শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড : দেশ এখন আতঙ্কের জনপদ
14 Feb, 2014 বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একেবারে নতুন নয়। অতীতেও কিছু না কিছু হয়েছে এবং সরকারের প্রশ্রয়ে বা সম্মতিতেই। তবে তখন এতোটা ব্যাপকতা ছিলো না হয়তো। তাতে উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিলো, মাত্রাও ছিলো সীমিত। অতীতে দেখা গেছে, কোনো সরকার হয়তো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছেন অপরাধীদের দমনের শেষ চেষ্টা হিসেবে। আবার পরবর্তী সরকার এ কাজ করেছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য। অন্য সরকার আবার ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উস্কে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় এর মাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে জনমনে আতঙ্কের মাত্রাও অনেক। বিশেষ করে যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে রয়েছেন তাদের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন মহা-আতঙ্কে। শুধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীই নন, সাধারণ নিরীহ মানুষেরও এখন একই অবস্থা। জীবনের নিরাপত্তা যাদের হাতে সেই নিরাপত্তা বাহিনীই এখন সাধারণ জনগণের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন তাদের হাতে যে কোনো কিছু করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সেই থেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলছেন, অপরাধ দমন যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনি অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে আইনি সুবিধা দেওয়াও সরকারেরই দায়িত্ব। কারণ, আমাদের সংবিধান দেশের প্রতিটি নাগরিকের একই ধরনের সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। কিন্তু এখন যা চলছে তা সংবিধান বা এসব অধিকার থেকে অনেক দূরে। ভিন্নমত পোষণকারীদের ব্যাপারে বর্তমান সরকার চরম বিমাতাসুলভ আচরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জনপদে খালি হচ্ছে কোনো মায়ের বুক। সন্তান ঘর থেকে বের হওয়ার পর নিরাপদে ফিরে আসবে কী-না তা নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয় অভিভাবকদের। খুন-গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছেই। সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কঠোর হওয়ার ভাষাই যখন কঠোর হয়, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আর কী করার থাকে; “কর্তার ইচ্ছায় কর্ম” করতেই হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নাগরিক অধিকার দূরের কথা সাধারণ মানবতাবোধের কথাটাও ভুলে গেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে চট্টগ্রামের সংবাদ পরিবেশিত হয়। এতে বলা হয়, টানা একমাস ধরে চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী পাহাড়তলী বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি লাশ পড়ে আছে। অজ্ঞাত যুবকের লাশটি পচে গলে দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ ভারী করে তুললেও মন ভারী করতে পারেনি স্থানীয় পাহাড়তলী ও হালিশহর থানা পুলিশের। দুই থানার সীমানায় হওয়ায় লাশটি উদ্ধার করতে আসেনি পুলিশ। এলাকাবাসীর ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলেও ঝামেলা এড়ানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মানব সন্তানের লাশ এভাবে চোখের সামনে পচে গলে যাওয়া মানবতার স্তর বর্তমানে কতো নিচে নেমেছে এরই মাত্রা নির্দেশ করে! স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, শার্ট প্যান্ট পরা যুবকের লাশটি সাগরের পানিতে ভেসে আসার পর চরে আটকা পড়ে। পুলিশকে খবর দেওয়ার পরও পুলিশ আসেনি। স্থানীয় সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওই এলাকা পাহাড়তলী থানার অধীনে। তাই লাশ উদ্ধার করার দায়িত্ব তাদের। পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আজিজুর রহমান মিয়ার সাথেও স্থানীয় সাংবাদিকরা যোগাযোগ করেন। কে এম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, জায়গাটি আমাদের এলাকার মধ্যে পড়েনি। তারপরও দেখি কি করা যায়। এ রকমের অজ্ঞাত লাশ প্রতিনিয়তই উদ্ধার হচ্ছে এবং এর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর শেষ কোথায় এখনো কেউ জানে না। চট্টগ্রামের দক্ষিণ কাট্টলীতে পড়ে থাকা যুবকটি শুধু তাঁর বাঁচার অধিকার হারায়নি, মৃত্যুর পর নিজ ধর্মীয় নিয়মে সৎকারও ভাগ্যে জোটেনি। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের সময় এ রকমের অনেক বেওয়ারিশ লাশ নদী দিয়ে ভেসে যেতে দেখা যেতো। এখন তো আর মুক্তিযুদ্ধের সময় নয়? বর্তমানে সংবাদ মাধ্যমের সুবাদে অসংখ্য অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ প্রতিদিনই দেশবাসী পেয়ে থাকে। আবার প্রতিদিনই নিখোঁজ হচ্ছেন কেউ না কেউ। গুম হওয়ার কিছুদিন পর কোনো কোনো পরিবারের ভাগ্যে লাশ মিলে। আবার চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীর মতো কারো কারো লাশও মিলছে না। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, একটি স্বাধীন দেশের জন্য এ অবস্থা কতখানি কাক্সিক্ষত? শাসক দল ও যারা ক্ষমতার বাইরে রয়েছে তারা কি বিষয়টিকে স্বজনহারা পরিবারের মতো করে দেখছে? দেশের নাগরিকের বাঁচার অধিকার নষ্ট হলে রাষ্ট্র নিরাপত্তায় কোনো অসুবিধা হয় কী-না? এ প্রশ্নও এখন সামনে এসেছে। মাদারীপুরে নিখোঁজের ৫ দিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি শামীম সর্দার (১৬) নামে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত শামীম পাঠককান্দি এলাকার মৃত বাবুল সর্দারের ছেলে। পুলিশের তাড়া খেয়ে পানিতে ডুবে শামীম মারা গেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হলেও মা ইয়াসমীন আক্তার অভিযোগ করেন, পুলিশ পিটিয়ে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোফাজ্জেল হোসেন পরিবারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন। অপরদিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা (পূর্ব) বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চট্টগ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। ওই দিন ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম জেলার কাটগড় এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভিন আক্তার অভিযোগ করে বলেছেন, ঘটনার দিন ভোরে কাটগড় এলাকার আত্মীয়ের বাসায় কালো পোশাকধারী ৬-৮ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঢুকে তাকে র‌্যাব-৭ এর একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিনই দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ওমর ফারুকের শ্যালিকা সাবরিনা সুলতানা তার দুলাভাইকে চট্টগ্রাম জেলার পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকার বাসা থেকে ধরে নেওয়ার খবর জানান। এ অভিযোগের ব্যাপারে র‌্যাব-৭ এর মিসবাহ আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ওমর ফারুক নামে কাউকে তারা আটক কিংবা গ্রেফতার করেননি। লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ইকবাল হোসেন এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। এ ধরনের অনেক ঘটনার তথ্য তুলে ধরা যাবে। এভাবে রাজনৈতিক দলের নেতা, স্কুল ছাত্র, মসজিদের ইমাম, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা থেকে শুরু করে খুন, গুমের শিকার হচ্ছে। বলা যায় একটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এতে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে দফায় দফায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আর ভয় আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা রয়েছে মহা-আতঙ্কে। কখন কার কী হয়ে যায় তা কেউই বলতে পারছেন না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু স্বাধীনতার পর থেকে বলা যায় প্রায় প্রতিটি সরকারের আমলেই কম-বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- হয়েছে। যারা ক্ষমতার বাইরে ছিলেন তারা এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে ক্ষমতায় যারা ছিলেন কোনো ধরনের সমালোচনায় কর্ণপাত করেননি। আবার সমালোচনাকারীরা যখন ক্ষমতায় এসেছেন তারাও একই কাজ করছেন। ফলে এটি স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সিরাজ শিকদার হত্যাকা- ওই সময় খুবই আলোচিত ছিল। ওই সরকারের বিরুদ্ধে জাসদের হাজার হাজার কর্মী হত্যার অভিযোগ ওঠেছিল। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা--এর অভিযোগ থেকে মুক্তি পায়নি পরবর্র্র্তী সরকারগুলোও। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- আর সেই পর্যায়ে নেই। ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট ও ক্রসফায়ার’ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। চেয়ারে বসেই তিনি তার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে নেন সন্ত্রাস দমনকে। কারণ, আগের আওয়ামী লীগ আমলে সন্ত্রাস বহুল আলোচিত একটি ইস্যু ছিলো। খালেদা জিয়া মনে করছিলেন, জনগণ তাকে সন্ত্রাস নির্মূলের দায়িত্ব দিয়েছে। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারলে জনগণ তাকে আবারো ক্ষমতায় আনবে। কিন্তু, তিনি এ কাজের জন্য দলের কোনো মন্ত্রী-নেতা বা পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারলেন না। তৎকালীন শীর্ষ পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করলেন এবং তাদের সাহায্য চাইলেন। সেনা কর্মকর্তারা তাকে বললেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রকৃতই ব্যবস্থা নিতে গেলে আপনার দলই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এ কাজের জন্য সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাতেই পুরোপুরি রাজি হলেন। সবাইকে ঘুমে রেখে সেনাবাহিনী ওই রাতেই অভিযানে নামলো। পুলিশের কাছে থাকা তালিকা অনুযায়ী হানা দিয়ে প্রচুর লোককে গ্রেফতার করলো। এর নাম দেয়া হয়েছিলো “অপারেশন ক্লিনহার্ট”। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযানের শিকার হলো তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। বিএনপির সিনিয়র নেতারা পর্যন্ত এতে বেগম জিয়ার ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। তারা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে এর সমালোচনা করলেন। কিন্তু থামলেন না খালেদা জিয়া। অনেক সন্ত্রাসী গ্রেফতার হলো, অনেক দেশ ছেড়ে পালালো। সন্ত্রাসী গ্রেফতার করা হলেও আবার আইনের ফাঁক গলিয়ে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছিলো। আর তাই ভিন্ন চিন্তা করা হলো। এ সময়ই ‘ক্রসফায়ার’ শব্দটি প্রথম আবিষ্কৃত হলো। শুরুতে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের ধরে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছিল। ফলে দেশের শান্তিকামী মানুষ এ অভিযানকে স্বাগতও জানিয়েছিল। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল “অপারেশন ক্লিনহার্ট”। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা ও কর্মী ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় সমালোচনা শুরু হয় অভিযান নিয়ে। তবে ওই সময়ে “অপারেশন ক্লিনহার্ট” নামের যৌথ অভিযানের একটি ভিন্নতা ছিল। সন্ত্রাসী ক্ষমতাসীন দলের হলেও রক্ষা পায়নি অভিযান থেকে। যে কারণে সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ পেয়েছিলো অভিযানটি। আর তাই বেগম খালেদা জিয়াও উৎসাহিত হলেন। এদিকে সেনাবাহিনীকে দীর্ঘদিন মাঠেও রাখা যাবে না। কী করা যায় এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চললো। সেনা কর্মকর্তারা বেগম জিয়াকে পরামর্শ দিলেন সেনা ও পুলিশের সমন্বয়ে পৃথক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গঠনের। খালেদা জিয়া তাতে রাজি হলেন। আবির্ভূত হলো ‘র‌্যাব’ নামের ভিন্ন একটি বাহিনী। এই র‌্যাবের হাত দিয়েই মূলত ‘ক্রসফায়ার’ শব্দটি বেশ পরিচিতি পায়। তৎকালীন বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এই ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে ছিলো বেশ সোচ্চার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এর সমালোচনা করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এও বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে র‌্যাবের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু যতই সমালোচনা হোক, র‌্যাব তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছিলো। সেটা সম্ভব হয়েছিলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার কারণেই। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে বাকি সব ক্ষেত্রেই যাদের বিরুদ্ধে তখন অভিযান পরিচালিত হয়েছিলো এরা ছিলো চিহ্নিত, দাগী সন্ত্রাসী। ওই সময় সন্ত্রাসীদের মধ্যে একটা ত্রাসও সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলো র‌্যাব। যে কারণে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিলো যে, সন্ত্রাসীরা অবাধে বিচরণের চেয়ে জেলে আটকে থাকাকে নিরাপদ মনে করতো। চারদলীয় জোট ও বর্তমান সরকারের যৌথ অভিযানের ভিন্নতা এ সরকারের আমলের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে। একই বিষয়ে অভিযোগ করছে জামায়াতে ইসলামীও। কিন্তু এসব অভিযোগে সরকারের কোনো পাত্তা নেই। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০০ দলীয় নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই সরকারি বাহিনীর হাতে নিহত হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বিএনপির নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদিনই বিএনপির পক্ষ থেকে “বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-” বন্ধের দাবি তোলা হচ্ছে। খুন ও গুম থেকে দেশকে রক্ষার দাবিও তোলা হচ্ছে, কিন্তু সরকার আপাতত এসবে কান দিচ্ছেন না। চারদলীয় জোট সরকারের সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হতো সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য। কিন্তু এখন যৌথ অভিযানে উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী ধরা পড়ছে না। বর্তমানে যৌথ বাহিনী প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদেরই ধরছে শুধু। কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে হত্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যেসব জেলার নেতাকর্মী রাজপথে বেশি সক্রিয় ছিলেন ওই সব এলাকার নেতাকর্মীদের উপরই বেশি হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপি ও জামায়াতের। তারা বলছেন, সরকার একদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে জেল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে অন্য দিকে যৌথ অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির পর যেসব লোক “বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-”-এর শিকার হয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া অন্য কোনো পরিচয় নেই। ফলে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। যা বলছে সরকারি দল সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে ১৯ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করেছেন তাকে মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি গত ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ধানম-িস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে বিএনপি বা তার জোটের কোনো মানুষ মারা যায়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হচ্ছে না। যারা নিহত হচ্ছে তারা সন্ত্রাসী। ‘অধিকার’ এর প্রতিবেদন মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলছে, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন। ২ ফেব্রুয়ারি শনিবার সংস্থাটির মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের তথ্যও দেয়া হয়েছে এ প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনের পর যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। অধিকার’র তথ্যমতে, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হন ৩৯ জন। সংস্থার হিসাব মতে, ২৭ জানুয়ারি ভোরে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম (২৮) যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। ২৬ জানুয়ারি আজহারুল ইসলামকে ঘোনা এলাকার একটি চিংড়ি ঘের থেকে আটক করে যৌথবাহিনী। আজহারুল ইসলামের স্ত্রী কামিনী পারভিন চম্পা জানান, তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তার শাশুড়ি ও শিশু সন্তান নিয়ে সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তালা থানার গেটে দাঁড়িয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১২টায় তাদেরকে থানার গেট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর ৭-৮টি পুলিশের গাড়ি থানার সামনে আসে এবং তার স্বামীকে নিয়ে চলে যায়। সকালে তারা জানতে পারেন, ভোর রাতে মাগুরা খেয়াঘাট এলাকায় তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তৎকালীন এমপি (বর্তমান সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী) আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনার আসামি ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমানের (২৬) লাশ গত ২০ জানুয়ারি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাইপাস সড়কের নাড়িয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। আতিকুরের বড় ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনার পর থেকে আতিকুর পলাতক ছিল। ১৩ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলা সদরের শাফিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের পাশের একটি বাড়ি থেকে আতিকুর ও একই গ্রামের মহিদুলকে (২৬) গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা আটক করে বলে জানতে পারেন। কিন্তু থানা পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও তারা আতিকুরের অবস্থান জানতে পারেননি। এর ২দিন আগে গত ১৮ জানুয়ারি আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার অন্যতম আসামি নীলফামারী জেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর লাশ উদ্ধার করে নীলফামারী থানা পুলিশ। গোলাম রাব্বানীর আত্মীয়রা অভিযোগ করেন, র‌্যাব রব্বানীকে তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং কয়েক দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। গত ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। এদিন আনুমানিক বিকাল ৩টায় মেহেরপুর শহরের ইসলামী ব্যাংক ভবন থেকে গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে। অধিকার’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এই হত্যাকা-গুলো র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি এবং যৌথবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর নীলফামারীতে তৎকালীন এমপি আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহর রামগঞ্জ ব্রিজের সামনে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের কেটে দেয়া রাস্তায় আটকে যায়। এ সময় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় ৪ জন আওয়ামী লীগের কর্মী ও একজন জামায়াতের কর্মী নিহত হন। এদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ফলে নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ২০ জন ক্রসফায়ারে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে র‌্যাব কর্তৃক দু’জন, পুলিশ কর্তৃক ১০ জন এবং যৌথবাহিনী কর্তৃক আট জন ক্রসফায়ার-এ নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ১৮ জন গুলিতে নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে র‌্যাবের হাতে দু’জন, পুলিশের হাতে ১২ জন, বিজিবি’র হাতে একজন এবং যৌথবাহিনীর গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিহত ৩৯ জনের মধ্যে বিজিবি একজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ১১ জন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের সদস্য, ১৫ জন জামায়াত-শিবিরের সদস্য, একজন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সদস্য, একজন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) সদস্য, ১০ জন কথিত অপরাধী বলে জানা গেছে এবং একজনের পেশা জানা যায়নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্র গেল বছর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি চরম উদ্বেগজনক ছিল বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ২০১৩ সালে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র সম্প্রতি একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। বছরব্যাপী ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে দেশে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের উত্থান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি পালনের সময় বিভিন্ন স্থানে ২৫ জন মারা গেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অপেক্ষাকৃত নতুন সংযোজন গুম বা গুপ্তহত্যা। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোয় গুম বিষয়ে প্রকাশিত খবরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ৫৩ জন। এর মধ্যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৩ জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে মাত্র ২ জন মুক্তি পেয়েছেন এবং বাকিদের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হন মোট ৭২ জন। এর মধ্যে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ২৪ জন, পুলিশের ক্রসফায়ারে ১৭ জন, বিজিবি’র ক্রসফায়ারে ১জন, পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ২৬ জন এবং র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ নির্যাতনে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ, ক্ষমতাসীন দলের সাথে বিরোধীদল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ মোট প্রায় ৮৪৮টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব রাজনৈতিক সংঘাতে মোট ৫০৭ জন নিহত এবং প্রায় ২২, ৪০৭ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে ১৫ জন পুলিশ সদস্য ও দুইজন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। এছাড়া ২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে এ প্রতিবেদন পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের ডাকে লাগাতার রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকা অবরোধ এবং পরে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশকে ঘিরে ওইদিন দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতায় একজন পুলিশসহ মোট ২২ জন নিহত হয়। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সমাবেশস্থলে অবস্থান নেয়ার ঘোষণায় তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গভীর রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি, পিপার স্প্রে, ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন ৬ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের বিভিন্ন এলাকায় এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও বাগেরহাটে হেফাজত কর্মীদের সাথে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবির সংঘর্ষে ২৭ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ, বিজিবির দুজন, সেনাবাহিনীর একজন এবং কয়েকজন হেফাজতের কর্মীসহ সাধারণ মানুষও রয়েছেন বলে আসকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। বিদেশি সংস্থাগুলোর উদ্বেগ ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পেছনের দিকে মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ২১ জানুয়ারি বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সংস্থাটি যে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর দমননীতির পথ অবলম্বন করেছে বলে উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে যারাই সরকারের কাজ-কর্মের সমালোচনা করছে, তাদের বিরুদ্ধেই সরকার অভিযোগ আনছে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রচ- হিংসাত্মক এবং বে-আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। হেফাজতে ইসলামীর সমর্থকরা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা সরকারের এ রকম পদক্ষেপের শিকার হয়েছেন। রিপোর্টে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ‘অধিকার’ নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তা আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ, নাস্তিক বলে কথিত ব্লগারদের গ্রেফতার এবং একজন সংবাদপত্র সম্পাদককে গ্রেফতারের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ঘিরে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দ- দেয়ার দাবিতে ফেব্রুয়ারিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেটি ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- দেয়ার পর পরিস্থিতি হিংসার দিকে মোড় নেয়। অপরদিকে গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যায় হিউম্যান রাইটস উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ব্রাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। একইসঙ্গে এসব ঘটনা স্বাধীনভাবে তদন্ত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে তাদের হেফাজতে নেওয়া প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে জনসমক্ষে নির্দেশ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বিবৃতিতে অ্যাডামস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি সংকটের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সন্দেহভাজনদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। ক্ষমতাসীন আ.লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন একে ক্রসফায়ারে হত্যা বলে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতায় থেকে তারা এ বিষয়ে কথা বলছে না। এই হত্যার নিন্দা জানিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ, পাবলিক বিবৃতি দেওয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিরোধী সমর্থকদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। গ্রেফতারকৃতদের অনেকের বিরুদ্ধেই গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। উৎসঃ শীর্ষ নিউজ Share on facebook Share on email Share on print 1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন