সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩


বাংলাদেশে বিদ্রোহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে 31 Dec, 2013 আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বড় রাজনৈতিক অচলাবস্থা গ্রাস করেছে বাংলাদেশকে এতে কোন সন্দেহ নেই। এ বিষয়টি উদ্বেগের সঙ্গে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে আন্তর্জাতিক মহলে। এর ফলে বাংলাদেশে বিদ্রোহের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা যে নেই সেটা বলতে গেলে জানা কথা। পরিস্থিতি পূর্ণ অবয়ব না পেতেই সরকারের পতন ঘটতে পারে। এভাবে নির্বাচন হবে অর্থহীন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই। এর শিরোনাম ‘বাংলাদেশ পোলস: কনানড্রাম অব কমপ্রোমাইজ অর ক্রেডিবিলিটি’। এতে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গঠিত কতগুলো দলের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে। সেগুলো হলো: এই নির্বাচন কি অবাধ ও সুষ্ঠু হবে? নির্বাচনী আইন (ইলেকট্রোরাল রুলস) ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এ দল থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি নত হয়ে থাকবে কিনা? সমপ্রতি যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তাতে বলা যায় উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। বিরোধী দল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তারা বলেছে, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে হাজার হাজার সেনা সদস্য। বিএনপি ২৯শে ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ধারণা করা হয় তা বানচাল করে দেয়াই ছিল উদ্দেশ্য। আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তা হলো, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অনমনীয়তা বিএনপিকে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বর্জন করিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, যদি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয় তাহলে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন হবে প্রহসনের। প্রতিবেশী দেশগুলো ও দূরবর্তী দেশগুলো এ বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে যে সাড়া দিয়েছে তা হলো- বাংলাদেশে একটি নির্বাচন হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু। অথবা কমপক্ষে এ নির্বাচন যেন সে রকম হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষকরা বলেছে, রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ সহিংসতা বাড়ছে তা অবিলম্বে থামাতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে অধিকতর স্বস্তিকর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। কিন্তু এখানে বলতে হয়, নয়া দিল্লির এই পক্ষপাতিত্ব ভুল হতে পারে। তাদেরকে সুপারিশ করা হয়েছে যে, বিএনপির প্রতি আরও বেশি আস্থা প্রকাশ করতে হবে ভারতকে। অন্য যে কোন দেশের মতো ভারতের পররাষ্ট্রনীতি আছে। বাংলাদেশেরও আছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে, নির্বাচনের পর যে দলই বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসুক না কেন ভারত গণতন্ত্রের মৌলিক মতবাদে অবিচল থাকবে। এ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি সমপ্রতি বিজেপি’র সিনিয়র নেতা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বলবীর পুঞ্জের টেলিকনফারেন্সে পরিষ্কার হয়েছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের ফল ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ওপর সুদূরপ্রসারী এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের পরস্পরের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে লড়াই করতে গিয়ে যে বিদ্রোহী গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে তাদের কারণে এই উদ্বেগ। বিজেপির এমপি ও দলের পররাষ্ট্র বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্য তরুণ বিজয় বলেছেন, যদি কার্যকরভাবে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা না হয় তাহলে এর প্রভাব সরাসরি আমাদের সীমান্তে ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে। আমাদের নিরাপত্তা আক্রান্ত হতে পারে অনুপ্রবেশের কারণে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইতিহাস বলে যে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে যেতে পারে এবং আওয়ামী লীগকে পরের মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দিতে চাইবে না তারা। বাংলাদেশে এ রকম বেপরোয়া হয়ে ওঠার পরিবেশ বিদ্যমান। দু’দলের নেতাই তাদের ঘনিষ্ঠ উত্তরসূরিদের রাজনৈতিক সুবিধাজনক পদে বসানোর জন্য দৃশ্যত মরিয়া। তারা এক্ষেত্রে সফল হবেন নাকি হবেন না- তা এখন একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য জোর চাপ দিয়ে যাচ্ছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধি ক্যাথেরিন অ্যাশটনের এক মুখপাত্র বলেছেন, সমপ্রতি জাতিসংঘের উদ্যোগ সহ অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো স্বচ্ছ, সবার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে সক্ষম হয় নি। জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ অবস্থায় কিভাবে নির্বাচন হবে বড় রাজনৈতিক দলগুলো তা নিয়ে ঐকমত্যে আসতে পারে নি। এ বিষয়টি লক্ষ্য করছে যুক্তরাষ্ট্র। উদভূত পরিস্থিতিতে এ নির্বাচনে কোন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেকের কাছে এর মাধ্যমে বার্তা পৌঁছেছে যে, এভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু উপায় অবলম্বন না করে যদি সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হয় তাহলে তা হবে অর্থহীন। উৎসঃ মানবজমিন Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন