শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


নাশকতায় অর্থ জোগানদাতা তিন শতাধিক ব্যক্তি শনাক্ত
14 Feb, 2014 নাশকতায় অর্থ জোগানদাতা তিন শতাধিক ব্যক্তি শনাক্তসরকারের নির্দেশে তালিকা চূড়ান্ত করে এ সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের পাশাপাশি প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছেতানভীর হাসান হরতাল-অবরোধে দেশব্যাপী নাশকতায় অর্থ জোগানদাতা তিন শতাধিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে তিন গোয়েন্দা সংস্থা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের নির্দেশে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এসব ব্যক্তির নামের তালিকা চূড়ান্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের পাশাপাশি প্রবাসী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার যায়যায়দিনকে বলেন, নাশকতার পেছনে অর্থ জোগানদাতাদের সন্ধান বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিল। তারা সম্প্রতি একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে। সেই তালিকায় প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা রয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই তালিকা পর্যালোচনা করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এখনই তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ৩টি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বিগত দিনে হরতাল-অবরোধের নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পেছনে অর্থ জোগানদাতাদের তালিকা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডভিত্তিক গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়। তাদের অনুসন্ধানে অনেকের নাম-ঠিকানা বেরিয়ে আসে। পরে তারা আলাদা আলদা প্রতিবেদন জমা দেন তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে শুধুমাত্র রাঘববোয়ালদের নাম চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানেও দ্বিতীয় দফা যাচাই-বাছাইয়ের পর ওই তালিকা চূড়ান্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর ও র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি প্রতিটি জেলা ও থানা পর্যায়ের র‌্যাব-পুলিশকে ওই তালিকা পাঠানো হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপাররা ওই তালিকা ওসিদের সরবরাহ করেছেন। র‌্যাবের পক্ষ থেকেও প্রতিটি ক্যাম্পে ওই তালিকা পাঠানো হয়েছে। এই তালিকায় বিএনপি-জামায়াত ও ব্যবসায়ীসহ অন্তত ৩শ ব্যক্তির নাম রয়েছে। যারা নির্বাচনের আগে ও পরে নাশকতাকারীদের পেছনে অর্থ ব্যয় করেন। অর্থ জোগানদাতাদের তালিকায় জামায়াত সংশ্লিষ্ট এনজিও এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও নাম রয়েছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে নাশকতাকারীদের আশ্রয়, হাত খরচ ও পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এমনকি কিছু ব্যক্তির সংসার চালানোর দায়িত্বও নিয়েছিলেন অনেকে। সূত্র জানায়, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের আগে ও পরে পেট্রলবোমা, ককটেল বিস্ফোরসহ নানা ধরনের নাশকতায় শতাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে ২৪ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকারও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। র‌্যাব-পুলিশ সূত্র জানায়, গোয়েন্দাদের পাঠানো তালিকায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ক্যাডারদের নাম, ঠিকানা, পেশা, দলীয় অবস্থান, মামলার রেকর্ডপত্র, অর্থের উৎসসহ বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। এ তালিকায় জামায়াত সংশ্লিষ্ট এনজিও, প্রতিষ্ঠান এমনকি কোচিং সেন্টারের নামও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয় বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক ঊর্ধ্বতনদের জানানো হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এনজিও, প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নভাবে নাশকতার জন্য পূর্বে অর্থের জোগান দিয়েছে এবং এখানো দিয়ে যাচ্ছে। এনজিওর মাধ্যমে সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ আসছে। যেগুলো ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা করছে মন্ত্রণালয়। সূত্র মতে, হন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো কয়েকজন ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে এবং অজ্ঞাতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তালিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে একটি জেলার পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত মঙ্গলবার তিনি তালিকা হাতে পেয়েছেন। ওই তালিকায় জেলার হাতেগোনা কয়েকজন পয়সাওয়ালা লোকের নাম রয়েছে। তারা একটি দলকে মৌন সমর্থন করেন বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধে নাশকতাকারীদের পেছনে টাকা ঢালার অভিযোগ রয়েছে। তালিকা হাতে পাওয়ার পর তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সময়-সুযোগ বুঝে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। উৎসঃ jjd Share on facebook Share on email Share on print 1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন