সাড়ে ৩ কোটি ব্যালট ছাপানোর উদ্যোগ
16 Dec, 2013
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও তিন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সবাই জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন জয়ী হলেন। বেসরকারিভাবে তাদের জয়ী ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। বাকি ১৪৬টি আসনে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি ব্যালট পেপার ছাপার কাজ শুরু করতে রোববার নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়েছে। তবে ছাপার কাজ শুরু হতে আরও দু’তিন দিন সময় প্রয়োজন হবে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে
কমিশনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ৫ জেলায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। বাকি ৫৯টি জেলায় ১৪৬টি আসনে ভোটগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে ১৭টি জেলায় একটি আসনে ও অন্য ১৮টি জেলায় দুটি করে আসনে নির্বাচন হবে। নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন ৩৮৭ জন বৈধ প্রার্থী। ১৪৬টি আসনের মধ্যে ২৫টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। অধিকাংশ আসনে জাতীয় পার্টির সমর্থনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকি আসনগুলোর মধ্যে ২৬টি আসনে শুধু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ২১ আসনে আওয়ামী লীগের বিপরীতে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নেই। এসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। অন্তত ২৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টি-জেপির প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে।
এ নির্বাচনে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে মোট ১ হাজার ১০৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ২৬০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৩৮টি আপিল আবেদন কমিশনে জমা পড়ে। কমিশন শুনানি শেষে ৪২ জনের আবেদন মঞ্জুর করে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে প্রার্থী রয়েছে ৫৪১ জন। এদের মধ্যে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও তিনজন : নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আরও তিন আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তারা সবাই জাতীয় পার্টির। বেসরকারিভাবে নির্বাচিতরা হলেন নীলফামারী-৪ আসনের মোঃ শওকত চৌধুরী, রংপুর-১ আসনের মশিউর রহমান রাঙা ও ময়মনসিংহ-৮ আসনের ফখরুল ইমাম। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির ২১ জন, আওয়ামী লীগের ১২৭ জন, জাসদের তিনজন, ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজন ও জাতীয় পার্টি-জেপির একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। কমিশন সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পরও বেশ কয়েকজন রিটার্নিং কর্মকর্তা একক প্রার্থীদের নাম কমিশনে পাঠিয়েছেন। এ নিয়ে কমিশন কর্মকর্তাদের বেগ পোহাতে হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে কারসাজির কারণে এ সমস্যা উদ্ভব হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পার হওয়ার পরই শুক্রবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের তালিকা কমিশনে পাঠানোর নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তা মানেননি অনেক রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ কারণে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিয়েছে কমিশন। কমিশন ওই সব কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করেছে।
২৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নেই : আগামী ৫ জানুয়ারি ১৪৬ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসব আসনের মধ্যে অন্তত ২৫টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের শরিকদের ছাড় দেয়ার জন্য এসব আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আসনগুলো হচ্ছে- ঢাকা-৪, ৬ ও ১৭, পঞ্চগড়-১, রংপুর-৩, কুড়িগ্রাম-১, বগুড়া-৪ ও ৭, নড়াইল-২, সাতক্ষীরা-১, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-৩, জামালপুর-৪, ময়মনসিংহ-৭, নরসিংদী-২, সিলেট-২, মৌলভীবাজার-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, কুমিল্লা- ৩ ও ৪, ফেনী-৩, লক্ষ্মীপুর-১ এবং চট্টগ্রাম- ২, ৩ ও ৯।
ব্যালট ছাপছে ইসি : আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ৩ কোটি ৪৮ লাখ, ১৫ হাজার ৮৫৪টি ব্যালট পেপার ছাপার জন্য বিজি প্রেসকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোববার এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন করে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে রংপুর অঞ্চলের জন্য ৭০ লাখ ৬০ হাজার ৫৯৪টি, খুলনা অঞ্চলের জন্য ৭০ লাখ ২৯ হাজার ৫২৩টি, বরিশাল অঞ্চলের জন্য ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ২০১টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলের জন্য ৫৬ লাখ ৯ হাজার ৯৯৯টি, ঢাকা অঞ্চলের জন্য ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৯টি, সিলেট অঞ্চলের জন্য ৩০ লাখ ৭ হাজার ৯৫৫টি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৪০ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৩টি ব্যালট পেপার ছাপা হবে। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৫৯টি জেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৭টি জেলায় একটি ও ১৮টি জেলায় দুটি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাকি জেলাগুলোতে দুয়ের অধিক আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন হবে না। সেগুলো হচ্ছে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, জয়পুরহাট, রাজবাড়ী ও মাদারীপুর।
কমিশনে দফায় দফায় বৈঠক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হতে যাওয়া ও নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রোববার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অনিয়মসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নির্বাচনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে ভর্ৎসনা করা হয়। গত শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন এবং অফিসের নির্ধারিত সময় বিকাল ৫টার পর কর্মকর্তারা অফিস করায় তাদের এ ভর্ৎসনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের সময়ে সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলসহ অতিরিক্ত সময় কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল কমিশন। অথচ অতিরিক্ত সময় কাজ করে তথ্য আপডেট করা এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তাদের ভর্ৎসনা করেন কমিশনাররা। এছাড়া বৈঠকে আর কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। কমিশনাররা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
উৎসঃ যুগান্তর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন