শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৪


আগামী পাঁচ বছরে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন ও নিধন করতে হবে ঃ একাত্তর টিভির এমডি মোজাম্মেল বাবু
26 Jan, 2014 চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠানে এই দাবি ওঠে, যাতে রাজনীতিক, বিশ্লেষক, নারীনেত্রীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদের পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও অংশ নেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বিএনপির সঙ্গে সংলাপের অন্তরায় হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে দায়ী করেছেন। তবে এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি আমীর খসরু। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি তুলে এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এরপর একে একে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি তোলেন শিক্ষক-কলামনিস্ট সলিমুল্লাহ খান, নারীনেত্রী আয়েশা খানম ও খুশি কবির, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, “আমরা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে নিতে চাই। জামায়াতের কোনো স্থান সে ফ্রেমে থাকতে পারে না।” জামায়াত নিয়ে দুই প্রধান দলের অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে কোনো চিন্তা পাই না। “বিএনপি তো পরিষ্কার করেছে, জামায়াত তাদের সঙ্গে থাকবে। আওয়ামী লীগ যদি অগ্রসর না হয় তাহলে আরো বিপদ বাড়বে। আওয়ামী লীগ কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না?” সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক বলে জামায়াতের নিবন্ধন ইতোমধ্যে বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ের পর্যবেক্ষণেও দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের রায় ঘিরে জামায়াতের সহিংসতাকে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে দলটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে সিপিবি। সেলিম নিষিদ্ধ দলের সঙ্গে জোট করলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলেরও দাবি জানান। রাজনৈতিক ভাষ্যকার সলিমুল্লাহ খান বলেন, “জামায়াত সন্ত্রাসবাদী দল হিসেবে নিষিদ্ধ হলে, এমন নিষিদ্ধ দলের সঙ্গে যারা জোট করবে তারাও একইভাবে চিহ্নিত হবে। এসব বিষয়ে কনসেনসাসে আসতে হবে।” তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার আন্দোলন একাকার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। “এবারের সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এবার যে পরিমাণ সহিংসতা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় ওই সহিংসতা হয়নি।” সাংবাদিক ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, “পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচনই ছিল না, এটি ছিল একটি ফিনিশিং লাইন। বিদেশিরা একসময় জামায়াতকে মডারেট মুসলিম দল বলত, এখন তারাই জামায়াতকে টেররিস্ট বলছে।” আগামী পাঁচ বছরে জামায়াতকে ‘নিশ্চিহ্ন ও নিধন’ করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা করতে গিয়ে যদি আওয়ামী লীগ তিন ভাগ হয়, তাও হবে।” জামায়াতের সঙ্গে জোট রক্ষা নিয়ে অনুষ্ঠানে কোনো কথা না বললেও মোজাম্মেল বাবুর কথায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন বিএনপি নেতা আমীর খসরু। তিনি বলে ওঠেন, “দিস ইস ননসেন্স।” আলোচনা অনুষ্ঠানে মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম বলেন, “বিএনপিকে প্রশ্ন করব- ধর্মীয় গোঁড়া ও পশ্চাৎপদ দল এবং জামায়াতের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। “আমরা নারীরা আমাদের অধিকারের প্রশ্নে আগে থেকেই এ সুপারিশ জানিয়ে আসছি।” অনুষ্ঠানে থাকা বিএনপি নেতা আমীর খসরুর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা পুরো বোঝাটাই কাঁধে নিয়েছেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, জামায়াত পুরোটাই আপনাদের কন্ট্রোল করছে।” জামায়াত ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়ে খুশি কবির বলেন, “যখন দেখি জামায়াত যোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগে; তখন হতাশ হই। “আমাদের প্রধান দুটি দলকে স্পষ্ট করতে হবে, তারা যা বলেন তা আসলেই বিশ্বাস করেন কি না। জামায়াতের বিষয়টি তাদের স্পষ্ট করা উচিত।” তবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে এই সমস্যার সমাধান আসবে না বলে মন্তব্য করে দেশের প্রথম পেশাদার নারী কূটনীতিক নাসিম ফেরদৌস। তিনি বলেন, “সাধারণদের মধ্যে জামায়াত একটা বড় ফ্যাক্টর। তাদের হাতে টাকা রয়েছে। আমরা কি কখনো ভেবেছি-জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে কী হবে? তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে, এরপর কী হবে?” মিশরে নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে জামায়াতের তুলনা জানতে চাওয়া হলে আরব দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসা নাসিম বলেন, “মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে জামায়াতের তুলনা হয় না। তারা (ব্রাদারহুড) এর আগেও আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল।” বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের তাগিদ দেয়া হলেও জামায়াত না ছাড়ার কারণেই বিএনপির মধ্যে সংলাপ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল। তিনি বলেন, “সংলাপের পথ তো তারাই (বিএনপি) রুদ্ধ করেছে। সবাই বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। তারা গতকালও বলেছে, ছাড়বে না।” উৎসঃ বিডিনিউজ২৪ Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন