রাজধানীতে ৪৭০৭ জনকে ধরতে মাঠে যৌথবাহিনী
28 Dec, 2013
রাজধানীতে নাশকতা এবং নাশকতার ইন্ধনদাতা বলে চিহ্নিত ৪ হাজার ৭০৭ জনের তালিকা নিয়ে অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান শুরুর আগেই এ দীর্ঘ তালিকা তাদের হাতে পৌঁছেছে। প্রতি রাতেই রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় চলছে অভিযান। তালিকা অনুযায়ী মিরপুর, মতিঝিল ও ওয়ারী এলাকায় দুষ্কৃতিকারীর সংখ্যা বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, রাজধানীতে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছে কয়েকটি গ্রুপ। ২৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের গণজমায়েতকে ঘিরেই দুষ্কৃতিকারীদের এ পরিকল্পনা। তাদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরেই থাকেন রাজধানীতে। কেউ আবার ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আবাসিক হোটেল ও মেসে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্যে দেখা যায়, রাজধানীর আটটি অপরাধ বিভাগে প্রায় ৪ হাজার ৭০৭ জন ক্যাডারের নাম পেয়েছে যৌথবাহিনী। তবে গত সপ্তাহ পর্যন্ত এ তালিকা ছিল ২ হাজার ৩০০ জনের। তালিকার বেশির ভাগই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। কেউ কেউ মিছিল মিটিংয়ে আসেন কেউবা সমর্থক, কেউ আবার পেশাদার নাশকতাকারী। আবার এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীও। যারা জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা ভোগ করে থাকে। এদের অনেকে ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, মিছিল সমাবেশে লোক যোগান দেয় বলে জানা গেছে।
রাজধানীর তালিকা অনুযায়ী পুলিশের রমনা বিভাগের ছয় থানায় ৬৫৫ জন, লালবাগ বিভাগের পাঁচ থানায় ৫৩২ জন, উত্তরা বিভাগের ছয় থানায় ৪৮০ জন, গুলশান বিভাগের ছয় থানায় ৩৮০ জন, মতিঝিল বিভাগের সাত থানায় ৬১০ জন, ওয়ারী বিভাগের সাত থানায় ৬৯০, মিরপুর বিভাগের সাত থানায় ৮২০ ও তেজগাঁও বিভাগের পাঁচ থানায় ৫৪০ জন রয়েছে।
মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, তালিকার ২ হাজার ২৮০ জন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি এবং নাশকতায় সরাসরি সম্পৃক্ত। এদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে ভয়ঙ্কর ক্যাডার বা সন্ত্রাসী হচ্ছে ৩০০ জন। যারা বেশির ভাগ সময় পুলিশকে টার্গেট করে নাশকতা চালিয়ে থাকে। এ তালিকার ক্যাডাররা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত।
তবে তালিকাভুক্ত এসব ক্যাডারদের ধরতে রাজধানীতে যৌথবাহিনীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বর্তমানে ঢাকার নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ৩৫ হাজার সদস্যস্যের সঙ্গে আরো ৬ হাজার যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা এবং সরকারি সম্পদ রক্ষায় নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা একটি বিশাল তালিকা নিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। অনেকে আমাদের ফোন করেও তথ্য দিচ্ছেন। কাজেই তথ্যদাতার সব সুরক্ষা প্রদান করবে পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যেসব এলাকায় যৌথ অভিযান আরো আগে শুরু হয়েছে ওইসব এলাকা থেকে অনেকে রাজধানীতে এসে আত্মগোপন করেছে। অনেকে তাদের আত্মীয়স্বজনের বাসায় লুকিয়ে আছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।’
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল জিয়াউল আহসান বাংলামেইলকে বলেছেন, ‘পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে রাজধানীতে যে অভিযান শুরু হয়েছে সেটি তালিকা অনুযায়ী চলছে। কোনো নিরপরাধ মানুষ যাতে হয়রানি না হয়, সে বিষয়টিও মাথায় রয়েছে। নাশকতাকারী ও অপরাধীদের অনেকেই আত্মগোপন আছে। অভিযানে প্রযুক্তির ব্যবহারও চলছে।’
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন সে নিরিখেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ রাষ্ট্রবিরোধী বা জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।’
এদিকে সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজধানীতে ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায় বিরোধী দল। আর এসব ঘটনায় রাজধানীতেই শুধু মামলা হয়েছে পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলা হচ্ছে ১২০টি। এ মামলাগুলোর মধ্যে ৮৭টি মামলায় জড়িত বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গোয়েন্দা পুলিশ অবশ্য চার শতাধিক মামলার মধ্যে দুইশর বেশি তদন্ত করছে। এর আগে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টন, রমনা, তেজগাঁও, মিরপুর, উত্তরা, রামপুরা, গুলশান, বাড্ডা থানায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি নেতাদের হুকুমের আসামি করা হয়। যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের আগের দায়ের করা নাশকতার মামলার আসামি করা হচ্ছে।
উৎসঃ বাংলামেইল২৪
Share on facebook Share on email Share on print
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন