সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩


একটি খুন ও পারিবারিক বন্ধন আতাউর রহমান Samakal Main Logo
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০:০০ মেগাসিটি ঢাকায় নানা কারণেই প্রতি মাসে অন্তত ২০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো খুন পারিবারিক বন্ধনের ভিতটাই নাড়িয়ে দেয়। এমন কিছু খুন আছে, যা আদরের সন্তানকে নিয়েই চিন্তায় ফেলে দেয় সব বাবা-মাকে, যা শুনলে হৃদয় কেঁপে ওঠে যে কারোরই। ২০১৩ সালের আগস্টে রাজধানীতেই ঘটে এমন একটি হত্যাকাণ্ড। কিশোরী মেয়ের হাতে বাবা-মাকে খুনের ঘটনাটি বছরের বাকি সময়জুড়েই আলোচিত ছিল। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল বাবা-মাকে। এ বছর ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলীবাগে ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশের বিশেষ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান। শুধু কি খুন! কোনা ভয়ঙ্কর শব্দচয়নেই এমন নৃশংস ও নিষ্ঠুর হত্যার বাস্তব বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানের হাতে খুন হয়েছিলেন এ বাবা-মা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক আঘাত করে মেয়ে তার বাবা-মাকে খুন করেছিল। এমন খুনের কারণও ছিল নগণ্য। শুধু ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ূয়া আদরের মেয়ের বিপথগামিতা ঠেকাতে আর কড়া শাসনে রাখতে গিয়েই সন্তানের হাতে খুন হয়েছিলেন এ বাবা-মা। খুনে প্ররোচনা ছিল ঐশীর কয়েক বন্ধুর। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল গৃহকর্মী সুমি। বাবা-মাকে খুনের পর ঐশী তার একমাত্র ছোট ভাই শিশু ওহী রহমানকে নিয়ে পালিয়ে যায়। কয়েক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেয় ১৯ বছর বয়সী ঐশী। তবু নিরাপদে থাকতে পারেনি সে। পিতৃমাতৃ হন্তারক ঐশী ঘটনার তিনদিন পর ১৭ আগস্ট নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাবার সহকর্মী পুলিশের কাছে রিমান্ডে থাকার পর ২৪ আগস্ট আদালতে জবানবন্দি দেয় বাবা-মায়ের এ ঘাতক। জবানবন্দিতে ঐশী বাবা-মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে জানিয়েছিল_ হত্যার আগে কফির সঙ্গে তাদের ৬০টি ঘুমের বড়ি খাওয়ানো হয়েছিল। এরপর মাকে ছুরি দিয়ে ১১টি আঘাত করে সে আর ঘুমন্ত বাবাকে দুটি আঘাত করলেই তিনি মারা যান। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে ঐশী দাবি করে, পরিবারে তার কোনো স্বাধীনতা ছিল না। শুধুই বাধা আর শাসন। তাই তাদের খুন করার পরিকল্পনা হয়। আদালতে অনুতপ্ত ঐশী বলে, 'এখন বুঝছি আমি বড় ভুল করেছি। আই লস্ট মাই ভ্যালুয়েবল প্যারেন্টস। আই অ্যাম কিলার। আই কিলড দেম।' এরপর থেকেই ঐশী কাশিমপুরের নারী কারাগারে বন্দি রয়েছে। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর সমকালকে জানান, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই ঐশীসহ হত্যাকাণ্ডে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন