আলোচিত দুই জাগরণ
01 Jan, 2014
বিদায়ী বছরে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল দুই জাগরণ। একটি গণজাগরণ অন্যটি হেফাজতে ইসলাম। সম্পূর্ণ ভিন্ন চেতনা থেকে দু’টি জাগরণ নতুন শক্তি হিসেবে আলোচনায় এসছিল দুনিয়া জুড়ে। রাজধানীর শাহবাগ ও বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জনতার বিস্ফোরণ ঘটেছিল পৃথক দু’টি সময়ে। গণজাগরণ মঞ্চের জন্ম হয়েছিল জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়কে ঘিরে। অন্যদিকে ঈমান ও আকিদা রক্ষায় ১৩ দফার আল্টিমেটাম দিয়ে সরকারের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল হেফাজত। গণজাগরণের মঞ্চের সূচনা হয়েছিল ৫ই ফেব্রুয়ারি। হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব ৬ই এপ্রিল। সংঘাতপ্রবণ বাংলাদেশের মূল ধারার রাজনীতিকে ধাক্কা দিয়েছিল এই দুই জাগরণ।
হেফাজতের ঝড়তোলা আবির্ভাব
৬ই এপ্রিল বাংলাদেশে আবির্ভাব ঘটেছিল এক নতুন শক্তির। বিরোধে-বিবাদে, দ্বন্দ্ব-সংঘাতে-সহিংসতায় সংক্ষুব্ধ রাজনীতির আকাশে উদিত হওয়া এ শক্তির নাম হেফাজতে ইসলাম। পরে স্মরণকালের বৃহত্তম গণসমাবেশ, লংমার্চ, সাংগঠনিক শক্তি দেখিয়ে তারা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল সরকারের প্রতি। ১৩ দফা দাবিতে আলটিমেটাম দিয়ে ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল সরকারের। তবে হেফাজতের সমাবেশকে ঘিরে ৫ই মে বাংলাদেশের ইতিহাসে রচিত হয় এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। দশ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ক্র্যাকডাউন শাপলা অভিযান পরিচালনা করে। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি লাইভ সমপ্রচার করায় সরকার বন্ধ করে দেয় দিগন্ত ও ইসলামি টেলিভিশন। হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব বছর তিনেক আগে। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগঠনটির। এর প্রধান করা হয় আধ্যাত্মিক ধর্মীয় নেতা ও হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীকে। তখন সংবিধানে ‘আল্লাহ্র ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দেয়ায় এবং নারী-নীতি ঘোষণার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল তারা। মাঝে-মধ্যে চট্টগ্রাম, বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকায় সমাবেশ করেছে। পুলিশ পাহারায় আন্দোলন করে আসা শাহবাগ চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় ৯ই মার্চ। ওইদিন তারা বক্তৃতা-বিবৃতি ও দাবি-দাওয়া জানিয়েছিল। কিন্তু সরকারের কার্যক্রমে হতাশ হয় সংগঠনটি। পরে ৬ই এপ্রিল রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের করার ডাক দেন আল্লামা আহমদ শফী। সরকারের নানা বাধা সত্ত্বেও ৬ই এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম সমাবেশ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে হেফাজতে ইসলাম। সমাবেশ শুরুর আগেই দক্ষিণে টিকাটুলি মোড়, উত্তরে ফকিরেরপুল বাজার, পূর্বে কমলাপুর বাজার, পশ্চিমে, দৈনিকবাংলা মোড়, পল্টন মোড় উপচিয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত লোকারণ্য হয়ে যায়। রাজধানীর চতুর্দিক থেকে পায়ে হেঁটে লাখ লাখ মানুষ সমাবেশে অংশ নেন। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বরের চারদিকের এলাকা। ওই সমাবেশে সরকারকে ১৩ দফা বাস্তবায়নের এক মাসের আলটিমেটাম দেন আল্লামা আহমদ শফী। নানা কর্মসূচির পাশাপাশি ৫ই মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা দেন তিনি। ওইদিন হেফাজতের মঞ্চে গিয়ে তাদের সমর্থন জানায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। এরপর ৫ই মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং ঢাকার মতিঝিলে তাদের দ্বিতীয় সমাবেশের আয়োজন করে। হেফাজতের ঘোরও কর্মসূচি ঠেকাতে দু’দিন আগে থেকেই সরকার দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সরকারের সব বাধা উপেক্ষা করে জনতার স্রোত ধেয়ে আসে ঢাকা অভিমুখে। পরে বাধ্য হয়ে হেফাজতকে অনুমতি দেয় সরকার। বিকালে শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশে সংগঠনটির আমীর আল্লামা আহমদ শফীকে আসতে না দেয়ায় রাতে শাপলা চত্বরে রাতে অবস্থান করে হেফাজতের কর্মীরা। সন্ধ্যায় হেফাজত কর্মীদের পাশে থাকতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন বেগম খালেদা জিয়া। বিকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের তুমুল সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, শান্তিনগর, কাকরাইল ও নয়াপল্টন এলাকা। এ সময় ওই এলাকায় বহু প্রতিষ্ঠান ও ফুটপাতের দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে হেফাজতের কর্মীদের মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা থেকে সরানোর উদ্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য অভিযান চালান। রাত আড়াইটার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন তারা। যৌথবাহিনীর ওই অভিযানে হেফাজতকর্মী, পুলিশ, বিজিবি সদস্যসহ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সাংবাদিকসহ আরও অনেকে আহত হন। পরদিন দুপুরে লালবাগের মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়া আল্লামা শফীকে হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। হেফাজতে ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, শাপলা চত্বরে তাদের হাজার হাজার কর্মী শহীদ হয়েছেন। ৬ই মে রাতে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন বিএনপি নয়াপল্টনে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করে। ৮ই মে সংবাদ সম্মেলন করে ডিএমপি থেকে দাবি করা হয়, শাপলা অভিযানে ১১ জন নিহত হয়। বছরের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামের এক ওয়াজ মাহফিলের বক্তৃতায় নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করে ব্যাপক সমালোচিত হন শাহ্ আহমদ শফী। তবে তার পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। শেষদিকে ২৪শে ডিসেম্বর ফের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় হেফাজত। তবে সরকারের বাধায় সমাবেশ স্থগিত করে সংগঠনটি।
ঢেউ তোলা এক গণজাগরণ
বিদায়ী বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল গণজাগরণ মঞ্চ। ৫ই ফেব্রুয়ারি সৃষ্টি হওয়া এই মঞ্চ বছরের শেষদিন পর্যন্ত ছিল আলোচনায়। তাদের আন্দোলনের সূত্র ধরে শেষ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলতে হয় জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চের কারণেই ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে হেফাজতে ইসলামের। এই মঞ্চ বন্ধের দাবিতে দেশব্যাপী পাল্টা জাগরণ সৃষ্টি করে এই অরাজনৈতিক সংগঠনটিও। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩ জন। দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মী। ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল ওই গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চের স্লোগানকন্যা লাকীকে নিয়ে গল্প লিখে বিতর্কিত হন কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই। প্রথমদিকে গণজাগরণ মঞ্চকে স্বাগত জানালেও দ্রুততম সময়ে অবস্থান পাল্টে ফেলে বিরোধী দল। সারা বছর পুলিশি পাহারায় আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা শেষ দিকে পাকিস্তানের দূতাবাস ঘেরাও করতে গিয়ে পিটুনির শিকার হন ওই পুলিশেরই। গত ৫ই ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিকালেই রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ১৫-২০ জন যুবক তার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ শুধু করে। সন্ধ্যা গড়াতেই ১৫-২০ জনের ছোট্ট বিক্ষোভের পরিসর বড় হয়ে যায়। বিক্ষোভে যোগ দেয় শ’ শ’ তরুণ। ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় শাহবাগের যান চলাচল। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাতভর অবস্থান করেন তরুণরা। যুদ্ধাপরাধীসহ জামায়াত-শিবিরের নামে নানা স্লোগান তৈরি করা হয়। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে শাহবাগ চত্বর। পরদিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শাহবাগ চত্বরে জড়ো হতে থাকেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সব শ্রেণী- পেশার মানুষ। ওই দিন বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে। তবে ৬ই ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয়ায় ওই দিনে রাতেই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নেয় ছাত্রলীগ নেতারা। নেপথ্যে আন্দোলনের নেতৃত্ব ছাত্রলীগের হাতে থাকলেও গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক করা হয় ডা. ইমরান এইচ সরকারকে। ৭ই ফেব্রুয়ারি গণজারণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফকে লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপ করে জনতা। ওই দিনই মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। ৮ই ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশে লাখো মানুষকে শপথ পড়ান গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার। ওই দিনই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড নামের একটি সংগঠন। ৯ই ফেব্রুয়ারি ইমরান এইচ সরকার ঘোষণা দেন, আন্দোলন কর্মসূচি ১৪ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে ওই দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের আপিল সংক্রান্ত একটি ধারার সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ১০ই ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করার ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। ১১ই ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের ৭ম দিন অভিনব কর্মসূচি ঘোষণা দেন ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেন, ১২ই ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা থেকে তিন মিনিট স্তব্ধ থাকবে পুরো দেশ। যে যার স্থানে তিন মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে। ওই দিন রাতে স্লোগানকন্যা লাকিকে মারধর করে ছাত্রলীগ নেতারা। ১৪ই ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের দশম দিনে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীর নিজ বাসার সামনে খুন হন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার রাজীব হোসেন। ওই দিন আন্দোলন কর্মসূচি বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু রাতে ব্লগার রাজীব খুন হওয়ার পর ফের লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৬ই ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের ১১তম দিনে নিহত ব্লগার রাজীবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ই ফেব্রুয়ারি বিকালে শাহবাগ গণজাগরণ চত্বরে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ব্লগার ও কার্টুনিস্ট তরিকুল ইসলাম শান্ত। ২১শে ফেব্রুয়ারি শাহবাগ চত্বরে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে টানা ৩৩ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১লা মার্চ থেকে ২০শে মার্চ পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে সংহতি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বেলা তিনটায় সমাবেশ ও শপথ অনুষ্ঠিত হয়। ১লা মার্চ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরসহ দেশের সব গণজাগরণ মঞ্চে বেলা তিনটা থেকে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করা হয়। ৩রা মার্চ পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ৫ই মার্চ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় বেলা তিনটায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ৬ই মার্চ নারায়ণগঞ্জে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৭ই মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ৮ই মার্চ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের নারী জাগরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ই মার্চ চট্টগ্রামে সমাবেশ করার জন্য রওনা হলে গণজাগরণ মঞ্চের গাড়িবহর ফেনী থেকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। ৫ই এপ্রিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ শেষে ফেরার পথে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙার চেষ্টা করে। এসময় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ৬ই মে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হটিয়ে দেয়। একই সঙ্গে ভোররাতে গণজারণ মঞ্চও ভেঙে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ব্যারিকেড তুলে দিয়ে শাহবাগ চত্বরের যান চলাচলও স্বাভাবিক করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে টানা তিন মাস ধরে পুলিশ পাহারায় শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অবসান ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াতের নেতাদের মামলার রায়ের দিনগুলোতে অবস্থান করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। ১৭ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় দেয়। সর্বশেষ ৯ই ডিসেম্বর বিকাল থেকে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি হলে ফের শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। ১২ই ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের রাতে আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শাহবাগে তাদের অবস্থান কর্মসূচি।
উৎসঃ manabzamin
Share on facebook Share on email Share on print
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন