সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৪


হঠাৎ জামায়াত বিমুখ বিএনপি
21 Jan, 2014 জামায়াতে ইসলামীকে কি ১৮ দলীয় জোট থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে? নাকি দলটিকে কৌশলে এড়িয়ে চলার চিন্তা করছে জোটের প্রধান দল বিএনপি? সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ১৮ দলের গণসমাবেশ আকস্মিকভাবে বিএনপির সমাবেশে রূপ নেয়া এবং এতে জামায়াতকে না ডাকায় এসব প্রশ্ন জোরদার হয়েছে। প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও সমাবেশে না ডাকায় চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে জামায়াত-শিবির। সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে বিএনপি ১৮ দল থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাকি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এটা তাদের কৌশল, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে বিশ্লেষণ। জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপির এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলেও এখনও তার স্পষ্ট জবাব মেলেনি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপির প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আলোচনায় আসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরাসরি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর কয়েকদিন পর বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া পৃথক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট স্থায়ী নয়, এটা আমাদের কৌশল। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এক প্রস্তাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ইঙ্গিত করে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বৈঠক করে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার আহ্বান জানান। মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য পূর্বশর্ত হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকেও বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার কথা বলেন মন্ত্রীরা। দেশের সুশীল সমাজেরও একটি অংশ একই ধরনের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাজধানীর সমাবেশে জামায়াতকে না ডাকার বিএনপির সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ২০ তারিখ সারা দেশে গণসমাবেশের পাশাপাশি রাজধানীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করলেও একদিন আগে তা বিএনপির সমাবেশে রূপ নেয়ায় ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জোটের শরিকরাও। কোনো আলোচনা ছাড়াই আকস্মিক এই সিদ্ধান্তকে সহজভাবে দেখছেন না তারা। তবে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ হলেও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দেশের অন্য সব জায়গায় জামায়াতসহ ১৮ দলের পক্ষ থেকেই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সূত্র মতে, খালেদা জিয়া ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলের পক্ষে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করে বিএনপি। সমাবেশ সফলের জন্য বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও জোটের শরিক দলগুলো পৃথকভাবে প্রস্তুতিও গ্রহণ করে। বিশেষ করে এতে জামায়াত-শিবির ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়। কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানিয়ে রোববারও বিবৃতি দেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। তবে রোববার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এটি বিএনপির সমাবেশ, ১৮ দলের নয়। সমাবেশ সম্পর্কে বিএনপির এই অবস্থানের কথা রোববার গভীর রাত পর্যন্ত শরিক দলগুলোকে স্পষ্টভাবে কিছুই জানানো হয়নি। তবে সোমবার জামায়াত ছাড়া শরিক অন্য দলগুলোর নেতাদের ওই সমাবেশে অতিথি হিসেবে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে জামায়াতের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়। এই সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও পরে বিএনপি নেতাদের অনুরোধে ইসলামী ঐক্যজোট ছাড়া শরিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন সমাবেশ মঞ্চে। বিএনপির সমাবেশে না ডাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মন্তব্য করা হবে বলে অনেকে জানান। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, যেহেতু ওটা বিএনপির সমাবেশ, তাই তারাই তা বাস্তবায়ন করেছে। আমাদের অংশ নেয়া না নেয়ার কোনো কারণ নেই। তবে শিবিরের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, কী কারণে সমাবেশে আমাদের ডাকা হয়নি তা বিএনপির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তারা এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, বিএনপি যদি আন্তর্জাতিক চাপ বা সরকারের ষড়যন্ত্রে পা দেয় তাহলে খুব ভুল করবে। শিবিরের অপর এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতদিন জোটের সব আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও এখন অজানা কারণে বিএনপি আমাদের এড়িয়ে চলছে। এতদিন আন্দোলনে উৎসাহ দিলেও এখন সরকার পতন না হওয়ায় আমাদের কর্মকা-কে নাশকতা হিসেবে আখ্যায়িত করছে তারা। এটা দুঃখজনক। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ১৮ দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া কর্মসূচি ঘোষণা করলেও কয়েকদিন আগে থেকেই শুনছিলাম, এটা বিএনপির সমাবেশ হবে। এতে আমাদের দলের চেয়ারম্যানকে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণও জানানো হয়। তবে এটি ১৮ দলের সমাবেশ না হওয়ায় অতিথি হিসেবে তাতে অংশ নেয়া উচিত নয় মনে করে তিনি যাননি। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, প্রথমে ১৮ দলের হলেও পরে বিএনপির সমাবেশ বলে ঘোষণা করা বিএনপির কৌশল হতে পারে। তবে ১৮ দলীয় জোট রাখতে চাইলে এ কৌশল কাজে আসবে না। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি এখন বহির্বিশ্বমুখী হয়ে গেছে। তাদের ওপর নির্ভর করে কোনো কাজ হবে না। ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি বিএনপির কর্মসূচিতে রূপ নেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়াসহ জোটের শরিক বেশ কয়েকজন নেতা। জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এক নেতা জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কৌশলগত কারণে জামায়াতকে বাদ দিয়ে ১৮ দলের কর্মসূচির পরিবর্তে বিএনপির সমাবেশ করা হয়েছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে শরিক দলগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে। বিশেষ করে ইসলামী দলগুলোর নেতারা এতে অংশ নেবে কিনা তা নিয়ে প্রথম দিকে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলেও শেষ মুহূর্তে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাঠানো হয়েছে। উৎসঃ আলোকিত বাংলাদেশ Share on facebook Share on email Share on print 2

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন