শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩


৪৮ প্রার্থীর আয় বেড়েছে গড়ে ৫৮২ শতাংশ 28 Dec, 2013 দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন এমন ৪৮ জন প্রার্থীর পাঁচ বছরে আয় বেড়েছে গড়ে ৫৮২ শতাংশ। এ সময়ে তাঁদের সম্পদ বেড়েছে গড়ে ৩৬৩ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে আয় বেড়েছে হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর। বৃদ্ধির হার ৩২ হাজার ৯৮৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান। তাঁর আয় বৃদ্ধির হার আট হাজার ৪২২ শতাংশ। তবে সম্পদ বৃদ্ধির হিসাবে সবাইকে টপকে গেছেন মান্নান খান। তাঁর সম্পদ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৯৭ শতাংশ। এ খাতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা নূর-ই-আলমের সম্পদ বৃদ্ধির হার ছয় হাজার ৪২৪ শতাংশ। তবে নিট সম্পদের হিসাবে সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তিটি হলেন নূর-ই-আলম চৌধুরী। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৩১ হাজার ৪৩৭ টাকা। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এই হিসাব তুলে ধরে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। মূলত ২০০৮ সালে যেসব প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য হলফনামা জমা দিয়েছেন, সেই ৪৮ জনের আয় ও সম্পদের হিসাবই প্রকাশ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ড. শাহদীন মালিক ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আকারে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রদত্ত আট ধরনের তথ্যের (আয়কর বিবরণীসহ) ভিত্তিতেই সংসদ সদস্য প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের এ হিসাব প্রকাশ করে সুজন। সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অনেক প্রার্থীর তথ্যই আমাদের বিস্মিত করেছে। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেকেই মন্ত্রী-এমপি হয়ে তা ভুলে যান। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁরা আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগের পাশাপাশি যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার না হয় তাহলে জনপ্রতিনিধিরাও যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হন। তাই ভোটারদের যেমন প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে, শুনে ও বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে, তেমনি জনপ্রতিনিধিদেরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সচেষ্ট হতে হবে।’ বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে সরকারের সর্বোচ্চ আট পদে যাঁরা অধীন হবেন তাঁদের বেতন-ভাতাদি সংসদের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। আর এ পদের ব্যক্তিরা মুনাফার আশায় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না। মূলত বেতনের বাইরে তাঁদের আয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী যাঁদের আয় ও সম্পদ বেড়েছে তাঁদের অধিকাংশই এ আট পদের মধ্যে ছিলেন। একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা সমপদের ব্যক্তির যদি বেতনের বাইরে আয়ের সুযোগই না থাকে তাহলে তাঁরা কিভাবে পাঁচ বছরের মধ্যে এত বেশি আয় বৃদ্ধি করেন। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদেরও সরকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরকারের বড় বড় কাজ তাঁদের কম্পানিগুলোই বাগিয়ে নেয়।’ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক হাজার ১০৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও প্রার্থিতা বাতিল ও প্রত্যাহারের পর ১৫৪ জন তাঁদের আসনে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। বাকি ১৪৬টি আসনে ৩৮৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুজনের তথ্য অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ ৪৮ প্রার্থীর মধ্যে আয় বৃদ্ধির হার মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৪৩ শতাংশ, প্রতিমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ৪৬৪ শতাংশ এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপদের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৭১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয় বেড়েছে ১৩৬ শতাংশ। ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর আয় বৃদ্ধির হার ৪ হাজার ৪৩৫ শতাংশ। আয় বৃদ্ধির হিসাবে নূর-ই-আলম ও মান্নান খানের পরেই রয়েছেন সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তাঁর আয় বেড়েছে ৮ হাজার ৭ শতাংশ। এ ছাড়া মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে মো. আব্দুল হাইয়ের ২ হাজার ৯২৩ শতাংশ, মো. আফছারুল আমীনের ২ হাজার ৪৮০ শতাংশ, হাছান মাহমুদের ২ হাজার ৩৬ শতাংশ এবং চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদের ১ হাজার ৮৬০ শতাংশ আয় বেড়েছে। সুজনের বিশ্লেষণে ৪৮ জন প্রার্থীর সম্পদ বৃদ্ধির হার মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৪৭ শতাংশ, প্রতিমন্ত্রীদের ৪৫৯ শতাংশ এবং সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপদের ক্ষেত্রে ১ হাজার ৬৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সম্পদ ৪৬ শতাংশ এবং ডেপুটি স্পিকারের ২৩৮ শতাংশ বেড়েছে। শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি আব্দুল মান্নান খানের সম্পদ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৯৭ শতাংশ। এরপর নূর-ই-আলম চৌধুরীর ৬ হাজার ৪২৪ শতাংশ, হাছান মাহমুদের ৩ হাজার ৮৯২ শতাংশ, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ১ হাজার ৯৬৯ শতাংশ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ১ হাজার ১৩৫ শতাংশ সম্পদ বেড়েছে। নিট সম্পদের দিক থেকে ৪৮ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৩১ হাজর ৪৩৭ টাকার সম্পদের মালিক নূর-ই-আলম চৌধুরী। এ ছাড়া ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকরা হচ্ছেন আ ফ ম রুহুল হক (১৫ কোটি ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৬), হাছান মাহমুদ (১৫ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৮৭০), সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (১১ কোটি ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৮), ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন (১০ কোটি ৫০ লাখ ২৯ হাজার ৫০৮) ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর (১০ কোটি ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৭৭৬)। সুজনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নিট সম্পদ ৯০ শতাংশ কমেছে। আয় কমলেও সম্পদ বেড়েছে পাঁচজনের : সুজনের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা গেছে, ৪৮ প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনের আয় কমলেও তাঁদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। তবে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ১০২ শতাংশ। বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরের আয় ৫৮ শতাংশ কমলেও সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ শতাংশ। সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকিরের আয় কমেছে ২৩ শতাংশ। যদিও তাঁর সম্পদ ১৬ শতাংশ বেড়েছে। সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর আয় কমেছে ৭৪ শতাংশ। তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৩৫৮ শতাংশ। হুইপ আ স ম ফিরোজের আয় ২৮ শতাংশ কমলেও সম্পদ ৮২ শতাংশ বেড়েছে। সুজনের বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে ৫৪১ জন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৩১ লাখ টাকার আয়কর দিয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর প্রায় ১২ লাখ টাকা আয়কর দিয়েছেন আ ফ ম রুহুল হক। উৎসঃ কালের কন্ঠ Share on facebook Share on email Share on print 9

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন