আর্কাইভ
প্রচ্ছদ » , বিশেষ কলাম, লিডনিউজ-২
ভয়ঙ্কর উস্কানিমূলক
অতিথি লেখক
A+ A A- Print
২০১৪-০২-১৮ ১১:৫২:০৯
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : কয়েকদিন ধরে দেশের পত্রপত্রিকায় আল কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির একটি কথিত অডিও বার্তা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, জাওয়াহিরি বাংলাদেশের মুসলমানদের ‘ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে অবতীর্ণ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও নাস্তিকদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান (ইনতিফাদা) ঘটাবার আহ্বান জানিয়েছেন।’ এই বার্তা আদৌ আল কায়েদার পক্ষ থেকে এসেছে কিনা তা এখনও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দু’জনই জানিয়েছেন এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য চেষ্টা করছেন। দু’জনই জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে কোন আল কায়েদা নেটওয়ার্ক নেই। তবে তারা এ কথাও বলেছেন যে, এই ভিডিও বার্তার বক্তব্যের সুর জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপির বক্তব্যের অনুরূপ। তা থেকে এর সঙ্গে এসব দলের ‘সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়’।
বাংলাদেশের ৯০% মানুষ মুসলমান। সৌভাগ্যের বিষয়, এদেশের মুসলমানরা ধর্মপ্রাণ হলেও সাধারণভাবে তারা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস্থানে অভ্যস্ত ‘উদার গণতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচিত। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে এদেশে গোঁড়া মৌলবাদীরও অভাব নেই। তাই এ ধরনের বিষয়ে সরকার বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার চেষ্টা হলে হিতে বিপরীত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বার্তার কোথাও বাংলাদেশের কোন দলের নাম উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও এর সঙ্গে কয়েকটি বিরোধী দলকে জড়িয়ে যেভাবে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া হচ্ছে তা মোটেই দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। বার্তাটির সত্যতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে সংবাদপত্রে শীর্ষ সংবাদ করাও ভয়ঙ্কর উস্কানিমূলক।
জাওয়াহিরির কথিত বার্তাটির উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, এটি ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘জিহাদোলজি’ নামক ওয়েবসাইট থেকে ইউটিইউবে ছাড়া হয়েছে। জিহাদোলজি তা পেয়েছে ‘কুয়ালালামপুর ভিত্তিক’ অন্য একটি সাইট থেকে, যা প্রায় এক মাস আগে পোস্ট করা হয়েছিল। এত পুরনো একটি পোস্ট নিয়ে এতদিন পর মাতামাতি করা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এর পেছনে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা কিংবা বাংলাদেশের সামপ্রতিক ঘটনাবলীকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস থাকতে পারে। এই সন্দেহের তীর বিশেষ কোন বিরোধী দল বা সরকার উভয়ের দিকেই নিবদ্ধ হতে পারে।
জিহাদোলজি ওয়েবসাইট সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা যায়, এর মালিক আরন ওয়াই জেলিন নামক একজন ইহুদি। তিনি ‘ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট অব নিয়ার ইস্ট পলিসি’-র একজন ফেলো। বর্তমানে লন্ডনের কিংস কলেজে পিএইচডি গবেষণারত। তিনি ড. জাওয়াহিরির এক জামাতার সঙ্গে যোগাযোগের সুবাদে নিজেকে আল কায়েদা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তুলে ধরে থাকেন।
জিহাদোলজি সাইটটি ইসলাম ধর্ম, জিহাদ, বিশেষ করে ‘সালাফি’ মতবাদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রচার করে থাকে। একে A clearing house for jihadi source material হিসেবে দাবি করা হয়। এটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র হয়ে কাজ করে বলে অনেকের ধারণা। ওয়েবসাইটটির ‘জিহাদোলজি’ নামকরণ স্পষ্টতই ব্যাঙ্গাত্মক। এটি ‘জিহাদ ওয়াচ’, ‘ইসলাম ওয়াচ’ বা অনুরূপ সাইটগুলোর মতোই ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী প্রচারণার একটি হাতিয়ার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন