ঘণ্টায় আয় নয় লাখ, কিন্তু বছরে সাড়ে তিন লাখ!
30 Dec, 2013
সারাদেশে সব শ্রেণিতেই সমানভাবে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। সুরের জাদুতে তিনি মাতিয়েছেন গোটা দেশকে। সবচেয়ে বেশি গানের অ্যালবাম বের করার রেকর্ডও তার। বিভিন্ন উৎসব পার্বনে তাকে পাওয়া এত সহজ নয়। একজন মানুষ কতো জয়গাতেই বা যেতে পারে।
বছরের কিছু বিশেষ সময়, যেমন ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরু, পয়লা বৈশাখসহ নানা উৎসবে মমতাজকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপারই বলতে হয়।
কথা হচ্ছিল মমতাজের ব্যক্তিগত সহকারী ওবায়দুর রহমান। গানের অনুষ্ঠানের জন্য এই শিল্পীকে চাই, কবে সময় দিতে পারবেন, জানতে চাইলে ওবায়দুর জানতে চান বাজেট কতো।
এক অনুষ্ঠানের জন্য কতো নেবেন মমতাজ- জানতে চাইলে তার সহকারী জানান, এ জন্য গুণতে হবে আট থেকে দশ লাখ টাকা।
ওবায়দুর জানান, এবার থার্টি ফাস্ট নাইটের সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টার এক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য এক শিল্পপতি তাদেরকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। পরে রফা হয়েছে আট লাখ টাকায়। ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠান করলে আরও বেশি দিতে হবে, সেটাও জানিয়ে দেন ওবায়দুর রহমান।
ওবায়দুর জানান, ২০১৩ সালের থার্টিফার্স্ট নাইটে ঢাকায় দুটি শো করেছেন। প্রতিটির জন্য তিনি নিয়েছেন নয়লাখ টাকা। এছাড়া গত বছর ডিসেম্বরে টানা সাত দিন অনুষ্ঠানে সাত লাখ টাকা করে মোট ৪৯ লাখ টাকা আয় করেছেন মমতাজ। নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এক মাসে তার আয় ছিল ৬৭ লাখ টাকা।
ওবায়দুরের তথ্য অনুযায়ী এ বছরও থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ ১০ থেকে ১২ দিন মমতাজের অনুষ্ঠান আছে। একদিনের জন্য আট লাখ টাকা করে নিলেও এ বছর আয় ৮০ থেকে ৯৬ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন এই শিল্পীর ব্যক্তিগত সহকারী।
গুনী এই শিল্পীর আয়ের এই হিসাবের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় দেখানো আয়ে কোনো মিল নাই। হলফনামায় গান গেয়ে বছরে আয় উল্লেখ করেছেন তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মমতাজ বেগম। নির্বাচনী লড়াইয়ে এখন দারুণ ব্যস্ত তিনি। বাড়তি কথা বলার ফুসরত নেই কারও সঙ্গে। হলফনামায় অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি তা।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কোনো প্রার্থী হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। তবে এজন্য যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকতে হবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হলফনামায় অসত্য তথ্য আছে কি না, সেটা প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে হবে। অসঙ্গতি পেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তাদের তা জানানো উচিৎ। আয়ের তথ্যে গোপন করে কেউ রাজস্ব ফাঁকি দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘মমতাজ বেগম হলফনামায় গান থেকে যে আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন তা হাস্যকর। বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ক্ষতিয়ে দেখা উচিৎ’।
নবম সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মমতাজ। তাই ওই সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে হলফনামা জমা দিতে হয়নি। এবার জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী তার বছরে আয় ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ৮৮১ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আসে ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৯৫৩ টাকা এবং গান গেয়ে আসে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা।
ব্যাংকে মমতাজের আছে ৩০ লাখ টাকা। শেয়ার আছে ৩০ লাখ টাকার। ৬৫ লাখ ছয় হাজার ২৫০ টাকার টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার জিপ ছাড়াও এই শিল্পীর স্বর্ণের গয়না আছে ৩৫ ভরি।
আর স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে আছে ৪৫ লাখ টাকার কৃষি জমি, ৫ কোটি টাকার অকৃষি জমি, এক কোটি টাকার দুটি দালান ও ৯০ লাখ টাকার একটি কোল্ড স্টোরেজ। তবে তার ব্যক্তিগত দায় দেখানো হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।
উৎসঃ ঢাকাটাইমস২৪
Share on facebook Share on email Share on print 4
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন