বেহেশতের পাসপোর্ট ভিসা!
16 Dec, 2013
শংকর কুমার দে
সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষজনের মগজ ধোলাই ও বিভ্রান্ত করার জন্য এখন ‘পরকালের পাসপোর্ট ও বেহেশতের ভিসা’ দিচ্ছে জামায়াতÑশিবির। গানপাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষজন পুড়িয়ে মারতে গিয়ে নিজে মারা গেলে ‘শহীদি দরজা’ খোলা আর বেঁচে গেলে ‘গাজী’ হওয়ার প্রচারপত্র করছে তারা। পরকালের পাসপোর্ট, বেহেশতের ভিসা, প্রচারপত্র, আগুন লাগানোর গানপাউডার, তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুরের এক বাসা থেকে এসব উদ্ধারের সময় পুলিশ গ্রেফতার করেছে জামায়াতÑশিবিরের কর্মী-ক্যাডারসহ দুই সহোদরকে। গ্রেফতারকৃত দুই সহোদর খালিদ ও সাজিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক সহিংস তৎপরতা, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে হতাহতের ঘটনার পর ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও র্যাব।
বেহেশতের পাসপোর্ট ॥ রাজধানীর কল্যাণপুরের ২ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর বাড়ির ৫ তলার একটি কক্ষে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে পরকালের পাসপোর্ট ও বেহেশতের ভিসা। পরকালের পাসপোর্ট নামে উদ্ধার করা বইটির রং, আকৃতি মিলিয়ে দেখতে হুবহু প্রকৃত পাসপোর্টের মতোই। সবুজ রঙের এই বইয়ের মলাটের ওপর গোল করে সোনালি রং দিয়ে লেখা আছে পরকালের পাসপোর্ট। ইংরেজিতে লেখা আছে ‘পাসপোর্ট টু দ্য ডে অব জাজমেন্ট।’ পাসপোর্টটির মলাট, রং, আকৃতি প্রকৃত পাসপোর্টের মতো হলেও উদ্ধার করা বেহেশতের পাসপোর্টে আছে ৮০ পাতা। পাসপোর্টের বইয়ে আছে ৩৬টি অধ্যায়। বেহেশতের পাসপোর্ট নামক বইটির নিচে আছে লেখক মোঃ জিল্লুর রহমান।
বেহেশতের ভিসা দেয়া হয় ॥ পাসপোর্ট হলেই তো আর বিভিন্ন দেশে যাওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন হবে ভিসা। বেহেশতের পাসপোর্ট হলেই তো আর বেহেশতে যাওয়া যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন বেহেশতের ভিসা। পাসপোর্টের বিভিন্ন অধ্যায়ে বেহেশতের খাবার, কোন ধরনের প্লেটে খাবার পরিবেশন করা হবে এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে লেখা রয়েছে। বেহেশতের পাসপোর্টের একটি অধ্যায় আছে বেহেশতের ভিসা। বেহেশতের ভিসায় লেখা আছে যে কোন দেশে ঢুকতে যেমন পাসপোর্ট-ভিসা প্রয়োজন, তেমনি বেহেশতে ঢুকতেও ভিসা ও অনুমতিপত্রের প্রয়োজন। ভিসা বা অনুমতিপত্রের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি থাকতে হবে। বেহেশতের পাসপোর্টের ৮০ পৃষ্টার বইয়ের ৩৬ অধ্যায়ের এক জায়গায় লেখা আছে, মুনকার-নাকিরের প্রশ্নোত্তর পর্বের পর নেক্কার বান্দাদের কবরের সঙ্গে জান্নাতের একটি সংযোগ তৈরি হবে। তাতে বেহেশতির নাম, পিতার নামসহ সবকিছু লিপিবদ্ধ থাকবে। এতে উল্লেখ করা হয়, যে কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাঁর পাসপোর্ট থাকতে হবে, যাতে লেখা থাকবে, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংবলিত ভিসা।
কে দিচ্ছেন বেহেশতের পাসপোর্ট ও ভিসা ॥ বেহেশতের পাসপোর্ট ও বেহশতের ভিসা দিচ্ছে মোঃ জিল্লুর রহমান হাশেম নামক এক ব্যক্তি। তার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের করুইবন উত্তরপাড়ার মিয়াবাজারে। এই পাসপোর্টের বিক্রয়মূল্য ৩৫ টাকা। এই পাসপোর্টের কম্পোজ ও মুদ্রণ যাকর্স প্রেস এ্যান্ড পাবলিকেশনস লি. ২২৫/১ নিউ এলিফ্যান্ট রোড, চতুর্থ তলা (ঢাকা-১২০৫), লেখা রয়েছে। বেহেশতের পাসপোর্ট ও ভিসার লেখক জিল্লুর রহমান হাশেমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদ ॥ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কল্যাণপুরের ২ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর বাড়ির ওপর কয়েক দিন ধরে নজর রাখছিল পুলিশ। রবিবার এই বাড়ির পাঁচ তলার একটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে এসব সরঞ্জামসহ ওই দুই সহোদর ভাই খালিদ ও সাজিদকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। পুলিশ জানায়, জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় কর্মী-ক্যাডার তারা। তাদের গ্রেফতারের সময় পুলিশ উদ্ধার করেছে ৬ কেজি গানপাউডার ও বোমা তৈরির ৬০ কেজির মতো সরঞ্জাম রয়েছে। এই বাসা থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে প্রচারপত্র, পরকালের পাসপোর্ট নামে একটি বই এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের টি-শার্ট। দুই ভাই ছাড়াও পুলিশ আরও আটক করেছে ৪ জামায়াত-শিবিরের কর্মী-ক্যাডারকে।
গণতন্ত্র জনগণের মৃত্যুকূপ ॥ র্যাব-১ এর একটি বিশেষ টিম রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান চালিয়ে তারা আয়েশ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সামনে থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তাহরীর এর সক্রিয় সদস্য বাকী বিল্লাহকে গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতারের সময় উদ্ধার করা হয় ৪০টি লিফলেট, ২০টি পোস্টার ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে গণতন্ত্র জনগণের মৃত্যুকূপ।
জামায়াত-শিবিরের মেস থেকে পেট্রোল বোমা উদ্ধার ॥ রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুরে জামায়াত-শিবিরের একটি মেস থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। জামায়াত-শিবিরের মেস থেকে পেট্রোল বোমা উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ক্যাডারকে। তাদের গ্রেফতার করার সময় সেখানে থেকে উদ্ধার করা হয় পেট্রোল বোমা, গানপাউডারসহ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি। উদ্ধার করা হয়েছে জামায়াতের দলীয় উস্কানিমূলক বই পুস্তকও।
মগজ ধোলাই ॥ র্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর তাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে দাওয়াতী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের টার্গেট করছে। তাদের দলে ভিড়াতে মগজ ধোলাই (মোটিভেশনাল) কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর জঙ্গী সংগঠনটি তাদের বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে গোপন সূত্রে খবর পায় র্যাব।
ব্যাপক অভিযান পরিচালনা ॥ পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবির সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনার পর ব্যাপক অভিযান পরিচালনা শুরু করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর, জেএমবি, হুজিসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত থাকার খবর রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ও নৈরাজ্য চালাতে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষজনের মগজ ধোলাই, বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে উস্কানিমূলক প্রচারপত্র, লিফলেট, বইসহ নানা ধরনের কৌশলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের সহিংস তৎপরতা ও উস্কানিমূলক প্রচার প্রতিরোধে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কঠোর হস্তে দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাপক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উৎসঃ janakantha
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন