউল আযম জানান, ১৬ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে যৌথবাহিনী ওই বাড়িতে হানা দেয়। প্রথমে তারা বাড়িটিকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তিন বিঘা জমিজুড়ে ওই বাড়ির পুরোটাই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় তারা। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। আশপাশের লোকজন বাড়িঘর ছেলে পালিয়ে যায়। আমাদের বাচ্চচারা আতঙ্কে চিত্কার দিয়ে ওঠে। রেজাউল সানার বাবা নুর আলী সানার জানান, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগের নেতারা ওই হামলা চালিয়েছে। তারা বাড়িঘরে আগুন দিয়ে ঘরের সম্পদ ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। রাজনীতি করাই ওর অপরাধ হয়েছে। একইদিন ১৬ ডিসেম্বর সোমবার ভোর ৫টায় দিকে হঠাত্ গাড়ি আর বুলডোজারের শব্দে ঘুম ভাঙে খলিলনগরের বাসিন্দাদের। এরপর তারা ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখে পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে যৌথবাহিনী। সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ছিল। এরপর বুলডোজার দিয়ে হামলা চালানো হয় সাবেক সংসদ সদস্য ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেকের দোতলার বাড়িতে। এ সময় বাড়িতে মাওলানাকে না পেয়ে তার দোতলা ভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। আবদুল খালেক জানান, বুলডোজারের আঘাতে দোতলা ভবনটি এক পাশে হেলে পড়ে। এ সময় বাড়ির দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর, বৈঠকখানা, গরুর গোয়াল, গাড়ি পার্কিংয়ের ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম ও আসবাবপত্র ভাংচুর ও ১২ ভরি সোনার গহনাসহ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আমি ওই সময় বাড়িতে ছিলাম না। বাড়ির কাজের লোকজন যারা ছিল তারাও ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। ওই সময় হামলার ঘটনা নিজ চোখে দেখেছেন এমন প্রত্যক্ষদর্শী হোসনে আরা জানান, যৌথবাহিনী দুই দফায় এসে এমপি সাহেবের বাড়িঘর ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ওই সময় এমপির এক মেয়ে বাড়িতে ছিল। সে অবস্থা দেখে আতঙ্কে দৌড়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এছাড়া ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি নুরুল হুদা, সাতক্ষীরা (পশ্চিম) সদর থানা আমির মাওলানা আবদুল গফ্ফার, সেক্রেটারি মাওলানা শাহাদাত্ হোসেন, কালিগঞ্জ উপজেলার কুশলিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের রহমত আলী তরফদার, লাল্টু তরফদার, বাবলু তরফদার, টুলু তরফদার, মাওলানা মোবারক আলী, মিজানুর রহমান তরফদার, মুর্শিদ আলী, ওয়াহেদ আলী, সাদেক আলী, মোন্তেজ আলী, বাসেদ আলী, জামাল তরফদার, মো. শেখ আবদুস সাত্তার, আবদুল ওহায়েদ বখস্, মো. আশরাফুল ইসলাম, সিদ্দিক তরফদার, মো. ওমর ফারুক, শেখ করিম বখস্ ও রবিউল ইসলাম, একই উপজেলার একই ইউনিয়নের ভদ্রখালী গ্রামের মাওলানা আবদুর রহমান, আবদুস সোবহান গাজী, বেলায়েত আলী মোড়ল, সামছুর গাজী, আমিনুর রহমান, আবুল বাশার, আরিফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, সুরাত আলী গাজী, দাউদ আলী গাজী, আবদুল গফুর, হাফিজুল ইসলাম, রেজাউল করীম, বুলবুল আহমেদ, আমির আলী কলু, নজরুল ইসলাম, ওমর ফারুক ও সিরাজুল ইসলাম, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী গ্রামের মাওলানা বাহারুল ইসলাম, শেখ মোশাররফ হোসেন, শেখ সাইফুল ইসলাম, সামছুল আলম, সাইফুল ইসলাম মিন্টু, শুশান্ত সরকার, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবুল কালাম আজাদ, জাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মুকুল, ময়না, আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম, হুদা, দাউদ আলী, শেখ সাঈদ হোসেন, মোতালেব হোসেন, আবদুর রব, আনারুল ইসলাম, ইব্রাহিম হোসেন, মিজানুর রহমান, মাহমুদ আলী, গোপাল সরকার, পরিমল, প্রদীপ, হোগলা গ্রামের মাহবুব ও আজিজুল ইসলাম, মকুন্দপুর গ্রামের আলী ঢালী, আমজেদ আলী ঢালী, আবদুুস সামাদ ঢালী ও আবদুল মাজেদ ঢালী, বিষ্ণুপুর বাজারের নিটন ও শাহীন, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেনের বাড়ি। এছাড়া জ্বালিয়ে দেয়া হয় কালীগঞ্জে জামায়াত নেতা ক্বারী মোসলেম উদ্দিনের বাড়ি, গোয়ালঘর, রান্নাঘর, ধান ভাঙানোর মিল, বিএনপি নেতা মোকসেদ আলীর ঘর, আমীর আলীর পাকাঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, দাউদ আলী গাজীর বাড়িতে, রেজাউল করিমের ঘর, সামসুল গাজীর ঘর, বেলায়েত আলী গাজীর ঘর, পোলট্রি খামার, সোবহান গাজীর বসতঘর ও রান্নাঘর, হাজি হাফিজুর রহমানের রান্নাঘরে, বুলবুল আহমেদের বসতবাড়িতে, আবদুল গফুরের বসতবাড়ি, জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুর রহমানের গোলায়ঘরে, সুরুজ আলী গাজীর রান্নাঘর, বনি আমিনের টিন সেটের কাঁচাঘর, মহিউদ্দিন গাজীর বসতঘর, মোহাম্মাদ আলী ভদ্রখালির বাড়িত, মোজাম্মেল হকের বাড়িত, আবদুল হান্নানের বাড়িতে, মিজানুর রহমানের বাড়িসহ বিএনপি-জামায়াতের ৭৩ নেতাকর্মীর বাড়ি ও দোকান। শুধু বিষ্ণুপুরের চৌমুহনী বাজারেই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অর্ধশতাধিক দোকান। অনেক জায়গায় ধান-চাল, কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্র, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি খোয়ারেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়। অভিযোগ রয়েছে, এসব হামলা থেকে হিন্দু সম্প্র্রদায়ের লোকজনও রেহাই পাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, তারা হিন্দু হয়েও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কারণেই তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন