শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৪


খালেদাকে জামায়াত ত্যাগ করতে বলেছিল দিল্লি: আনন্দবাজার 10 Jan, 2014
বিএনপিকে জামায়াত ত্যাগ করতে বলেছিল দিল্লি।কিন্তু শোনেননি খালেদা জিয়া। নির্বাচন কেন বর্জন করা হলো খালেদার কাছে এর জবাব চাইছেনতার দলের কর্মীরা। আর নির্বাচন বর্জন করে খালেদা কার্যত ওয়াকওভার দিয়ে গেলেন শেখ হাসিনাকে। আজ ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা লেখা হয়েছে। আনন্দবাজার লিখেছে, “জয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন থেকে কেন সরে এলেন বিএনপি -নেত্রী খালেদা জিয়া? আপাতত এই প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে উত্তাল বিএনপি -র ঘরোয়া মহল। নেতাদের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। বিএনপি -র বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একটি বড় অংশের ক্ষোভ ক্রমশ চড়ছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিষয়টি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট এসেছে বাংলাদেশ থেকে। পাঁচটি নগর পুরসভা ভোটে আওয়ামি লিগের ভরাডুবির পর, আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে সব কর্মী -সমর্থক, তারা প্রকাশ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। কৈফিয়ৎ চাওয়া হচ্ছে নেতৃত্বের কাছে।” প্রতিবেদনে বলা হয়, “সরকারি সূত্রের খবর, বিএনপি -র ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই হতাশ নয়া দিল্লি। গত দু’বছরে মনমোহন সরকারের একাধিক শীর্ষ নেতা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু তার কোনো ইতিবাচক ফল ফলেনি। ২০১১ সালে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি প্রথম আলোচনা শুরু করেছিলেন খালেদার সঙ্গে। ২০১২ -এ বেগম জিয়া ভারত সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁর সম্মানে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। এর পর দুই বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ এবং সালমান খুরশিদ বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন । মনমোহন সিংহকে সে সময় খালেদা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, তিনি খোলা মনে ভারতে এসেছেন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলতে। তিনি চান ‘অতীতের ক্ষত ও তিক্ততা’ ভুলে যাক দিল্লি।” আনন্দবাজার বলছে, “কিন্তু এর পর খালেদা পর পর যে সব পদক্ষেপ করেন, তাতে ‘অতীতের ক্ষত’ খুঁচিয়ে উঠে নতুন করে তিক্ততা তৈরি হয়। দিল্লি তাঁকে বলেছিল, তিনি মৌলবাদী জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করলে ভারত খুশি হবে। কিন্তু কার্যত জামাতকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেন খালেদা। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় মার্চে বাংলাদেশ সফরে গেলে খালেদা তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎটুকুও করেননি ঢাকায় হরতালের অজুহাত দিয়ে। সেই হরতাল ডেকেছিল বিএনপি -র জোটসঙ্গী জামাতে ইসলামিই ”! আনন্দবাজার জানাচ্ছে, “খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে ভারত বারবার তাঁকে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ করেছে। কিন্তু বিএনপি নেত্রী তা কানে তোলেননি। যে রিপোর্টটি সম্প্রতি সাউথ ব্লকের কাছে এসেছে, তাতে বলা হচ্ছে, দীর্ঘ সাত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি -র নেতা -কর্মীরা পুরসভা নির্বাচনগুলিতে জিতে ক্ষমতায় ফেরার আশায় বুক বাঁধছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচন বয়কটে অনড় হয়ে রইলেন। রিপোর্ট বলা হচ্ছে, ‘বিএনপি -র অসংখ্য কর্মীর মনে যে প্রশ্নটি তৈরি হয়েছে, তার সদুত্তর খালেদা এখনও দিতে পারেননি। প্রশ্নটি হল জয়ের সমূহ সম্ভাবনাময় একটি নির্বাচন শুধুমাত্র অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি তুলে কেন ছেড়ে দিলেন খালেদা? যে আশঙ্কার কথা বিএনপি নেত্রী বারবার প্রকাশ করেছেন, তা হল রিগিং। কিন্তু পুরনির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হওয়ার পরেও সেই আশঙ্কা থাকবে কেন? সেই নির্বাচনের শেষ পর্বে গাজিপুরের ভোটে আওয়ামি লিগ প্রবল চেষ্টা করেছিল জেতার। কিন্তু তা সত্ত্বেও জিততে পারেননি তারা। এতেই প্রমাণ হয়, রিগিং করেও এবার মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হয়তো অর্জন করতে পারতেন না হাসিনা তথা আওয়ামি লিগ।’ দলের মধ্যে যে বিতর্কটি তৈরি হয়েছে তা হল যদি ভোটে বিএনপি যোগ দিত এবং আওয়ামি লিগ রিগিং করে জিতত, তার রাজনৈতিক সুফল পেত কিন্তু বিএনপি -ই। কেন না হাসিনা সরকারে বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছেই, তার ওপর যোগ হত রিগিং -বিরোধী জনমত। খালেদা জিয়ার সরকার গড়ার নৈতিক দাবিও সে ক্ষেত্রে জোরদার হত। দ্বিতীয় বিতর্কটি হল, যেখানে পুরসভাতেই আওয়ামি লিগ রিগিং করে জিততে পারছে না, সেখানে দেশজুড়ে ভোটকারচুপির বিষয়টি কী ভাবে করা সম্ভব হত।” আনন্দবাজার বলছে, “জামাতকে বাদ দিয়ে খালেদা ভোটে আসতে চাননি বলে যে তত্ত্বটি অনেকে দিচ্ছেন, সেটিও দলের মধ্যে কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছে। বলা হচ্ছে, ভোটে জিতে এসে জামাতকে মূল স্রোতে নিয়ে আসা এবং জামাতের যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি লঘু করে দেওয়ার কাজটিও চাইলে সারতে পারতেন খালেদা। কিন্তু সে সব কিছুই না করে তিনি কার্যত ওয়াকওভার দিয়ে গেলেন শেখ হাসিনাকে।” Share on facebook Share on email Share on print 2

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন