শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


ভিন্ন স্টাইলে শারীরিক সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে খুন
14 Feb, 2014 প্রথমে মোবাইলে রং নাম্বারের কলের সূত্র ধরে পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে বন্ধুত্ব। আর এ বন্ধুত্ব গড়ায় শরীরর পর্যন্ত। তবে শারীরিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে যখন প্রতরণা শুরু হয় তখন প্রতারক প্রেমিককে হত্যার পরিকল্পনা নেন প্রতারিত প্রেমিকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফারহানা মিষ্টির হাতেই নৃশংসভাবে খুন হন রফিকুজ্জামান বাচ্চু। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে মূল আসামি প্রেমিকা মিষ্টিকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর কাফরুলে একটি সিকিউরিটি কোম্পানির ম্যানেজার রফিকুজ্জামান বাচ্চু তার ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন। পুলিশ ওইদিন দক্ষিণ কাফরুলের ৫৫৯/১ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে হাত-পা বাঁধা ও জবাই করা অবস্থায় বাচ্চুর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) ৭নং টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম। দীর্ঘ প্রায় ১ মাস ৯ দিন পর গত রোববার খিলগাঁওয়ের নিজ বাসা থেকে ফারহানা বৃষ্টি নামের ওই গৃহবধূকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। গত সোমবার বৃষ্টিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে হাজির করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির ম্যানেজার রফিকুজ্জামান বাচ্চুর হাত-পা বাঁধা ও জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর মামলাটি ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বাচ্চুর ব্যবহৃত মোবাইলের কললিস্টের সূত্র ধরে তার ঘনিষ্টদের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। হত্যার আগে বাচ্চু সর্বশেষ কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন সে সূত্র ধরেই হত্যার ক্লু উদঘাটন করা হয়। তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর খিলগাঁওয়ের নিজ বাসা থেকে রফিকের ঘনিষ্ট বান্ধবী ফারহানা বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বৃষ্টি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হত্যার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। মূলত রং নাম্বারের সূত্র ধরে মিষ্টির সঙ্গে পরিচয় হয় রফিকের। এ সম্পর্কের সূত্র ধরে দু’জনের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু রফিক মিষ্টিকে ফাঁদে ফেলে তার সঙ্গে প্রতরণা করে। আর প্রতারণার শিকার হয়ে রফিককে হত্যার পরিকল্পনা নেয় মিষ্টি। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, মোবাইল ট্রাকিং করে রফিক হত্যার ক্লু উদঘাটন করা হয়। কললিস্ট যাচাই বাচাই করে মিষ্টির সঙ্গে রফিকের সম্পর্ক ও হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। এরপর মিষ্টিকে গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উম্মোচন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোড়া ও আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মিষ্টি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রফিকুজ্জামান বাচ্চুর সঙ্গে ৪ থেকে ৫ বছর আগে রং নাম্বারে পরিচয় হয় তার। মোবাইলে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের কারণে তারা দু’জন দু’জনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। মিষ্টির স্বামী-সন্তান থাকলেও রফিকুজ্জামানের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ট হয়ে উঠে। রফিকও বিবাহিত ছিলেন। সম্পর্কের সূত্র ধরে তারা প্রায়ই দেখা করতেন। আর এ সুবাধে রফিকের সঙ্গে তার সম্পর্ক শারীর পর্যন্ত গড়ায়। ৪ থেকে ৫ বছর ধরে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে রফিকের বাসায় যেতেন মিষ্টি। মিষ্টি আরো জানান, একদিন মোবাইলে কল দিয়ে রফিক তার বাসায় যেতে বলেন। বাসায় গেলে রফিক তার বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়ে শারীরিক মেলামেশা করতে বলেন মিষ্টিকে। প্রথমে রাজি না হলেও পরে বিভিন্নভাবে বাধ্য করা হয়। বন্ধুদের সঙ্গে শারীরিক মেলামেশার ঘটনা ভিডিও করে রফিক। মিষ্টি তখন বুঝতে পারেন তিনি ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়েছেন, রফিক তাকে ব্ল্যাকমেইলিং করেছে। কিছুদিন পর রফিক তার বন্ধুদের সঙ্গে শারীরিক মেলামেশার ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নিয়মিত তাকে বাসায় যেতে বাধ্য করে। এ ঘটনায় নিজের সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয় ও রফিকের প্রতারণায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মিষ্টি। মিষ্টি গোয়েন্দাদের আরো জানায়, শুধু শারীরিক সম্পর্কই নয় তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা ও ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কারও নিতে শুরু করে রফিক। আর তাই প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হওয়ায় রফিককে খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিষ্টি রফিককে ফোন করেন দেখা করার জন্য। তারা বনানী থেকে এক সঙ্গে সিএনজি নিয়ে কাফরুলে রফিকের বাসায় যায়। বাসায় যাওয়ার পর তিনি রফিককে বলেন, তারা আজকে ভিন্ন স্টাইলে শারীরিক সম্পর্ক করবেন। হাত-পা বেঁধে এ শারীরিক মেলামেশা তারা ভিডিও করবে। এ কথা শুনে রফিকও রাজি হয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিকের হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন মিষ্টি। এরপরই রফিককে ধারালো ছুড়ি দিয়ে কোপাতে থাকেন। ওই ঘটনার কয়েকদিন আগে দুর্ঘটনায় রফিক হাতে আঘাত পান। ফলে তিনি মিষ্টির সঙ্গে পেরে উঠতে পারেননি। একাধিক আঘাতে রফিক দুর্বল হয়ে গেলে তাকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর মিষ্টি বাথরুমে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে বাসায় তালা মেরে বেরিয়ে যান। হত্যার পর রফিকের মোবাইল ফোন এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা রাস্তায় ফেলে দেন। কিন্তু রফিকের ব্যক্তিগত ল্যাপটপটি মিষ্টি সঙ্গে করে নিয়ে যান এবং ল্যাপটপে থাকা গোপনে ধারণকৃত শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ফুটেজটি ডিলিট করে দেন। বাংলামেইল Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন