শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে
22 Feb, 2014 সাম্প্রতিক সময়ে আল-কায়েদার পাঠানো অডিও বার্তা নিয়ে অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থায় পড়েছে বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসন। আল-কায়েদার বার্তাটি নিয়ে নানা মহলে চলছে নানা রকম বিশ্লেষণ, আলোচনা, সমালোচনা, ভয়-ভীতি আশঙ্কা। বার্তাটি কে প্রচার করেছে বা কোথা থেকে প্রচার করেছে এই নিয়ে প্রশাসন অনেকটা অন্ধকারে রয়েছে। আবার সরকারের অনেক মন্ত্রী বিরোধী দলকে এই ধরনের ঘৃণ্য কাজের জন্য দোষারোপ করছেন। তবে কোন ধরনের বিশ্লেষণের পূর্বে আল-কায়েদা সম্পর্কে কিছু জিনিস আমাদের জানা দরকার। আল-কায়েদা সৃষ্টির সময়ে যে প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল তা বর্তমানে নেই। বিশেষ করে সংস্থাটির প্রধান বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের কমাণ্ডো বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পরে তাদের কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে যায়। লাদেন নিহত হওয়ার পরে আল-কায়েদার হাল ধরেন মিসরীয় আধ্যাত্মিক নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি। সংস্থাটির এক সময়ে মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম বিরোধী পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে আমেরিকার বিরুদ্ধে কথিত জিহাদ করা। ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে টুইনটাওয়ারে হামলার মত ঘটনা ঘটে। এরপর আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করার নামে আফগানি¯ত্মানে হামলা চালায় আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত ন্যাটো বাহিনী। আফগানি¯ত্মানে এখনও লাদেন-তালেবান বিরোধী যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে পশ্চিমা বাহিনী। তবে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে জিহাদ, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ইসলামী শাসন কায়েম করার নামে অনেকটা মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে আল-কায়েদা। আফগানি¯ত্মানে বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে আল-কায়েদার সদস্যরা সেখানকার নারীদের ওপর বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন করেছে এবং এখনও করছে। আল-কায়েদার অনুসারী তালেবানরা নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে, নারীদের অধিকাররে বিপক্ষে। এমনকি আফিগান সরকারের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ এনেও বিভিন্ন সময়ে মরণঘাতী সব আক্রমণ করেছে এই বাহিনীর সদস্যরা। মধ্যপ্রাচ্যে সুবিধা করতে না পেরে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এখন সচল ভূমিকা পালন করছে আল-কায়েদা। বিশেষ করে নাইজেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাঁদ’এর মত বিভিন্ন দেশে সংস্থাটির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসা যাক। ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতাগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ নেত্রী যে কোন ধরনের জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তার সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন দলটির প্রধান। যার ফলে দেশ দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেল। ক্ষমতাসীনের এমন কঠোর ও সংকীর্ণ মানসিকতার কারণে যে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষতি হতে পারে, তাদের সমস্যা হতে পারে সে বিষয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাদের কাছে এখন মূল বিষয় হল যেভাবেই হোক ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা। সাধারণ মানুষের দুঃখ, দুর্দশা দেখার সময় নেই ক্ষমতাসীনদের। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সরকার অনেকটা অন্ধ হয়ে গেল। ফলে দেশে অন্যায়, অবিচার, গুপ্ত হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতি নদীর স্রোতের ধারার মত বেড়ে গেল। সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয়। ভাবটা এমন যা হচ্ছে তা দেশের ভালোর জন্য হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর তথ্য মতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের পর সারা দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনের নামে যৌথবাহিনীর হাতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে হত্যার বিষয়টি মিডিয়াসহ, সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ‘অধিকার’ এর তথ্য মতে ৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যšত্ম যৌথবাহিনীর অভিযানে ১১ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নিহত হন। এর মধ্যে ৩ জন বিএনপি, ৭ জন জামায়াত ও ১ জন চিহ্নিত অপরাধী ছিলেন। এছাড়া জানুয়ারি মাসে ৩৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হন। যার মধ্যে ১১ জন বিএনপি নেতা-কর্মী, ১৫ জন জামায়াত নেতা-কর্মী, ১ জন জাতীয় গণতান্ত্রীক পার্টি, ১ জন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও বাকি ১০ জন ‘অপরাধী চক্রের’ সদস্য ছিলেন। সরকার যদি এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, অন্যায়, অবিচারের সঠিক বিচার না করে, যদি এই ধরনের কার্যক্রমকে তাদের কাজের অংশ হিসাবে বিবেচনা করে তবে তা হবে ক্ষমতাসীনের চরম বোকামি। ঘটনার চরম শিকরে উঠে সরকার বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শাšত্ম করার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে পুরাতন ঘাঁয়ে মলম দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে বিদেশি রাষ্ট্রের মাথা ঘামানো নিয়ে বেশ কড়া সমালোচনা করেছেন। সরকারের অনেক দায়িত্বশীল মন্ত্রী বিদেশি হ¯ত্মক্ষেপের বিষয়ে অনেক কড়া কথায় সমালোচনা করেছেন। আবার বিপরীতে দেখা গেছে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রশ্নে আবার বিদেশি বন্ধুদের সাথে আঁতাত করেছেন। অনেকটা গায়ে কাঁদা না লাগিয়ে মাছ ধরার মত অবস্থা। অনেক রাজনৈতিক ভিআইপিরা বিদেশি বন্ধুদের সাহায্যে নিজেদের পছন্দমত লোকদের বিদেশ পাঠিয়ে দিতে সাহায্য করছেন, বিভিন্ন মিশনে তাদের লোকদের নিয়োগ ব্যাপারে বিদেশি সাহায্য নিচ্ছেন। বিষয়টি অনেক লজ্জার ও শরমের। কিšত্ম বাঙ্গালীর আবার শরম একটু কম। শরম করলেতো গরম ভাত পাওয়া যাবে না। তাই নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে হলে কিসের শরম আর কিসের লজ্জা। যাই হোক পরিশেষে বলা দরকার বাংলাদেশে আল-কায়েদা নিয়ে যে সংকট, ভীতি, সংশয় তৈরি হয়েছে তা নিয়ে প্রথমে একটি সমাধান করা দরকার। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের উচিত ভিডিওবার্তাটি নিয়ে যাচাই বাছাই করে সঠিক তথ্য সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা। আর সত্যিই যদি এই ধরনের কোন সংশয় থেকে থাকে তবে সরকারের উচিত যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে সময়োপযোগি, কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নাকি এটি নিয়ে কোন গেম খেলা। যেহেতু ভূগৌলিকভাবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশর বেশ গুরুত্ব রয়েছে তাই অচিরেই বিষয়টি রফাদফা করা দরকার সরকারের। না হলে আবার নতুন করে কাউন্টার টেরিরিজমের নামে, সন্ত্রাসী দমনের নামে এই অঞ্চলে যদি পশ্চিমা কোন রাষ্ট্র আগ্রাসন চালায় তবে কারই ভাল হবে না। সরকারের উচিত অচিরেই এই ধরনের হুমকিমূলক কর্মকা- বন্ধের জন্য দ্রুত কাজ করা। সময় থাকতে সমস্যার সমাধাণ করা, নাহলে আবার দেরি হয়ে যাবে। তখন কোন কিছু করেই কোন সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে পারবেনা। কারণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে দেখা গেছে কোন জাতি, গোষ্ঠি, ব্যক্তি চিরদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি এবং যারা জোর করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছেন তাদের পরিনতি কত ভয়ংকর হয়েছে। সাপ্তাহিক হলিডে থেকে অনুবাদ করেছেন জুলকারনাইন জ্যাকি। উৎসঃ আমাদের সময় Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন