বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


আল কায়েদার ভিডিও বার্তা কারা পৌঁছে দেয় বিশ্বমিডিয়ার হাতে?
20 Feb, 2014 আল কায়েদার ভিডিও বার্তা প্রকাশের জন্য সবচেয়ে খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানটি হলো সাইট ইনিস্টিটিউট। এর পাশাপাশি জিহাদলজি ডট নেটও বিভিন্ন তথ্য প্রচার করে থাকে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আল কায়েদার ভিডিও বার্তাটি প্রচার করা হয়েছিল জিহাদলজি ডট নেট থেকে। বলা হয়ে থাকে, এরা ভিডিও বার্তাগুলো সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করে বিশ্বমিডিয়ার হাতে পৌঁছে দেয়। কিন্তু আপনি কিভাবে নিশ্চিত হবেন যে, এরা আসলে সন্ত্রাসীদের নির্মাণ করা ভিডিও বার্তাগুলোই প্রচার করছে? এরা নিজেরা ভিডিও বার্তা নির্মাণ করে আল কায়েদার নামে চালিয়ে দিচ্ছে না? কিংবা এই সংস্থাগুলো ভিন্ন কোন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ হয়ে কাজ করছে না? এখনও পর্যন্ত ৯/১১ এর টুইন টাওয়ারে হামলা থেকে শুরু করে আল কায়েদাকে নিয়ে যা যা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোকে পরিকল্পিত নাটক বলে অভিযোগ করার মতো মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে কম নাই। এরই ধারাবাহিকতায় কথিত আল কায়েদার ভিডিও বার্তাগুলো নিয়েও রয়েছে নানান সন্দেহ। তাই প্রথম প্রশ্নই উঠে, প্রচারিত ভিডিও বার্তাগুলো কি আসলেই আল কায়েদা নির্মাণ করেছে না কি অন্য কেউ? আল কায়েদার সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ভিডিও বার্তা সংগ্রহ করে প্রচার করে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন রিটা কাটয নামের ইহুদী ধর্মাবলম্বী এক মহিলা সাংবাদিক। তিনি জন্মগতভাবে ইরাকের নাগরিক। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে অনুচর হিসেবে কাজ করার রিটা কাটযের পারিবারিক ইতিহাস আছে। ১৯৬৭ সালে ইরাক-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় রিটা কাটযের বাবা ইসরায়েলের পক্ষে অনুচর হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। তখন সাদ্দাম সরকার রিটা কাটযের বাবাকে প্রকাশ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়। সে সময় রিটা কাটযের বয়স ছিল ছয়। ওই সময় রিটা কাটয ও তার মা ইরান সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে পালিয়ে আসেন। এরপর ইসরালেই পড়াশুনা করেন তিনি। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রীও অর্জন করেছেন তিনি। এই রিটা কাটযই আল কায়েদার ভিডিও বার্তাগুলো বিশ্বমিডিয়ার কাছে পৌঁছে দেয়। তিনি কিভাবে এই ভিডিও বার্তাগুলো এনেছেন, এগুলোতে কোন রকমের কারসাজি করা হয়েছে কি না ইত্যাদি প্রশ্ন না তুলেই ভিডিও বার্তা নিয়ে সংবাদ প্রচার চলতে থাকে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সংবাদ মাধ্যমগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কারণ কি? প্রশ্নটির উত্তর পেতে আমাদেরকে হাঁটতে হবে কিছুটা ঘোরপথে। এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথমে উঠে আসে আল কায়েদার প্রচার কর্মী এডাম গাদাহানের কথা। আল কায়েদার নামে প্রচার করা একাধিক ভিডিওতে এডাম গাদাহানকে সংগঠনটির মুখপাত্র হিসেবে দেখা যায়। পরবর্তীতে আবিষ্কার হলো যে, এডাম গাদাহান আল কায়েদার কর্মী নন, তিনি আসলে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট। মোসাদ নিজস্ব কূটকৌশল বাস্তবায়নের জন্য এজেন্ট এডাম গাদাহানকে দিয়ে আল কায়েদার নামে ভিডিও বার্তা নির্মাণ করে প্রচার করিয়েছিলেন। একইভাবে, বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও আল কায়েদার নামে ভিডিও বার্তা নির্মাণ করে তা প্রচার করে থাকে। কিন্তু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কেন ভিডিও বার্তা প্রচার করতে যাবে? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পাওয়া গেলো খুব সহজে। ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে নিজেদের নাক গলানর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রচার অভিযান অব্যহত রাখে মোসাদ। এইভাবে, আল কায়েদার জুজু কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে আক্রমণ চালিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলনের নেতা প্রয়াত ইয়াসির আরাফাত ২০০২ সালে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনে আল কায়েদার উপস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের প্রচার নিঃসন্দেহে মিথ্যা কথা। ইসরায়েলীরা নিজেদের পাপ ও অপরাধ ঢাকতেই এই অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে। এভাবে আল কায়েদার নামে প্রচার করা ভিডিও বার্তাগুলো কাজে লাগিয়ে বিভিন্নভাবে লাভবান হয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এসকল কারণেই, আল কায়েদার ভিডিও বার্তা সংগ্রহকারী রিটা কাটযকেও মোসাদের একজন এজেন্ট হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এখনও পর্যন্ত আল কায়েদার নামে প্রচার করা ভিডিও বার্তার অনেকগুলোকেই পরবর্তীতে ভুয়া বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০০৩ সালে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয় অনলাইনে। ওই ভিডিও বার্তাটিও আল কায়েদার বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে থাইল্যান্ডের গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভিডিও বার্তাটিকে ভুয়া বলে চিহ্নিত করেন। উৎসঃ নতুনদিন Share on facebook Share on email Share on print 1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন