বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
স্নাতক ডিগ্রিধারীর ৪৭% বেকার
27 Feb, 2014
মীর মনিরুজ্জামান : দেশে গত এক দশকে উচ্চশিক্ষার হার বেড়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সরকারি মনোযোগ এর কারণ। প্রতি বছর সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারীর ৪৭ শতাংশই বেকার। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ‘হাই ইউনিভার্সিটি এনরোলমেন্ট, লো গ্র্যাজুয়েট এমপ্লয়মেন্ট’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের জন্য তৈরি ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চশিক্ষার প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দক্ষ জনবলের তীব্র সংকট রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দখল কম, মৌলিক জ্ঞানের অভাব, কারিগরি জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানে দক্ষতার দুর্বলতা থাকায় তারা জনবল সংকট পূরণে অবদান রাখতে পারছেন না।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার মান এবং কর্মসংস্থান বাজারে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের অবস্থান উঠে আসে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্সের প্রতিবেদনটিতে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার। ভারতে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারত্বের হার ৩৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ ও নেপালে ২০ শতাংশ। শ্রীলংকায় স্নাতক পাস মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ চাকরি পান না।
স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী বাড়াটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হলেও তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি নির্ভর করে বিনিয়োগের ওপর। এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, সরাসরি চাকরির ক্ষেত্র না বাড়িয়ে উচ্চশিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ালে বেকারত্ব বাড়বে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়লে বেকারত্বের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমবে।
ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্সের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শিক্ষার গুণগত মানের অভাবে ডিগ্রিধারীরা বেকার থাকছেন। শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, সেসব বিষয়ের চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেশি। কর্মসংস্থান বাজার যে ধরনের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা প্রত্যাশা করে, সে ধরনের যোগ্যতা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর নেই।
প্রতিবেদনটির নানা দিক নিয়ে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একমত পোষণ করেন। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য আমরা যে ধরনের ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট চাই, তা পাই না। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুণগত মানের শিক্ষা না নিয়েই তারা সার্টিফিকেট পাচ্ছেন। ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে যে জ্ঞান আহরণ জরুরি, তা অর্জন না করেই তারা পড়ালেখা শেষ করছেন।
এ কারণে তারা যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠছেন না। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও ডিগ্রিধারীরা বেকার থাকছেন। সবাই কর্মকর্তার চাকরি চান, কারিগরি জ্ঞান লাভ করে ক্যারিয়ার গড়তে চান না। এ কারণেও ডিগ্রিধারীরা বেকার থাকছেন।’
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার্থীদের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার গুণগত মান নিশ্চিত নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার চেয়েও মুনাফা অর্জনেই নজর বেশি। এতে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়েন। এজন্য দায়ী দুর্বল নিয়ন্ত্রণ। এ পরিস্থিতি উত্তরণে পুরো উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস করার সুপারিশ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘এটি একটি ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। মানের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। তবে উন্নয়ন হচ্ছে। ১৯৯২ সালে কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। আইন না থাকায় এর মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হয়েছে। মানোন্নয়নের কাজও চলছে। ২০১৬ সালের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান একটি পর্যায়ে আসবে।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০০২-১০ সাল পর্যন্ত চাকরি ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১ শতাংশ। এক্ষেত্রে আইনজীবী, সিনিয়র কর্মকর্তা বা ম্যানেজার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০০ শতাংশ। পেশাজীবীদের প্রবৃদ্ধি ৫০ ও কারিগরি ক্ষেত্রে পেশাজীবীদের ৪১ দশমিক ২ শতাংশ।
২০০৪ সালে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর ভর্তির সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ২১ হাজার। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ লাখের ওপরে। এসব শিক্ষার্থী ব্যবসায় শিক্ষা (বিবিএ), আইন ও সামাজিক বিজ্ঞানে ডিগ্রিলাভে বেশি আগ্রহী। ২০১১ সালে ৯ লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষার্থী এ তিন অনুষদে ভর্তি হন। এক্ষেত্রে কৃষিশিক্ষায় ভর্তি হয়েছেন মাত্র ২১ হাজার, বিজ্ঞানে ২ লাখ ৬৮ হাজার, মানবিকে ৬ লাখ ৬ হাজার, স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষায় ৪৫ হাজার ও এডুকেশনে ৩১ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী।
কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলে বেকারত্ব কমবে বলে মনে করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিম্নমানের উচ্চশিক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা বেকার হয়ে পড়ছেন। কারিকুলাম উন্নয়নের মাধ্যমে সঠিক নজরদারি করলে এর উন্নয়ন সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
উৎসঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Share on facebook Share on email Share on print
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন