শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৪


চলমান রাজনীতি পর্যবেক্ষণে ইসলামী দলগুলো 01 Feb, 2014 নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের ১২টিই ইসলাম ধর্মভিত্তিক। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বাইরে দেশে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ইসলামী দল ও সংগঠন কতগুলো তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। এ সংগঠনগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী হেফাজতে ইসলাম। ১২টি নিবন্ধিত ধর্মীয় দলের মধ্যে একমাত্র তরীকত ফেডারেশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে। নির্বাচনে অংশ না নিলেও বসে নেই ধর্মীয় অন্য দলগুলো। তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অবস্থা বুঝেই নেবে সিদ্ধান্ত। দলগুলোর বর্তমান অবস্থা কী? সামগ্রিক বিষয়ে কথা হলে অধিকাংশ ধর্মীয় নেতার অভিযোগ, বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। নারীনীতিতে কোরআনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই এ সরকারের সঙ্গে নেই তারা। সরকার পতনে সময়মতো তারাও মাঠে নামবে। উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছে জামায়াত : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। জোটগতভাবে নির্বাচন করায় জামায়াতও রয়ে যায় নির্বাচনের বাইরে। কিন্তু আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে ১৯-দলীয় জোটে সমঝোতায়ও পেঁৗছেছে দলটি। সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় সারা দেশের ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। এর মধ্যে ৭১ উপজেলায় ১৮ দলের আর ২৬ উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থী থাকছে। এ জন্য নির্বাচনী খরচ হিসেবে মোটা অঙ্কের বাজেট ঠিক করেছে জামায়াত। এ ছাড়াও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার, দলের নিবন্ধন বাতিল, মামলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সমস্যাগ্রস্ত দলটি সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করছে। সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পতনকেই একমাত্র পথ ভাবছে। এ জন্য সময় বুঝে ব্যবস্থা নেবে দলটি। সংগঠন শক্তিশালীকরণে জোর দিচ্ছেন চরমোনাই পীর : প্রধান দুই জোটের বাইরে ধর্মীয় অন্যতম শক্তিশালী দল মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। বর্তমানে চরমোনাই পীর ও তার দলের নেতা-কর্মীরা বর্তমান সংসদ ভেঙে প্রতিনিয়ত নতুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য সারা দেশে তৃণমূলের ভিত মজবুত, জানবাজ কর্মী তৈরি করতে কর্মশালা ও সাংগঠনিক তালিম চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের প্রচার সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ূম জানান, দুই জোটের বাইরে রাজনীতিতে গুণগত মান অর্জন করে আদর্শিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আন্দোলন কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেও ইসলামী আন্দোলন গুরুত্ব দিচ্ছে। এমনকি নতুন তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনের দাবিতেও মাঠে থাকবেন তারা। জামায়াত নিষিদ্ধ চায় তরীকত : জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য আইনি এবং রাজপথে লড়াই করে যাচ্ছে নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরীকত ফেডারেশন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে তরীকতের দায়ের করা মামলায়। সংগঠনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বলেন, জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী দল। দলটি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ জন্য আগামী দুই মাসব্যাপী সারা দেশে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, পথসভা, ঢাকা মহানগরীর কাউন্সিল ও ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলকে সারা দেশে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হেফাজত নিয়েই ব্যস্ত খেলাফত আন্দোলন : মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন হেফাজত নিয়েই ব্যস্ত। শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম আহ্বায়ক। সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটাতে ব্যস্ত খেলাফত মজলিস : দুই জোটের বাইরে আরেকটি অন্যতম শক্তিশালী ধর্মীয় দল মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। নির্বাচনে অংশ না নিলেও বর্তমানে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং বিস্তৃতি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে দলটি। জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের বায়তুলমাল সম্পাদক আতাউল্লাহ আমিন জানান, সারা দেশের আনাচে-কানাচে সংগঠনকে ছড়িয়ে দিতে চলছে কর্মসূচি। উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে বেশ কয়েকজন নিজ উদ্যোগে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১৯ দলে সক্রিয় যারা : জামায়াত ছাড়াও ১৯ দলের শরিক ধর্মীয় দল মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, মরহুম মুফতি আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট, আল্লামা শায়খ আবদুল মোমিনের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ১৯ দলের সব আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে। এগুলো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল। এইচ এম এম কামরুজ্জামান খান বলেন, ১৯-দলীয় জোটে সক্রিয় তার দল। জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন তা অনুসরণ করেন তারা। এ ছাড়াও দল শক্তিশালী করার জন্য সারা দেশে কর্মসূচি অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, সরকার পতনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছেন তারা। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান জানান, ১৯-দলীয় জোটের শরিক হিসেবে সব কর্মসূচিসহ ইমান-আকিদা রক্ষার জন্য আন্দোলন চলছে, চলবে। খেলাফত মজলিসের দফতর সম্পাদক আবদুল জলিল জানান, সরকারের পতন ঘটানোর জন্য চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রচার সম্পাদক মাওলানা ওয়াছেল জানান, নিজস্ব কর্মসূচি চলছে, জোটের কর্মসূচিতেও থাকব। অন্যান্য : এ ছাড়াও সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টও সংগঠন গোছানোর কাজে ব্যস্ত। উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন Share on facebook Share on email Share on print 3

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন