সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৪


ইসলামি দল এড়িয়ে চলছে বিএনপি
21 Jan, 2014 বিএনপি যে ইসলামি দলগুলোকে এড়িয়ে চলার কৌশল নিয়েছে গত রোববারই তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। আর সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে তা স্পষ্ট হলো। বিদেশি ও দলের অভ্যন্তরীণ চাপেই বিএনপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আর একা আন্দোলনের ক্ষেত্রে এতোদিন যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্কট ছিল সোমবারের সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীর বিপুল উপস্থিতি সেখান থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণ ঘটিয়েছে বলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই বিএনপির জামায়াত নির্ভরতা নিয়ে কথা ওঠে। ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিএনপির ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতি ও আত্মগোপন কৌশল বারবার সমালোচিত হয়েছে। তৃণমূলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঘনীভূত হতে থাকে। অন্যদিকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বাঁচাতে মরিয়া জামায়াত অব্যাহতভাবে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ১৮ দলের কর্মসূচিগুলোকেও সহিংসতার উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছে যখন বিশেষ করে ঢাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথে অনুপস্থিত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। অনেকে মনে করেন, গত ৫ মে তারা রাজধানীতে এসে যে তাণ্ডব চালিয়েছিল সেখানে জামায়াত-শিবিরের বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তারপরও বিএনপি এ সংগঠনকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানায় যা খোদ দলের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এসব ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গ ছাড়তে বারবার তাগিদ এলেও শীর্ষ নেতৃত্ব তা এড়িয়ে যায়। কিন্তু এখন এসে সে অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে বিএনপি। এর পেছনের কারণ হিসেবে যা দেখা হচ্ছে তা হলো- আওয়ামী লীগের 'একতরফা' নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আন্তর্জাতিক মহল বিএনপির দাবির পক্ষেই কথা বলবে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে- এমনটাই ভেবেছিল তারা। এ লক্ষ্যে জোর কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়েছে। কিন্তু জামায়াত ও হেফাজত তাদের যে স্বরূপ দেখিয়েছে তাতে এ সংগঠনগুলোর সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা আর মেনে নিতে পারছে না আন্তর্জাতিক মহল। জামায়াতকে গণতান্ত্রিক উদারপন্থি ইসলামি রাজনৈতিক দল হিসেবে চারিত্রিক সনদপত্র দিলেও সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আর ১৮ দলে যেসব ইসলামি দল রয়েছে তাদের নেতারা সরাসরি হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অনেকে নেতৃস্থানীয়। এসব কারণে এখন শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় জোটভুক্ত ইসলামি দলগুলোকেও দূরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। জানা যায়, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে জামায়াতকে এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সেজন্য ১৮ দলের পক্ষ থেকে গত ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবারের গণসমাবেশের ঘোষণা দিলেও হঠাৎ করেই রোববার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি বিএনপির একার বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এর পরপরই জোটের শরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা জানান। সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি দলগুলোকে এড়িয়ে চলার কৌশল হিসেবেই সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাই বিশাল সমাবেশ করে বিএনপি। এতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ-ই প্রথম জামায়াতকে ছাড়া বিএনপির সমাবেশ এটি। সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশেও জামায়াত-শিবিরের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। সেই সমাবেশসহ প্রতিটি সমাবেশে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার জামায়াত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিসহ তাদের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। কিন্তু সোমবারের সমাবেশে জামায়াত প্রসঙ্গে একটি কথাও বলেননি তিনি। এর আগের সব সমাবেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশের সম্মুখভাগ দখল করতে দেখা গেলেও সোমবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। এদিন তাদের কোনো নেতাকর্মীকে ব্যানার ফেস্টুন হাতে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। গুটিকয়েক যারা ছিল তারা জানান, দলের পক্ষ থেকে নয় শুধু খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতেই সমাবেশে এসেছেন। এছাড়া জোটের বিগত সব কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার পরের আসনটি এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের জন্য নির্ধারিত থাকতো। তার পরের আসনটি থাকতো জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতার জন্য। সোমবার ওই আসনে জায়গা পেয়েছেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদ। সমাবেশে শরিক দলগুলোর মধ্যে বক্তব্য দেন- অলি আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান। এনপিপির শেখ শওকত হোসেন নিলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান গাণি, ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি আবুল হাসনাত আমিনী প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও তারা বক্তব্য দেননি। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী উপস্থিত ছিলেন না। জামায়াতকে ছাড়া বিএনপি কোনো কর্মসূচি সফল করতে পারে না। বিএনপি জামায়াতের ‘বি’ টিম। দ্বিতীয় বৃহত্তম এ রাজনৈতিক দলটি জামায়াতের মতো একটি সাম্প্রদায়িক দলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাদের পরামর্শেই গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। এমন নানা কথা সমালোচকদের মুখে মুখে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও কম কটাক্ষ করছে না। কিন্তু সোমবারের সমাবেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি প্রমাণ করে দিয়েছে বিএনপি একাই স্বয়ংসম্পূর্ণ- এমন আত্মবিশ্বাসের কথাই জানালেন সমাবেশে আসা তৃণমূল নেতাকর্মীরা। জামায়াতকে ত্যাগ করার পক্ষেও মত দেন তারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আপাতত জামায়াতকে ছাড়াই রাজপথে কর্মসূচি পালন করে শক্তি প্রদর্শন করতে চায় বিএনপি। তবে জামায়াতকে এখনই জোট থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক জোট তাই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সময় বুঝে জামায়াত ত্যাগ করবেন এমন ইঙ্গিত খালেদা জিয়া সম্প্রতি এক বিদেশি পত্রিকাকে বলেছেনও। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরের এক জামায়াত নেতা বিএনপির এমন অবস্থানের খবর উড়িয়ে দিলেন। তিনি বলেন, 'বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিচ্ছে এসব সাময়িক রটনা। বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।' তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এও বললেন যে, 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী দল। তাই বিএনপি-জামায়াতের জোট ভেঙে গেলেও জামায়াতের কোনো ক্ষতি হবে না।' বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিলে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে ফের জোট করতে পারে বলেও দাবি করলেন তিনি। অবশ্য ক্ষমতার রাজনীতিতে জামায়াত নেতার এ দাবিকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না! উৎসঃ বাংলামেইল Share on facebook Share on email Share on print 1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন