শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪


আপনার পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের বহুল প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাদের বিজ্ঞাপন দিন আপডেট হয়েছে বাংলাদেশ সময়: February 8, 2014 তে 6:54 pm দিনদিন কেন বৈবাহিক সম্পর্কে বিচ্ছেদ বাড়ছে? পদ্মিনী দত্ত শর্মা breakupঘরে ঘরে আজকাল বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে৷ কথায় কথায় মানুষ (নারী এবং পুরুষ) কোর্ট এ চলে যাচ্ছে, সবাই খুব যান্ত্রিক, নিঃসঙ্গ ও অস্থির। কারুর মনে শান্তি নেই৷ সবাই ছুটে চলেছে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে, দিশেহারা। নিজেরাই জানে না কি চায়। একজন নারী ও পুরুষ যতদিন প্রেমিক থাকে তখন একরকম৷ কিন্তু, বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই নানাবিধ কারণে অশান্তি শুরু হয়ে যায়। অনেক সময় তো এমনও দেখা যায় যে তারা কেউও কারুর ছায়াকেও আর সহ্য করতে পারছে না। বিয়ের আগে কারুর কোনও দায়িত্ব থাকে না, কিছু সময় কাটানো নিয়ে কথা৷ তখন দু’জনেই দু’জনের মন ভোলাতে ব্যস্ত৷ কিন্তু, বাস্তবের মুখোমুখি যখন দাড়াতে হয়, তখনই শুরু হয় তীব্র মতভেদ আর বাগবিড়ম্বনা। সব থেকে বেশি এতে ক্ষতি হয় বাচ্চাগুলোর এবং বয়স্ক গুরুজনদের৷ এরা বুঝতে পারে না কার দিক নিলে একটু স্বস্তি পাওয়া যাবে। অশান্তির মূলে কিন্তু নানাবিধ কারণ লুকিয়ে থাকে। মূখ্যত যদি দু’জন ভিন্ন ধরনের পরিবার থেকে আসে। একটি সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ের পক্ষে কোনদিনই একজন অতি সাধারণ কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্তর সঙ্গে মানিয়ে নেব সম্ভব হয় না, কিন্তু প্রেমের জোয়ারে তখন দু’জনেই এই সব বাস্তবকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যান। যে মেয়েটি বরাবর চাকর আর্দালিদের হুকুম দিয়ে অভ্যস্ত, যাকে বিছানাতেই চা দিয়ে আসা হয়েছে এতকাল, যে মেয়ে ঘুম থেকে ওঠেই ১০টায় তাকে যদি হঠাৎ ভরবেলা উঠে বাড়ির সব লোকজনেদের চা দিতে বলা হয়, তাহলে তো গন্ডগোল লাগাটা অনিবার্য। কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়িতে এক সদ্য নববিবাহিত দম্পতি এসেছিল৷ এটা সেটা কথা হতে হতে নতুন বউ তার শ্বশুরবাড়ির কথা তুলল। ও নিজে একজন উচ্চ পদস্থ অফিসারের মেয়ে৷ সকালে ব্রেকফাস্ট করত টোস্ট আর এগ পোচ দিয়ে কিংবা কর্ন্ফ্লাকেস আর দুধ দিয়ে৷ শ্বশুরবাড়িতে ওকে ব্রেকফাস্ট খেতে দিয়েছিল নাকি মুড়ি, তাও নাকি ভোরবেলায়। চাকরি করা মেয়ে তার ওপর আধুনিকা৷ তাই কোনও সংকোচবোধ না করে অবলীলাক্রমে শাশুড়ি কে বলেছিল ওর জন্য একটু ব্রেড ব্যবস্থা করলে ভালও হয়। বিয়ের আগে ন্যাকামি না করে যদি পরিষ্কারভাবে কথা বলে নিত, অনেক ভাল হত না কি? বিয়ের আগের এবং পরের কথা বার্তায় এমনিতেও অনেক অমিল থাকে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি, বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে কীভাবে কথা বার্তা বলে পরস্পরের সঙ্গে: মেয়ে: এত দেরি হল তোমার আসতে, কাল থেকে আমি না হয় গাড়িটা পাঠিয়ে দেব। ছেলে: না না কি যে বল, আমার গাড়ি চড়ার অভ্যেস নেই, আমি এমনি চলে আসব। মেয়ে: ঠিক আছে তাহলে আমিও কাল থেকে বাসেই আসার অভ্যেস করব। ছেলে: ও মা তা কি হয় নাকি, তোমার রং পুড়ে যাবে, শরীর খারাপ হবে, অমনটি কর না সোনা। মেয়ে: তোমার সঙ্গেই যখন থাকব তখন তোমার মতন করেই থাকতে চাই। ছেলে: তোমার জন্য একটা সামান্য উপহার এনেছিলাম, দামি কিছু আনতে পারিনি। মেয়ে: তুমি এই চিনলে আমায়? তুমি যা দেবে আমার কাছে সেটাই শ্রেষ্ঠ। তোমার মা ভাল আছেন তো? ওনাকে একদিন দেখতে যাব। ছেলে: চল ওঠা যাক, আবার পড়াতে যেতে হবে। মেয়ে: চল একটু চা খেয়ে যাই। (একটা বড় হোটেলের দিকে পা বাড়ায়) ছেলে: কর কি, কর কি, রাস্তার ধারে দাড়িয়ে খেয়েনি, অত দামি জায়গায় যাবার তো আমার ক্ষমতা নেই। মেয়ে: ঠিক আছে, তাই করি চল, তুমি যেটা ঠিক মনে কর, সেটাই ঠিক। কি সুন্দর মিল না দুজনের, এবার পড়ুন বিয়ের এক মাস পরের কথা। মেয়ে: তোমার কি একটাও ভদ্রলোকের মতন জামা নেই? তোমাকে নিয়ে বেরুব কীভাবে? ছেলে: তাহলে তুমি একাই চলে যাও। মেয়ে: একা চলে যেতে বললেই হল? আমার কি কোন প্রেস্টিজ নেই? ছেলে: কিন্তু তুমি তো আমাকে নিয়ে গিয়ে লজ্জায় পড়বে। মেয়ে: তোমাকে সেদিন বাপি কত করে জামা কাপড় কিনে দিতে চাইল, তুমি কিছুই নিলে না! ছেলে: তোমার বাবার থেকে আমি নিতে যাব কেন? মেয়ে: না নেওয়ারই বা কি আছে শুনি? আমি তো একটাই মেয়ে, সবই তো আমাদের৷ ছেলে: তাহলে তোমার বাবাকে বল আমাকে পাকাপাকিভাবে ব্যবসার পার্টনার করে নিতে। মেয়ে: এসব কি বলছ তুমি? আমি তো তোমাকে এক্কেবারে অন্যরকম জানতাম। ছেলে: কি রকম জানতে শুনি? একটা বোকা পাঠা? ঘর জামাই করে রেখে দিয়েছো৷ সব ফাইফরমাশ করাবে বলে? মেয়ে: আমি তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি এত পাল্টে গেলে কীভাবে? তোমার বিয়ে করতে লজ্জা করল না? ছেলে: কিসের লজ্জা? আমি তো বিয়ের আগেই পরিষ্কারভাবে বুঝিয়েছিলাম যে আমাদের ওই বাড়িতে তুমি থাকতে পারবে না, বলিনি? জোর করে বিয়ে করে আমাকে আমার পরিবার থেকেই তো আলাদা করে দিয়েছ। খুব চেনা চেনা লাগছে না কথাগুলো? আমি এটাই বলতে চাইছি যে বিয়ের আগে আর পরে মানসিকতার অনেক তফাত হয়ে যায়। বিয়েটা ছেলেখেলা নয়। চিন্তা-ভাবনা না করে হুটহাট করে বিয়ে করে ফেললে, বিয়ে ভেঙে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বিয়েতে আবেগের কোনও স্থান নেই, পুরোটাই অ্যাডজাস্টমেন্ট আর বোঝাপড়া। এছাড়া মূল্যবোধ, তৃতীয় ব্যক্তির মাতব্বরি, সংসারে কে কত দেবে, ভুল বোঝা বুঝি, কাজের ভাগাভাগি, অকারণ মেজাজ, কুড়েমি একটা বিয়ে ভাঙতে যথেষ্ট। দু’জন বেশি কাছাকাছি থাকলে ঠোকাঠুকি লাগতে বাধ্য, তাই লাভ ম্যারেজ হোক কী, দেখে শুনে হোক, পরস্পরের মানসিকতাতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে৷ দম্ভ বস্তুটিকে এক্কেবারে বাদ দিয়ে শুরু করতে হবে। বিদেশে কিন্তু ব্যাপারটা একটু আলাদা। আমার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ওরা কিন্তু বিয়ে করার আগে ভাগেই কথাবার্তা পরিষ্কারভাবে বলে নেয়। যেমন ধরুন ওদের ওখানে প্রি নুপিটাল এগ্রিমেন্ট হয়৷ যেখানে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনেই পরস্পর পরস্পরের শর্ত লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়। এতে কী হয়, যদি পরবর্তীকালে ছাড়াছাড়ি হলে জিনিসটা অনেক সহজে মিমাংসা হয়ে যায়। ওরা ডেটিং করার সময়ও কোনও ভনিতা করে না। যেমন কারুর যদি কোনও পারিবারিক সমস্যা থাকে, ওরা কিন্তু একটু ঘনিষ্ট হলেই সেটা জানিয়ে দেয়, কিংবা কারুর যদি আগের কোনও সম্পর্ক হয়ে থাকে, সেটা নিয়েও কখনও লুকোচুরি করে না। Bipolar Disorder ওখানে খুব কমন, কিন্তু ওরা কিন্তু মনে করে না যে সেটা কোনও লজ্জার বিষয়৷ ওরা মনে করে ওটাও একটা অসুখ মাত্র৷ যার চিকিৎসা করা দরকার। Catherine Jeta Jones (Michael Douglas এর স্ত্রী) প্রেস কনফারেন্স করে সবাইকে জানিয়েছিল যে ওরা একটা মানসিক সমস্যা হচ্ছে এবং ও তার জন্যে চিকিৎসাধীন আছে। আমি এখানে লক্ষ্য করেছি যে, এখানে সব কিছুই কীরকম একটা আড়াল আবডালে হয়। সব থেকে বিস্মিত হই যখন দেখি দু’জনেই বেমালুম অভিনয় করে যাচ্ছে৷ এমনকি বাবা-মা আগের বিয়ের কথা পুরো চেপে গিয়ে নির্ভয়ে আবার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। বিবেককে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে পুরোমাত্রায় একটা এত বড় প্রতারণা করতে কিন্তু তারা দ্বিধাবোধ করেন না। ওরা তো বিয়ে চট করে করেই না, বেশির ভাগই পার্টনার হিসেবে এক সঙ্গে থাকে, পরে যদি মনে হয় যে সারাজীবন তাকে নিয়েই চলা যাবে, তখনই ওরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। আমি বিদেশে থাকাকালীন শুনতাম, ভারতে আমরা নাকি সাংঘাতিক রক্ষনশীল৷ কিন্তু একটি ঘটনা শেয়ার করে পাঠক পাঠিকাদের মতামত নিতে চাই। এই কিছুদিন আগে, সবে আমি দেশে ফিরেছি৷ একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো একটি রিসোর্টের সামনে। দেখলাম একজন ছেলের সঙ্গে খুব ঘনিষ্টভাবে কথা বলছে৷ একই ঘরে ঢুকে পড়ল। তারপর আমি আর খেয়াল করিনি, চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম, হটাৎ আমার কাছে এসে কানে কানে বলল “প্লিজ পদ্মিনীদি তুমি আজকে যা দেখলে আমার মা বা বরকে মুখ ফসকে বলে ফেল না যেন৷ এক্কেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ও আমার অফিস কলিগ, মাঝে মাঝে এইভাবেই কিছুটা এক অপরের সঙ্গ উপভোগ করি৷ একটু মুখ বদলাই বলতে পর।” আমি ভুলেই গেয়েছিলাম পুরো বাপারটা। এরপর মাসখানেক পর আর একদিন দেখা হল৷ দেখলাম চেহারাটা বেশ কাহিল দেখাচ্ছে। শুনলাম ওর স্বামী ওকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। আমি বললাম ‘তাহলে তো ভালই হয়েছে, তোমরা দু’জনে এবার বিয়ে করে নাও৷ কিংবা এক সঙ্গে থাক।” প্রচন্ড খেপে গিয়ে বলে উঠল, “তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে পদ্মিনীদি, কোথায় আমার বর কোথায় ও, শিক্ষাদীক্ষা, রোজগার, স্মার্টনেস, Padmini-Dutta-Sharmaব্যাকগ্রাউন্ড কোনটাতেই আমার স্বামীর ধারে কাছে আসে না, আর ওই তো কত টাকা মাইনে পায়, যেখানেই যাই আমিই তো খরচা করি।” জানি না মেয়েটি ঠিক কী ভুল৷ পাঠক-পাঠিকারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে, খুব হাসি পায়, যখন শুনি সবই নাকি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব! [লেখক: কলামিস্ট, কলকাতা]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন