মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৪


বিদ্রোহীদের সতর্কবার্তা প্রধানমন্ত্রীর
28 Jan, 2014 উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কোন দলীয় নেতা যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দল থেকে একক প্রার্থীর কোন বিকল্প নেই। নিজেরা নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে অন্যরা এর সুবিধা নেবে। আমি সংশ্লিষ্ট জেলার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বিষয়টি দেখভালের জন্য বলছি। এছাড়া, মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, সহিংসতায় নিহত-আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের তদারক ও জলবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী যেন না থাকে এবং একক প্রার্থী হয় ওই বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। নিয়মিত এজেন্ডা নিয়ে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রসঙ্গটি তুললে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের জানান, উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়ে গত রোববার জেলা ও উপজেলা নেতাদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। ওই বার্তায় তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী বাছাই করার নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্ত না মানলে বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট উপজেলা নির্বাচনে আসবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। তাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। এ বিষয়টি আপনাদের দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেন, প্রত্যেক জায়গায় যেন একক প্রার্থী থাকে সে জন্য কাজ করতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের পর উপজেলা নির্বাচনকে ইমেজ বৃদ্ধির নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিকে একক প্রার্থীর বিষয়ে যত্নবান হওয়ার জন্য বলছি। যারা জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলন করেছিল, তারা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছেন বলে যে খবর প্রকাশ হয়েছে- তাকে ভাল সিগন্যাল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তার অবস্থান তুলে ধরেন। এদিনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা ভাল করে দেখার দরকার রয়েছে। এটি চূড়ান্ত করার আগে নীতিমালার খসড়া সব মন্ত্রীদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো প্রয়োজন। এরপরই এটা নিয়ে মন্ত্রিসভায় এজেন্ডা হিসেবে আলোচিত হতে পারে। এছাড়া, গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক সহিংসতায় যে সমস্ত আওয়ামী লীগ কর্মী মারা গেছেন, শারীরিকভাবে আহত হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রকৃত তথ্য জেনে সাহায্য-সহযোগিতা করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে সম্ভব ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারিভাবেও সহায়তার উদ্যোগ নিতে হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে চার লেন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে স্থলপথে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ ব্যবস্থার সচিত্র প্রতিবেদন নিয়ে আগামী বর্ষার আগেই সেগুলোর মেরামতের কাজ এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শিগগিরই শেষ করতে যোগাযোগমন্ত্রীকে তাগিদ দেন। এছাড়া, যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে চীন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোর অবস্থা সম্পর্কেও জানতে চান। পাশাপাশি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ব্রিজের কাজও দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় পার্শ্ববর্তী কোন দেশ থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করে কিভাবে দেশে আনা যায় ওই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জলবিদ্যুতের প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভজনক হলে প্রয়োজনে দেশের বাইরে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। নাবিকদের কল্যাণে দুই কনভেনশনে অনুসমর্থন সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত ও কল্যাণের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দু’টি কনভেনশনে অনুসমর্থন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তাই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দু’টি কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর ফলে সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত ১২ হাজার বাংলাদেশী নাবিক বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র পাবেন। কোন দেশে গেলে জাহাজ অবস্থানকালে ওই দেশে প্রবেশে কড়াকড়ি, জাহাজ পরিবর্তন এবং দেশে ফেরা নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা থেকেও তারা মুক্তি পাবেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সামুদ্রিক জাহাজে শ্রম কনভেনশন, ২০০৬ এবং নাবিকদের পরিচয়পত্র কনভেনশন ২০০৩ এ অনুসমর্থনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক নৌপথে বাংলাদেশের ৬৮টি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে এবং দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার বাংলাদেশী নাবিক রয়েছেন। এ খাত থেকে ৫০০ কোটি টাকার মতো বিদেশী মুদ্রা দেশে আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশী নাবিকরা অনেক সময় অন্য দেশের বন্দরে অবস্থানকালে ওই দেশে ঢুকতে চাইলে বৈষম্যের শিকার হন, আইনি ঝামেলাতেও পড়তে হয়। কনভেনশনে সই না করায় বড় বড় দেশের জাহাজ কোম্পানিও অনেক সময় বাংলাদেশীদের চাকরি দিতে অনীহা প্রকাশ করতো। শ্রম কনভেনশনে অনুসমর্থনের ফলে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকরা কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ, চিকিৎসা, বিনোদন, কর্মঘণ্টা, বাসস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সুবিধা পাবেন। ইতিমধ্যে আইএলও সদস্যভুক্ত ৫৬টি দেশ এ কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে এবং গত বছর ২০শে আগস্ট থেকে তা কার্যকর হয়েছে। পরিচয়পত্র কনভেনশনে অনুসমর্থনের ফলে বাংলাদেশের নাবিকরা বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র পাবেন, যাতে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, আঙুলের ছাপসহ অন্যান্য তথ্য থাকবে। এই পরিচয়পত্র হবে মেশিন রিডেবল। এ পর্যন্ত ২৪টি দেশ এ কনভেনশনে অনুসমর্থন করেছে। উৎসঃ মনবজমিন Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন