মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪


যেভাবে ১৫ থেকে ৫০
15 Jan, 2014 ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এ দীর্ঘ সংগ্রামের পথে বাংলাদেশের নারীদের অবদান ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন ইস্যুতেও নারী নেতৃত্ব সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। তবে রাজনীতির মাঠে তাদের উপস্থিতি সেভাবে দাগ কাটার মতো নয়। হয়তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কোণঠাসা থাকায় এ অবস্থা। কিন্তু প্রধান দুই দলের দুই কাণ্ডারী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া বাংলাদেশের নারীদের সে অনুপস্থিতি এক প্রকার আড়াল করে রেখেছে। তবে নারীদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে প্রবেশের সুযোগ সংরক্ষণ করেছে সংবিধান। সরাসরি ও সংরক্ষিত দুই পথেই জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার রয়েছে নারীদের। একদিনে এ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সময়ের পথচলায় ধীরে ধীরে এগিয়েছে নারীদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এ পথচলা শুরু হয় ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণনয়ের মাধ্যমে। সে সময় ১০ বছরের জন্য সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। ১৯৭৮ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩০-এ উন্নীত করা হয়। ১৯৯০ সালে আবারো সংবিধান সংশোধন (দশম সংশোধনী) করে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে ৩০টি নারী আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান রাখা হয়। এরপর ২০০০ সালে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের বিলুপ্তি ঘটে এবং সে সময় যারা সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ হিসেবে বহাল ছিলেন, তাদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তাই নারী নেত্রীরা দাবি উত্থাপন করেন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন-ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে এবং ওই সব আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সে সময় তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধান সংস্কারের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সংখাগরিষ্ঠতা নেই। তাই নারী আসন সংরক্ষণের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতাও তাদের নেই। ২০০০ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ২০০১ সালের অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে সংসদের নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোনো আসন ছিল না। ২০০৪ সালের মে মাসে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদের ৪৫টি নারী আসন সংরক্ষণ করা হয়। এ ব্যবস্থা প্রণনয়ন হয় ১০ বছরের জন্য। সে বছরেই ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নির্বাচনী বিল পাস হয়। পাশাপাশি আগের ব্যবস্থা পাল্টে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রাপ্ত আসন অনুপাতে সংরক্ষিত মহিলা আসন বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের জন্যই এ আসন পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আগে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতাসীন দলই সবগুলো আসন পেত। এরপর ২০০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাষ্টপতির অনুমোদন ক্রমে গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনটি কার্যকর হয়। এ আইনে আইনটি কার্যকর হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। পরে ২১ ডিসেম্বর রাষ্টপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ৪৫ দিনের বদলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রাখা হয়। ওই অধ্যাদেশটি ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্বাচন সংশোধন আইন-২০০৫’ নামে জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধিত ওই আইন অনুযায়ী ২০০৫ সালের ৭ মার্চের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। এরপর ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। সে নির্বাচনে জাতীয় সংসদে প্রাপ্ত সাধারণ আসন অনুপাতে আওয়ামী লীগের নয়টি আসন পাওয়ার কথা থাকলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। পরবর্তীতে গত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। উৎসঃ রাইজিংবিডি Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন