Wed, 01 Jan, 2014 02:49:14 AM
ভোট বাংলাদেশে, তৎপরতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
নতুন বার্তা ডেস্ক
ঢাকা : ভোট বাংলাদেশে। তৎপরতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামি লীগ-বিএনপি ‘সহমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ’ হওয়ায় আবারও হতাশা প্রকাশ করেছে আমেরিকা। সেই সঙ্গেই এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলিকে ‘আরো তৎপর’ হতে বলেছে ওয়াশিংটন। মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যারি হার্ফ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে হিংসা বন্ধে অগ্রগতি হলেও এখনো অনেক কিছু করার আছে।’ এর আগে নির্বাচনের ‘উপযোগী পরিবেশ’ তৈরি হলে তবেই পর্যবেক্ষক পাঠাবে বলে জানায় ওয়াশিংটন। সোমবার সেই হতাশা ফের প্রকাশ করে হার্ফ বলেন, কিন্তু এখনো ‘সেরকম কিছু’ ঘটেনি।
আজ কলকাতার দৈনিক গণশক্তি পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এসব লিখেছে। প্রতিবেদনটি এখানে তুলে ধরা হলো:
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই, মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিরোধীনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা। দেড় ঘণ্টা তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। পরে সাংবাদিকদের মোজিনা কিছু না বললেও লিখিত বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য’ একটি নির্বাচনের পথ বের করতে রাজনৈতিক দলগুলির ‘এখনই আলোচনায় বসা আরও জরুরী হয়ে পড়েছে’। সোমবারই খালেদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোড়া থেকেই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ‘গঠনমূলক আলোচনার’ পক্ষে। প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচনের তারা বিরোধী। ডিসেম্বরের ১১তারিখ মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি টেলিফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানিয়েছেন, হাসিনা কেরিকে বলেছেন, ‘আমাদের বিষয় আমাদেরকেই ভাবতে দিন।’
‘পরের হাতে কলকাঠি’ মানে কী, হাসিনা তা দস্তুরমতো জানেন। বলেনও সেকথা, ‘২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি, গ্যাস রপ্তানি করতে রাজি হইনি বলে।’ ইতোমধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের করণীয় কাজের তালিকা তুলে ধরেছে। কিংবা বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে দৌড়ছে দিল্লি পর্যন্ত।
এদিকে দু’দিনের ‘ঢাকা চলো’ অভিযানে মোটেই সাড়া ফেলতে না পেরে নববর্ষ থেকে রেল, সড়ক, জলপথে ‘লাগাতার অবরোধের’ ডাক দিয়েছে বিএনপিসহ বিরোধীরা। এদিন অনেকটা স্বাভাবিক চেহারায় ছিল জনজীবন। ঢাকা ছিল নিজের চেহারায়। পল্টনে থিকথিকে ভিড়। পরিচিত যানজট। রিকশা ফুটপাতে। মোড়ে মোড়ে পুলিস। সেনাবাহিনীর টহল। তারমধ্যেই দূরপাল্লার বাস। সরকারি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাস্তায় বেসরকারি বাস।
‘কেউ যদি নির্বাচনে না আসে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। তাতে নির্বাচন আটকে যাবে না।’ এদিন এই প্রতিবেদককে একথা বলেছেন আওয়ামি লিগের অন্যতম শীর্ষনেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছে সংবিধান। এর বাইরে সংবিধানে কোনও নির্দেশ নেই। আমরা এর বাইরে যাব কীভাবে? তাহলে তো গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা তো এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার স্রোত ধরেই এসেছি। তবে আলোচনার পথ খোলা আছে।’
যেমন বলেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এদিন দুপুরে তোপখানা রোডে দলের সদরদপ্তরে নির্বাচনী ইশ্তেহার প্রকাশ করে মেনন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রাখতেই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।’ বিরোধীরা থাকলে ভালো হতো। ‘এটা আদৌ স্বস্তিদায়ক বিষয় না। সুখকরও নয়। কিন্তু কী করা যাবে?’ তার কটাক্ষ, ‘আমন্ত্রিত অতিথি যদি না আসেন, তাহলে কি মেয়ের বিয়ে আটকে থাকে? কেউ যদি জেগে ঘুমোন কী করবেন?’
ওয়ার্কার্স পার্টির ইশ্তেহারে সতর্কবার্তা, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে একাত্তরের বিরোধী শক্তি, বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ তার মিত্ররা অতিমাত্রায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মুখে জামাতের বিরোধিতা করলেও কার্যত তারা জামাতকে রক্ষায় নেমেছে। গণতন্ত্রের ইনক্লুসিভ অংশীদার করতে চাইছে।’
যেমন মোদীকে করতে চাইছে।
প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরা বলছেন, ওয়াশিংটনের অবস্থান রূপায়ণ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য হতে পারে ‘বিপদজ্জনক’। মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে একাত্তরের ‘পরাজিত শক্তি।’
‘আমেরিকা এতদিন আড়ালে আবডালে জামায়াতের পক্ষে কথা বলত। এখন বলছে প্রকাশ্যে। আমেরিকার কাছে জামায়াত এখন মডারেট ইসলামী দল। জামাত তাদের কাছে নরম ও আধুনিক মৌলবাদী।’ বলেছেন বাংলাদেশের মৌলবাদ-বিরোধী আন্দোলনের নেতা শাহরিয়ার কবির। ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তাই যত্রতত্র দৌড়ঝাঁপ করছে।’
আমেরিকার এই ‘ফোপরদালালি’ অবিলম্বে বন্ধ করার কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত। তার সাফ কথা, বিদেশীরা ফোপরদালালি করলে কোথাও তার পরিণতি ভালো হয়নি, এখানেও হবে না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, আমেরিকা বহুদিন থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এখন আরো চায় ওদের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির কারণে। আমরা আগে থেকেই সতর্ক করছিলাম। এখন ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ সবাই বুঝতে পারছে।
(কলকাতার সিপিএম’র দৈনিক গণশক্তির সাংবাদিক শান্তনু দে ঢাকায় এসেছেন দশম সংসদ নির্বাচন কভার করতে। তিনি এই প্রতিবেদনটি ঢাকা থেকে পাঠিয়েছেন। আজ গণশক্তিতে এটি ছাপা হয়েছে।)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন