মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩


৫ বছরে ৬৫ দিন হরতাল ২৩ দিন অবরোধ! 31 Dec, 2013 বর্তমান সরকারের ৫ বছরের মেয়াদে তাদের দেশ পরিচালনায় র্ব্যথতা, দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, একতরফা নির্বাচন বাতিলসহ নানা অভিযোগে বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট হরতাল অবরোধসহ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছে। সরকারের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন বছরের শেষে এবং নতুন বছরের শুরুতেও অব্যাহত রয়েছে। গত পাঁচ বছরে বিরোধী দল বিভিন্ন ইস্যুতে ৬৫ দিন হরতাল ও ২৩ দিন অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, সভা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বছরের শেষ সময়ে এসে সরকার বিরোধী জোট সরকারের একতরফা প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের জাতীয় পতাকা হাতে ঢাকার আসার আহ্বান জানান। এই কর্মসুচি ঘোষণার পর সরকার এই কর্মসুচি বানচাল করার লক্ষ্যে নিজেই সারাদেশকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখে ৩দিন। এই কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন অবরুদ্ধ করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে। তাকে তার বাসভবন থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে বছরের শেষ দিনটিতে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া সরকারের একতরফা নির্বাচন প্রতিহতের জন্য ১৮দলীয় জোট বছরের প্রথম দিন অর্থ্যাৎ ২০১৪ সালের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মহাজোট সরকারের আমলে বিভিন্ন ইস্যুতে ৫বছরে দেশব্যাপি ৬৫ দিন হরতাল আর ১৪ দিন অবরোধ পালন করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮দলীয় জোট। এর মধ্যে বিরতিহীন তিন দিনের হরতাল ছিল চার বার। টানা দুই দিনের হরতাল ছিল সাত বার। বিভিন্ন ইস্যুতে জেলাপর্যায়ে আরও প্রায় ৪০ দিনের মতো হরতাল পালন করেছে বিএনপি। তবে সরকারের আহ্বানে একদিনের একটি হরতাল স্থগিত করেছিল বিএনপি। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রথম দেশব্যাপি সড়ক-নৌ ও রেলপথ অবরোধ ডাকে বিএনপি। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে প্রথম দফা বিরতিহীন ৬০ ঘণ্টার অবরোধ ডাকে বিএনপি। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৩১ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে দলটি। চতুর্থ দফায় ৭২ ঘণ্টা ও পঞ্চম দফায় গত মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ১৮-দলীয় জোটর ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয়। মহাজোট সরকারের ১৮ মাসের মাথায় ২০১০ সালের ২৭ জুন গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংকটসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে প্রথম হরতাল ডাকে বিএনপি। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টে তার বাসভবনে থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে দ্বিতীয় এবং ৩০ নভেম্বর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দেশবিরোধী চুক্তি বাতিলসহ নানা ইস্যুতে তৃতীয়বারের মতো হরতাল পালন করে। এরপর আড়িয়াল বিল ইস্যুতে সংঘর্ষ ও খালেদা জিয়াসহ ২১ হাজার ব্যক্তির নামে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন করে বিএনপি। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিলের প্রতিবাদে ৫ জুন, তত্ত্বাবধায়কসহ ৭টি ইস্যুতে ১২ ও ১৩ জুন, তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালের দাবিতে ৬-৮ জুলাই পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা হরতাল পালন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২২ সেপ্টেম্বর ও ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ করার প্রতিবাদে শুধু ঢাকায় ৩ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনায় ২০১২ সালের ২২-২৪ এপ্রিল টানা ৭২ ঘণ্টা, একই দাবিতে ২৯-৩০ এপ্রিল হরতাল করে বিএনপি। হরতালে গাড়ি পোড়ানো মামলায় ১৮-দলীয় জোট নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৭ মে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে জোট। ৪ ডিসেম্বর জামায়াতের হরতালে নৈতিক সমর্থন দেয় বিরোধী জোটের প্রধান শরিক বিএনপি। ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচিতে চার কর্মী হত্যার প্রতিবাদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১১ ডিসেম্বর পূর্ণদিবস এবং দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১২ ডিসেম্বর অর্ধদিবস হরতাল পালন করে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি হরতাল পালন করে বিএনপি। দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মানুষের ওপর গুলি ছুড়ে গণহত্যার প্রতিবাদে ৫ মার্চ, বিএনপির সমাবেশে গুলির প্রতিবাদে ৭ মার্চ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান ও নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৩ মার্চ, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযানের সময় গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবিতে ১৮ থেকে ১৯ মার্চ, নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার প্রতিবাদে ২৭ ও ২৮ মার্চ হরতাল পালন করে ১৮ দলীয় জোট। দলের শীর্ষনেতাদের মুক্তির দাবিতে ৯ ও ১০ এপ্রিল, নেতাদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতির দাবিতে ২৩-২৪ এপ্রিল হরতাল পালন করে বিএনপি। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সশস্ত্র অভিযানের মাধ্যমে গণহত্যার অভিযোগে ৮ ও ৯ মে সারা দেশে হরতাল পালন করে ১৮ দল। গত ১৯ মে একদিনের হরতাল ডাকলেও ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে তা প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, নেতাকর্মীদের মুক্তি, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও রাজপথে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের প্রতিবাদসহ ৫ ইস্যুতে ২৬ মে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ২৯ মে হরতাল পালন করে বিএনপি। সর্বশেষ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল এবং একই দাবিতে ৪ নভেম্বর থেকে ফের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২৩ দিনই অবরোধ ও হরতাল হয়েছে। উৎসঃ প্রাইমনিউজ Share on facebook Share on email Share on print 4

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন