শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩


ডেডলাইন ২৯ ডিসেম্বর : আতঙ্কে নগরবাসী 26 Dec, 2013 বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটনেতা বেগম খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। অপরদিকে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা এ কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। উভয় দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে নগরবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই নিদর্লীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এর সঙ্গে একত্মতা জানিয়ে আসছে শরিক দলগুলো। সরকার ও বিরোধী জোটের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছে দেশী-বিদেশি মহল। তারা উভয় দলকে সমঝোতার পথে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনোভাবেই সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে না। এ অবস্থায় ১৮ দলীয় জোট একের পর এক হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে। এসব হরতাল ও অবরোধে বহু হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এসব কর্মসূচির কারণে দেশের অর্থনৈতিক ভীতও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের ক্ষতির কথা বুঝতে পেরেই আন্দোলন ভিন্ন ধারায় নিয়ে যেতে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যার নাম ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’। ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশ থেকে কৃষক, শ্রমিক, কমার, কুমার, পেশাজীবীসহ সব ধর্ম-গোত্রের মানুষকে ঢাকায় আসার, রাজপথে নামার আহবান জানান বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আরো বলেছেন, এ কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল। তাই এ কর্মসূচির দিন ক্ষমতাসীনদের নৌপথ, সড়কপথ বন্ধ না করার আহবান জানান তিনি। সেইসঙ্গে যানবাহন চলাচলে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি না করতে আহবান জানান সরকারকে। এদিকে একতরফাভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণার পরপরই তাকে চিকিৎসার নামে আটক রাখা হয়েছে। অনেক প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি বসানো হয়েছে। চলছে শীর্ষ নেতা-কর্মীদের আটক অভিযান। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখার কিছুক্ষণ আগেই ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আটক করেছে প্রশাসন। তবুও ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে না ১৮ দলীয় জোট। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা আসছে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, যেকোনো ভাবেই হোক ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি সফল করা হবে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি প্রতিহত করতে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসবের কারণে নগরীতে বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ভর করছে আতঙ্ক। মতিঝিল এজিবি কলোনির বাসিন্দা আফজাল হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দুই দলের কর্মসূচির কারণে পরিবাবের সবাই আতঙ্কে আছি। কয়েকদিন আগে কলোনি এলাকায় দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ছেলে-মেয়েরা কোচিং সেন্টারে পড়তে যায়। কখন কী হয়ে যায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। এখন আবার ২৯ ডিসেম্বর উভয় দলের কোনো সংঘাত হয় কি-না এ নিয়েও দুশ্চিতা বাড়ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহবান জানান তিনি। মতিঝিলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা দিনে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাই। জনগনের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। তারা জনগণের কথা চিন্তা না করে নিজেদের কথা চিন্তা করছে। ক্ষমতায় বসার পর তা আর ছাড়তে চায় না। এ কারণেই সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। একটি পোশাক কারখানার মালিক রায়হান উদ্দিন। পরিবার নিয়ে টিকাটুলি এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা হচ্ছে। অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। জনগণ ক্ষমতার সিংহাসনে বসিয়েছে একটি দলকে। অথচ ক্ষমতা আকড়ে ধরে তারা সাধারণ জনগণকেই নির্মমভাবে হত্যা করছে। একদিন এদের বিচার হবে। ২৯ ডিসেম্বর একটি দল আগে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। অথচ তাদেরকে কর্মসূচি পালন করতে দেবে না বলে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। উভয় দলের কঠোর অবস্থানের কারণে যেকোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটনার অশঙ্কা করছেন তিনি। তাই প্রতিহতের ঘোষণা না দিয়ে সমাধানের ঘোষণা প্রত্যাশা করেন তার মতো সাধারণ মানুষ। এদের পাশাপাশি রাজধানীর সাধারণ মানুষসহ নিম্নআয়ের মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে রাজধানীতে চলাচলকারী পরিবহন শ্রমিকরা। যেকোনো কর্মসূচি হলেই গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন তারা। ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী গাজীপুর পরিবহনের শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২৯ ডিসেম্বর দুই দলই কর্মসূচি দিয়েছে। মালিক নির্দেশ দিয়েছে সেদিন যাতে গাড়ি বের না করি। যদি কোনো ক্ষতি হয় এর দায় নেবে কে? এমন প্রশ্ন করেন তিনি। সদরঘাট-মিরপুর রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের মালিক কাজী আনোয়ার জাহিদ বলেন, আমরা সমিতির মাধ্যমে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেব। সেদিন দুই দলই মাঠে থাকবে। যে কোনো সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা কোনো লোকসানে পড়তে চাই না। এ সম্পর্কে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে জানান, এখন সব মানুষ অবরুদ্ধ। বাকস্বাধীনতা নেই। এই মুহূর্তে এরচেয়ে আর কিছু বলার নাই। জাতীয় পার্টির একাংশের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মসীহ প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে জানান, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ সভা। তা প্রতিহত করার ঘোষণা বড়ই দুঃখজনক। গণতান্ত্রকামীদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে জানান, যে কোনো রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করবে এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াও হলে তাতে জনগণের নিরাপত্তার ওপর আঘাত আসে। দেড় মাস ধরে হরতাল অবরোধের কারণে সব কাজ-কর্মে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। দেড়মাসে বিএনপি যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তাতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। নিয়ন্ত্রণ ছিল অন্য একটি দলের। এবারও বিএনপি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলা যাচ্ছে না। সেদিনতো বিএনপির কর্মসূচির নামে জোটের অন্য কেউ যেকোনো ধরনের অস্বস্তিকর কোনো ঘটনা বা নাশকতা ঘটাতে পারে। আর অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে সাংবিধানিকভাবে তার দায় সরকারের ওপর পড়ে। তাই কর্মসূচির নামে যাতে কোনো হানাহানি ও অনৈতিক কার্যক্রম না হয় সেদিকে সরকার অবশ্যই খেয়াল রাখবে। তাই প্রশাসনের কড়া নজড়দারি থাকবে। নগরবাসী তথা সাধারণ নাগরিকদের যাতে জানমালের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখা সাংবিধানিক দায়িত্ব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। উৎসঃ প্রাইমনিউজ Share on facebook Share on email Share on print 3

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন