রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

সেই রিপোর্টটি ছিল সাজানো 01 Dec, 2013 ২৭ নভেম্বর বুধবার চাঁদপুর, কোর্ট স্টেশন, মধুরোড ও হাজীগঞ্জ স্টেশন থেকে ২শ’ ২৬ জন যাত্রী নিয়ে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অবরোধকারীদের হাতে মেহের স্টেশনের পশ্চিমে লাইন ওপড়ানো থাকায় ওই স্থানের দায়িত্বরত কর্মচারীদের তৎপরতায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি। মূল ঘটনাটি আড়ালে রেখে কয়েকটি ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় মনগড়া প্রতিবেদন প্রচার হয়। প্রতিবেদনে কৃষক তাজুল ঘটনার নায়ক বনে যান। সেই রিপোর্টটি ছিল সাজানো সরেজমিন জানা যায়, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে ২৭ নভেম্বর অবরোধকারীরা মেহের স্টেশনের পশ্চিম পাশে লাইন উপড়ে পেলে। তখন সময় ভোর সাড়ে ৫টা। ওই সময় চাঁদপুর থেকে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি মেহের অতিক্রম করার সময় সন্নিকটে। রাতে দায়িত্বপালন করা কীম্যান নুরু মিয়া মৌতা বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় প্রথমেই লাইনের স্লিপার ও ফিস প্লেট খোলা অবস্থা দেখে দৌড়ে মেহের স্টেশন মাস্টার মোস্তফাকে জানায়। মোস্তফা হাজীগঞ্জ স্টেশনে যোগাযোগ করে। ততক্ষণ হাজীগঞ্জ স্টেশন থেকে মেঘনা ট্রেনটি ছেড়ে আসে। হাজীগঞ্জ থেকে ছাড়ার সময় হচ্ছে ৫.৫৫ মিনিট। ওয়ারুক রেল ক্রসিং গেইটে প্রতিদিন সোয়া ৬টার মধ্যে আসে। ওইদিনও ঠিক ওই সময় চলে আসে। এরই মাঝে স্টেশন মাস্টার মোস্তফা বদলি দায়িত্বে গেইটম্যান (ওয়েম্যান) আঃ খালেককে ফোন করে বলে, তুমি লাল ঝা-া দিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দাও। সামনে লাইনে সমস্যা আছে। আঃ খালেক ঝাণ্ডা দিয়ে রেল ক্রসিংয়ের একটু পশ্চিম পাশে ট্রেন থামিয়ে দেয়। গেইটম্যান খালেকের সাথে কথা বলে চালক জয়নাল ক্রসিংয়ের সমানে এসে অবস্থান নেয়। পরে উপড়ে ফেলা লাইন ঠিক করে সচল করার পর ট্রেনটি মেহের স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ৮.১০ মিনিটে মেহের স্টেশনে পৌছে ৮.২০ মিনিটে লাকসামের উদ্দেশে মেহের স্টেশন ত্যাগ করে। অবরোধকারীদের উল্লেখিত ঘটনাটি চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত স্থানীয় বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু ওইদিন মেহের স্টেশন থেকে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার পর ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার কয়েকজন সংবাদকর্মী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সংবাদ পরিবেশন করে। একটি বেসরকারি চ্যানেল প্রকৃত ঘটনাটি তুলে ধরলেও আরেকটি চ্যানেলে তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে আবিস্কার করে। তাজুল ইসলাম দুর্ঘটনা থেকে ৫শ’ যাত্রীকে প্রাণে রক্ষা করেছে শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করে। সেই রিপোর্টটি ছিল সাজানো যাত্রীদের প্রাণে রক্ষা সংবাদ অনুসন্ধানে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী তুলে আনে ওই ঘটনাটির মূল চিত্র। পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক তাজুল ইসলামের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৫৫) জানায়, তার স্বামী ওই দিন ভোরে তাদের বাড়ীর পাশে রেল লাইনে হাঁটছিলো। সামনে হেটে একটু সামনে দেখে লাইন উপড়ানো অবস্থায় রয়েছে। তাজুল ইসলাম বাড়ীতে এসে তার স্ত্রীকে ঘটনাটি জানায়। স্ত্রী তার ছেলেকে স্টেশন মাস্টারকে জানাতে অনুরোধ করে। কিন্তু এর আগেই কীম্যান লাইনের এ অবস্থা দেখে মেহের স্টেশন মাস্টার মোস্তফার নিকট দৌড়ে গিয়ে সংবাদ পৌঁছায়। পরে সকাল ৮টার পর মিডিয়াকর্মীরা ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর মেহের স্টেশনে উপস্থিত হয়। ঘটনার কোনো আলামত না পেয়ে একজন মিডিয়াকর্মী স্টেশন মাস্টার মোস্তফার সাক্ষাতকার নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে। এরই মাঝে আরেকজন সংবাদকর্মী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাজুল ইসলামের নিকট জানতে চায়। এরপর ওই সংবাদকর্মী সংবাদ তৈরী করার জন্য তাজুল ইসলামের বাড়ী থেকে তার স্ত্রীর লাল পেটিকোট লাঠির মাথায় বেধে কাল্পনিক একটি ভিডিও চিত্র তৈরি করে। কীম্যান নুরু মিয়া জানায়, তিনি ঘটনার দিন সারারাত ওই লাইনে দায়িত্ব পালন করেন। ভোর সাড়ে ৫টায় মৌতা বাড়ী এলাকায় দুই স্থানে রেললাইন আংশিক কাটা দেখতে পান। এর একটু সামনেই গিয়ে দেখে স্লিপার ও ফিস প্লেট খুলে একটি লাইন ওপড়ানো রয়েছে। এই অবস্থা দেখে দৌড়ে স্টেশন মাস্টারকে সংবাদ দেয়। গেইট ম্যান আঃ খালেক জানায়, স্টেশন মাস্টার মোস্তফার ফোন পেয়ে লাল ঝাণ্ডা নিয়ে আমি ট্রেনটি থামিয়ে দেই। আমার সাথে মেঘনা এক্সপ্রেস চালকের সাথে কথা হয়। মেঘনা চালক জয়নাল আবেদীন জানায়, ওয়ারুক রেলক্রসিং আসার আগেই গেইটম্যান আঃ খালেক লাল ঝাণ্ডা দেখিয়ে ট্রেনটি থামানোর জন্য সতর্ক করে। আমি তাৎক্ষণিক ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ করি। লাইন সচল হওয়ার পর ওই স্থান ত্যাগ করি। তাজুল ইসলাম নামে কোনো ব্যাক্তিকে দেখেনি। তাজুল ইসলামের স্ত্রী রাহেলা বেগম জানায়, আমার স্বামী ওইদিন ভোরে রেল লাইনে হাঁটছিলো। লাইন ওপড়ানো দেখে বাড়ীতে এসে বললে, আমার ছেলেকে স্টেশন মাস্টারকে জানাতে অনুরোধ করে। আমার স্বামী আমার পেটিকোট নিয়ে লাইন দিয়ে হেটে গিয়ে দেখে তিনি যাওয়ার আগেই ওয়ারুক গেইটে ট্রেনটি থামানো রয়েছে। স্টেশন মাস্টার গোলাম মোস্তফা জানান, কীম্যান নুরু মিয়া আমাকে লাইন ওপড়ানো রয়েছে বলে সংবাদ পৌঁছায়। আমি চট্টগ্রামসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। মেঘনা ট্রেনটি মেহের স্টেশন অতিক্রম করার কথা ছিল ওই সময়। দ্রুত হাজীগঞ্জ স্টেশনে যোগাযোগ করলে আমাকে জানানো হয়, মেঘনা ট্রেনটি হাজীগঞ্জ ছেড়ে এসেছে। তাৎক্ষণিক আমি ওয়ারুক গেইটম্যান আঃ খালেককে লাল ঝাণ্ডা দিয়ে ট্রেনটি থামানোর জন্য বলি। কথামত ট্রেনটি ওইস্থানে অবস্থান নেয়। সকাল ৮টার পর লাইন সচল হওয়ার পর মেঘনা ট্রেনটি মেহের ত্যাগ করে। তাজুল ইসলাম নামে কোনো ব্যাক্তিকে ওই সময় দেখিনি। তবে পরে মিডিয়া ও লোকজনের মাধ্যমে তাজুল ট্রেন থামিয়েছে বলে জানতে পারি। উৎসঃ ঢাকাটাইমস২৪ Share on facebook Tweet Share on email Share on print 17

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন