সংবাদ >> মহানগর
ঢাকা ছেড়ে সিলেটমুখী থার্টিফার্স্টের ডিজেরা
31 Dec, 2013
আলো-আঁধারি পরিবেশ। মদ ও বিয়ারের গ্লাসের টুংটাং শব্দ। এরই মাঝে আছে আধখোলা বসনের ডিজে নারীর নৃত্য। এভাবে সিলেটে থার্টিফার্স্ট পালনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে ডিজে নারীদের। রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল থাকায় এবার সিলেট নগরীতে ঢাকঢোল পিটিয়ে থার্টিফার্স্ট নাইটের প্রস্তুতি চলছে না। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকায় গেলবারের মতো সিলেট নগরীর হোটেল, মোটেল রেস্তরাঁতে নেই তেমন প্রস্তুতি। কিন্তু থেমে নেই আয়োজন। এই আয়োজনে বেছে নেয়া হয়েছে পর্যটনস্থানগুলো। এর বাইরে আছে শৌখিন টাকাওয়ালাদের গড়ে তোলা অর্ধশতাধিক বাংলোবাড়ি। পুলিশ জানিয়েছে, থার্টিফার্স্টের নামে কোন উন্মাদনা সহ্য করা হবে না। এজন্য আজ সকাল থেকে থার্টিফার্স্টের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। থার্টিফার্স্টে মেতে ওঠে সিলেট নগরী। প্রবাসী এ শহরের প্রবাসীরাই থার্টিফার্স্টের মুল আয়োজক। তাদের ঘিরেই চলছে থার্টিফার্স্টের প্রস্তুতি। গতবার থার্টিফার্স্ট নাইট পালনে আগে থেকেই ঢাকঢোল পিটিয়ে মাঠে নেমেছিল আয়োজকরা। নগরীর রোজভিউ, স্পাইসি, হোটেল পর্যটনসহ বেশ ক’টি হোটেল ও মোটেলে ঘোষণা দিয়ে থার্টিফার্স্টের আয়োজন করেন। কিন্তু এবার অস্থির অবস্থার কারণে থার্টিফার্স্ট পালনের কোন প্রস্তুতি গতকাল পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তবে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, থার্টিফার্স্ট উদযাপন করা হচ্ছে এবার চার দেয়ালের মধ্যে। বিভিন্ন হোটেলে স্বল্প পরিসরে এই আয়োজন চলছে। আর এতে ড্যান্স করতে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে ডিজে রমণীদের। একই সঙ্গে চলছে মদ ও বিয়ারের আয়োজন। কোন উচ্ছৃঙ্খলতা করে নয়, নীরবেই ডিজে পার্টি এবং মদ বিয়ার দিয়ে বরণ করা হবে এবারের নতুন খৃষ্টীয় বর্ষকে। সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের থার্টিফার্স্ট নাইটে এবার ঢাকা থেকে শতাধিক ডিজে রমণী আসছেন। ঢাকায় ব্যাপক কড়াকড়ি থাকায় কম টাকায় সিলেটমুখী হয়েছেন ডিজেরা। এ কারণে চোখের আড়ালেই তাদের নিয়ে থার্টিফার্স্ট নাইটের প্রস্তুতি চলছে। সিলেট নগরীর বেশ কয়েকটি হোটেল ও মোটেল এবং উপশহর এলাকার কিছু ফ্ল্যাট বাড়িতে চলছে এই আয়োজন। ঘরোয়া পরিবেশে আয়োজন থাকায় কারও নজরে পড়ছে না এই প্রস্তুতি। তবে, ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থার্টিফার্স্টে বিশেষ করে লন্ডন প্রবাসীরা ঘরোয়া পরিবেশে আয়োজন করছেন অনুষ্ঠানের। আর এতে নিতান্তই বন্ধু-বান্ধব ছাড়া কারও দাওয়াত নেই। এছাড়া সিলেট শহরতলীর বিমানবন্দর রুট, তামাবিল রুট ও সুনামগঞ্জ রুটের নির্জন পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা বাংলোবাড়িতে চলছে প্রস্তুতি। সিলেটের বিমানবন্দর ও তার আশপাশ এলাকার অন্তত ২০টি স্থানে ডিজে ও মদ-বিয়ারের আয়োজনে থার্টিফার্স্টের প্রস্তুতি চলছে। ওই এলাকার এক আয়োজক জানিয়েছেন, তিনি তার বাংলোবাড়িতেই করছেন থার্টিফার্স্টের আয়োজন। এই আয়োজনে ডিজের পাশাপাশি সিলেটের কণ্ঠশিল্পীরাও থাকবেন। নেচে-গেয়ে গোটা রাত থার্টিফার্স্ট উদযাপন করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি হোটেল ও মোটেল রয়েছে। শহরের বাইরে নির্জন এলাকা হওয়ায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে চলছে থার্টিফার্স্টের প্রস্তুতি। আর এসব প্রস্তুতিকে বৈধ করতে মধ্যরাতের আগ পর্যন্ত কোথাও কোথাও ফ্যাশন শো’র আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় ফ্যাশন শো পালনের পর মধ্যরাত থেকে থার্টিফার্স্ট উন্মাদনায় মেতে উঠবে ওই এলাকা। এদিকে, থার্টিফার্স্টে সিলেটের স্থানীয় মডেল ও শিল্পীরাও বসে নেই। তারাও ইতিমধ্যে বিভিন্ন আসরে ডিজে পার্টিতে বুকিং হয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে সিলেটের ডিজে শিল্পী তিন্নি, মুন্নি, রিয়া, মৌ, মিলি, শাওন, শোভা, মাহি, পড়শী, রুমীসহ বেশ ক’জন ডিজে এগিয়ে রয়েছেন। ডিজে পার্টিতে তাদের বেশ কদর রয়েছে। পাশাপাশি বাউল গানের শিল্পীরাও এবারে ডিজে পার্টিতে গান পরিবেশনের জন্য যাচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে, এ ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব মানবজমিনকে জানিয়েছেন, থার্টিফার্স্টের নামে পরিবেশ অশান্ত করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে কেউ যাতে খোলামেলা আয়োজন করতে না পারে সেজন্য পুলিশ আজ থেকেই মাঠে থাকবে। একই সঙ্গে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতেও পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
তথ্য আছে প্রেস ক্লাবে জঙ্গিরা মিটিং করে: বেনজীর
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জঙ্গিরা মিটিং করে এমন তথ্য আছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ। গতকাল সকাল ১১টার দিকে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, প্রেস ক্লাবে জঙ্গিরা মিটিং করে। একটি গোষ্ঠী জাতীয় প্রেস ক্লাব ও হাইকোর্টকে রাজনৈতিক স্বার্থে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। জাতীয় প্রেস ক্লাব সবার। একটি বিশেষ গোষ্ঠী জাতীয় প্রেস ক্লাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না। এদিকে সন্ধ্যায় এক বিবৃতির মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ। যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্য মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী কোন ষড়যন্ত্রের পূর্ব লক্ষণ।
সকাল ১১টার দিকে থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ ছাড়াও অতিরিক্ত কমিশনার ইব্রাহীম ফাতেমী, মিলি বিশ্বাস ও শেখ মারুফ হাসান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের ওপর যুবলীগের হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির আড়ালে আদালত চত্বরে আইনজীবীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। পরে পুলিশ অনুমতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে আইনজীবীদের আড়ালে বহিরাগতরা অবস্থান নিয়েছিল জানিয়ে কমিশনার বলেন, আমি অনুরোধ করব, আদালত পাড়াকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে যারা ব্যবহার করছে তাদের চিহ্নিত করতে সুপ্রিম কোর্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। একই ভাবে প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছেও আহ্বান জানান তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে বালুভর্তি ট্রাক কেন রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে সরকার সমর্থককদের লাঠি মিছিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, এটা শুধু লাঠি না। লাঠির মাথায় পতাকা ছিল। এটা পতাকা মিছিল ছিল।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক আবদাল আহমেদ বলেন, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের বক্তব্যটি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তার এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও তার জন্মলগ্ন থেকে দেশের সকল গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সূতিকাগার হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রেস ক্লাব সবসময়ই গণতান্ত্রিক চেতনা লালন করে ও দেশ জাতির কল্যাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রেস ক্লাবের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন বক্তব্য ক্লাবের গণতান্ত্রিক চেতনা ও ঐতিহ্যের প্রতি চরম আঘাত। ক্লাবের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকলেও ক্লাবের অখণ্ডতা, ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তির প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধ। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত ও সাংবাদিকদের প্রতি কটাক্ষ। তার দায়িত্বহীন ও অসত্য বক্তব্যে ক্লাবের আট শতাধিক সদস্য তথা গোটা সাংবাদিক সমাজ ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। এ ধরনের বক্তব্য সুদূরপ্রসারী কোন ষড়যন্ত্রেরই পূর্বলক্ষণ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের মন্তব্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের প্রতি তার উষ্মা প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য না দিয়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বিষয়টি পুলিশ মহাপরিদর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উৎসঃ manabzamin
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন