বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩
দেশজুড়ে গণবিস্ফোরণ : নিহত আরও ৯ : তফসিলের পর সহিংসতায় ১৮ জনের মৃত্যু, ২৫ অক্টোবর থেকে নিহত ৫২ : চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর রণক্ষেত্র
স্টাফ রিপোর্টার
16
পরের সংবাদ»
একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টার প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনও সারাদেশ ছিল বিস্ফোরণোন্মুখ। প্রথম দিনের অবরোধের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় দিনেও দেশজুড়ে গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নজিরবিহীন অবরোধে দ্বিতীয় দিনেও অচল ছিল সারা দেশ। রাজপথ, রেলপথ ছিল বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রণে।
তবে জনগণের এই বিদ্রোহকে দমন করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী বর্বরতা চালিয়েছে। এদিনও নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তাদের সহযোগীর ভূমিকায় ছিল আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের হামলায় সিরাজগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ২ কর্মী এবং সাতক্ষীরায় জামায়াতের ১ কর্মী নিহত হয়েছে। এছাড়া অবরোধকারীদের হামলায় গাজীপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ গতকাল ৯ জন নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে গত সন্ধ্যায় যশোরে এক জামায়াত নেতাকে নিজ বাড়িতে গুলি করে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত আবদুল হাই সিদ্দিকী বুলবুল ছিলেন একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। জামায়াত নেতাদের দাবি, স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বুলবুলকে খুন করেছে। বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার যশোরে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া চট্টগ্রামে এক টেম্পো চালক এবং মঙ্গলবার ঢাকায় ককটেল হামলায় আহত ব্যাংক কর্মচারী আজ ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।
তফসিল ঘোষণার পর অবরোধে এ পর্যন্ত সারাদেশে সহিংসতায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বিএনপি জামায়াতের ৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে এ সময় আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ১৮ দলের চূড়ান্ত দফার আন্দোলনে গত ৬ নভেম্বর পর্যন্ত নিহত হয় অন্তত ৩৪ জন। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় বিএনপি ও জামায়াতের ২২ নেতাকর্মী নিহত হয়।
ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলনে গত ২৫ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে।
এদিকে গতকালের অবরোধে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে গতকাল রাজশাহী ও খুলনায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। রাজশাহীতে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়। খুলনায় আহত হয় নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপিসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
এছাড়া বরিশালেও অবরোধকারীদের ওপর পুলিশ হামলা চালালে অনুরূপ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিণত হয় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কাশিপুর এলাকা। সেখানে এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদসহ ১৮ দলের ৩২ নেতাকর্মী আহত হয়।
অবরোধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সারাদেশে অন্তত ৩৫ জেলায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ সাত শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ পুলিশ ও তিন সাংবাদিক রয়েছেন।
এদিকে গতকাল রেল যোগাযোগ ছিল প্রায় বন্ধ। অবরোধকারীরা গতকাল ভোরে জয়পুরহাটে রেললাইন উপড়ে ফেলায় চার ঘণ্টা রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়। সিরাজগঞ্জে গভীর রাতে রেললাইন কেটে ফেলায় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এখনও সেখানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।
সকালে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনের কাছে রেললাইন উপড়ে আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। চাঁদপুরে রেললাইনে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। এদিকে আগের রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে লাইনচ্যুত অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন সরানো গেলেও বগি উদ্ধার শেষ না হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সিরাজগঞ্জে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বিএনপি-জামায়াতের ২ জন নিহত
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ হামলা চালাকালে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে আবদুল জলিল (৫৫) নামে এক জামায়াত কর্মী ও মাসুম বিল্লাহ (২৮) নামে এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত আরও অর্ধশত আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বেলকুচির কল্যাণপুর থেকে জামায়াত ও বিএনপি নেতা কর্মীরা প্রায় আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মুকুন্দগাতী বাজারে এসে অবরোধের পক্ষে অবস্থান নেয়।
জামায়াত-বিএনপির মিছিলটি মুকন্দগাতি বাজার এলাকার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে আসা মাত্র আগে থেকেই অবস্থান নেয়া পুলিশ মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। একই সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ওই মিছিলের ওপর গুলি চালায়।
এ সময় র্যাব ও বিজিবি ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় মাসুম বিল্লাহ ও আবদুল জলিল গুলিতে নিহত হন। আহত হয় ২৫ জন।
নিহতদের মৃতদেহ তাদের পরিবারের সদস্যরা নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী জামায়াত ও বিএনপি নেতারা নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, জামায়াত বিএনপির হামলায় তাদের অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সাতক্ষীরায় গণবিস্ফোরণ, পুলিশের গুলিতে জামায়াত কর্মী নিহত, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতিসহ গ্রেফতার ১১
সাতক্ষীরায় পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। বুধবার ভোররাতে সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের আবাদের হাটখোলায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শামসুর রহমান (৩৫) শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের আবদুল মাজেদের ছেলে।
জানা যায়, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরতে পুলিশ মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সদরের আগরদাড়ি মাদরাসা এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শত শত গ্রামবাসী সড়কে নেমে পড়ে। তারা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করে। এ অভিযানে জনগণের কাছে পুলিশ ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার রাতে খুলনা পুলিশের ডিআইজি মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে র্যাব ও বিজিবির সহায়তায় এ অভিযান চালানো হয়।
পুলিশ গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রামবাসীও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের গুলিতে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা শামসুর রহমান নিহত হয়। এ সময় হাজারো গ্রামবাসী সড়কে বসে পড়ে। সাতক্ষীরা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। ভোর ৫টার দিকে পুলিশ জনতার ব্যারিকেড ভেঙে অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্ত হয়।
যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে জামায়াত-শিবিরক র্মীরা সদর উপজেলা এলাকার আবাদেরহাট বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী কার্তিক সাধু, নূর ইসলাম, শাহ আলমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান; তাপস আচার্য এবং গোপাল হালদারসহ অন্তত পাঁচজনের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালিয়ে আগুন দেয়।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, ‘যৌথবাহিনীর প্রায় এক হাজার সদস্য ৩৩টি গাড়ি নিয়ে এলাকায় আসে এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। এ সময় এলাকাবাসী মাইকিং করলে লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গুলিতে শামছুর রহমান নামে আমাদের এক কর্মী মারা গেছে।’
সদর থানার ওসি (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় যৌথবাহিনীর কোনো সদস্য হতাহত হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল গফফার জানান, গত ৫ বছরের মধ্যে আগরদাড়িতে এটি পুলিশের সবচেয়ে বড় ধরনের অভিযান। পুলিশের গুলিতে নিহত শামসুর রহমান (৩৫) জামায়াতের কর্মী।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি সদরের আলিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রউফসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১ জামায়াত, শিবির ও নিরীহ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে গতকাল ১৮ দলের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা শহরের কদমতলা, রামচন্দ্রপুর মোড়, বাকাল ব্রিজ, চালতেতলা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রাখে।
কলারোয়ায় অবরোধের গাছচাপায় মহিলার মৃত্যু
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার গোপীনাথপুরে রাস্তা অবরোধ করে রাখা গাছ সরাতে গিয়ে গাছচাপায় এক মহিলা নিহত হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মহিলা গোপীনাথপুরের হারুনার রশিদের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (২৪)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ দারা খান জানান, রাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা একটি গাছ অর্ধেক কেটে রাস্তার ওপর ফেলে সড়ক অবরোধ করে। বেলা ১২টার দিকে আম্বিয়া গাছের ডাল-পালা কাটার জন্য সেখানে গেলে বাকি অর্ধেক গাছের নিচে সে চাপা পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
কালীগঞ্জ রণক্ষেত্র, সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতা নিহত
বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ.স.ম. হান্নান শাহকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আয়োজিত হরতালে গতকাল কালীগঞ্জ ছিল রণক্ষেত্র। এ সময় দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হরতাল সমর্থকরা আওয়ামী লীগ নেতা ও জামালপুর ইউপি সদস্য কামাল হোসেন শেখকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকালে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের দোলান বাজারে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা কালীগঞ্জ-কাপাসিয়া সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করে।
দুপুর দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মো. কামাল মেম্বারের নেতৃত্বে দোলান বাজার থেকে একটি হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে চুপাইরের দিকে অগ্রসর হলে দীঘিরপাড়ে হরতাল সমর্থকরা পেছন দিক থেকে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে কামাল মেম্বার আহত হন। এছাড়াও ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ হোসেনসহ (২৪) উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়।
কামাল মেম্বারকে উদ্ধার করে চিকিত্সার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডা. মো. মাসুদ রানা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কামাল মেম্বারের মৃত্যুর সংবাদ দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দোলান বাজারের প্রায় ১০টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় এবং প্রায় ৪০টি দোকানে ভাংচুর করে।
অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে নরসিংদীর পলাশ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ঘটনার পরপরই কালীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শাহরিয়ার আল মামুনের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হরতাল সমর্থকরা বাহাদুরশাদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পালের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অন্যদিকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে উপজেলার ব্যস্ততম স্থান সোনালী ব্যাংক মোড়ের মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে অজ্ঞাত ৩ ব্যক্তি একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এর ৫ মিনিট পর ৫০ গজ দূরে পুরাতন ব্যাংকের মোড়ে আরও একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় ভয়ে পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। উপজেলার সর্বত্র থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
যশোরে জামায়াত নেতাকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা
গতকাল সন্ধ্যায় যশোরে এক জামায়াত নেতাকে নিজ বাড়িতে গুলি করে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত আবদুল হাই সিদ্দিকী বুলবুল ছিলেন একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, সে সম্বন্ধে তাত্ক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে জামায়াত নেতাদের দাবি, স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বুলবুলকে খুন করেছে। বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে আজ যশোরে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
এলাকাবাসী জানায়, রাত সোয়া ৭টার দিকে বুলবুল তার বাড়িতে অবস্থিত কম্পিউটার কোচিং সেন্টারে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ৩-৪টি মোটরসাইকেলযোগে কয়েক দুর্বৃত্ত এসে খুব কাছ থেকে বুলবুলের মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান বুলবুল। খুনিরা হেলমেট পরিহিত থাকায় তাদের কেউ চিনতে পারেনি। খুনিরা পালিয়ে গেলে এলাকাবাসী বুলবুলকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।
সাতকানিয়ায় মাইক্রো উল্টে যুবক নিহত
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অবরোধকারীদের ধাওয়া খেয়ে মাইক্রোবাস উল্টে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার নাম মো. শাহেদ (২০)। গতরাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলার হাসমতের দোকান এলাকায় অবরোধকারীরা মাইক্রোবাসটিকে ধাওয়া করে। এটি দ্রুতবেগে চলার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় গুরুতর আহত শাহেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিত্সকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাহেদ সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের খন্দকারপাড়া গ্রামের বদিউল আলমের ছেলে।
চট্টগ্রামে টেম্পো চালক নিহত
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত কালো তফসিলের বিরুদ্ধে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল চট্টগ্রামে পুলিশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল বেপরোয়া।
নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবরোধকারী ১৮ দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে রাবার বুলেট, টিয়ারশেলের সঙ্গে মুহুর্মুহু গুলি চালিয়েছে পুলিশ। উপর্যুপরি গুলিবর্ষণে অন্তত ২০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যও রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যুদ্ধংদেহী অবস্থানের পরও রাজপথ দখলে রাখে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। দিনভর চলতে থাকা সংঘর্ষ এক পর্যায়ে খণ্ডযুদ্ধে পরিণত হয়। সংঘর্ষের সময় নগরীর নিমতলা ট্রাক টার্মিনাল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সংঘর্ষের সময় অলঙ্কার এলাকায় পুলিশের ৪টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। জেলার পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে অবরোধ সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পালাতে গিয়ে টেম্পো উল্টে মারা যান টেম্পো চালক এরশাদ আলী।
ঢাকায় ককটেলে আহত ব্যাংক কর্মচারীর মৃত্যু
রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেলে আহত এক নারী ব্যাংক কর্মচারী মারা গেছেন। আনোয়ারা বেগম (৪৫) নামের ওই নারী ন্যাশনাল ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন।
গতকাল ভোর ৪টার দিকে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আনোয়ারার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তার স্বজনরা।
বিরোধী দলের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার বিকালে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হন আনোয়ারা। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এরপর পথচারীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
৩৫ জেলায় সংঘর্ষ সহিংসতা, ১৪ পুলিশ ও তিন সাংবাদিকসহ আহত সাত শতাধিক
অবরোধের প্রথম দিনের মতো গতকালও অনুরূপ হামলা, সংঘর্ষ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে অন্তত ৩৫টি জেলায়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটে, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, লক্ষ্মীপুর, কুড়িগ্রাম, পটুয়াখালী, নীলফামারী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, ঝিনাইদহ, জামালপুর, চাঁদপুর, দিনাজপুর, কক্সবাজার, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চাঁপাইনবাবাগঞ্জ, নোয়াখালী, শরীয়তপুর, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও যশোরসহ আরও কয়েকটি জেলায় এসব সংঘর্ষ-সহিংস ঘটনা ঘটে।
এসব জেলার বিভিন্ন জায়াগায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রতি বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। অনেক স্থানে যোগ দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সাধারণ জনতাকে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এতে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ সাত শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ পুলিশ ও তিন সাংবাদিক রয়েছেন।
বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে গতকাল রাজশাহী ও খুলনায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। রাজশাহীতে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ ৫০ নেতাকর্মী আহত হন। খুলনায় আহত হন নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপিসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
বিভাগীয় শহরগুলোর বাইরে ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংস ঘটনা ঘটে সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, নাটোর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে।
এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও পৌর এলাকার একডালায় পুলিশ-আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। ঝিনাইদহের খালিশপুরে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় সংঘর্ষ হলে তিন আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাসহ ১০ জন আহত হন।
নাটোরে বিএনপি-জামায়াতের ৩ কর্মীকে মারধর করায় ১৮ দলের কর্মীরা আওয়ামী লীগ-যুবলীগের ৩-৪টি বাড়িতে ভাংচুর চালায়। এ সময় সংঘর্ষ বাধলে ১৫ জন আহত হয়। এর আগে বড়াইগ্রামের রাজাকার মোড়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ হলে ২৫ জন আহত হয়।
নরসিংদীতে জেলা বিএনিপর মিছিলে হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় সংঘর্ষ বাধলে আহত হন পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টরসহ ১০ নেতাকর্মী।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের পুলিশ গুলি চালালে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক আহত হয়। সোনারগাঁয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। গুলিবিদ্ধ ১০ জনসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। রূপগঞ্জের ভুলতায় যুবদল-ছাত্রদলের ওপর আওয়ামী লীগ-পুলিশ গুলি চালালে ৮ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়। সিদ্ধিরগঞ্জেও পুলিশের লাঠিচার্জে ৫-৬ নেতাকর্মী আহত হন। সেখানে অবরোধকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন এক সাংবাদিক।
সিরাজগঞ্জে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষ আহত ৫০
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেলকুচি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া ও যুবদল নেতা রাসেল আহমেদের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার বোয়ালিয়া বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে ফরিদুল, রকি, আলম, রফিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ১০-১৫টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অপর দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় জামায়াত-বিএনপি অবরোধের সমর্থনে দুপুর ১২টার দিকে মিছিল বের করে। মিছিলটি উপজেলার মুকন্দগাতী গার্লস স্কুলের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালালে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেটে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া, যুবদল নেতা রাসেল আহমেদসহ প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।
এদিকে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার একডালা মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুখু মিয়া, সনি, বাদশা, জাহাঙ্গীর, রফিক, শওকতসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ৫টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। পুলিশ প্রায় ২০ রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অবরোধের সমর্থনে সকালে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের তেকুপিতে রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের ধাওয়া দেয়।
ঝিনাইদহে জামায়াত-যুবলীগ সংঘর্ষে আহত ১০
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহে অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে ১৫টি টেম্পো ও দুটি ট্রাক ভাংচুর করেছে পিকেটাররা। মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুবলীগের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া শৈলকূপা উপজেলার শেখপাড়া বাজারে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে শিবির নেতাকর্মীরা।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কের শেখপাড়া, গাড়াগঞ্জ, মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর, দারিয়াপুর বাজার, হুদার মোড় এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার থেকে শুরু করে বলুহর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় গাছ ফেলে আগুন জ্বালিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কের হাটগোপালপুর, গোয়ালপাড়া, কালীগঞ্জ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের লাউতলা, ঘিঘাটি, ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের মোবারকগঞ্জ সুগার মিল গেট ও খয়েরতলা এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের পিকেটাররা। ভোর থেকে কর্মীরা এসব সড়কে অবস্থান নেয়। এরপর বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে। পুলিশ টহল থাকলেও মহেশপুরসহ ছয় উপজেলাতেই মারমুখী ভূমিকায় দেখা গেছে অবরোধ সমর্থকদের। জেলার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে কোনো রকমের ইঞ্জিনচালিত যানবাহন ছেড়ে যায়নি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, জেলার মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজারে কালীগঞ্জ-চুয়াডাঙ্গা সড়কে ভোর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার জন্য অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধ তুলে দেয়ার জন্য তাদের ধাওয়া করলে তারাও পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। অবরোধকারীদের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা শন্টু চৌধুরী, এসবিকে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান ও যুবলীগ নেতা আব্দুল জলিল বিসুসহ ১০ জন আহত হন। এছাড়া একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ২টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে শিবির কর্মীরা। সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি পৌঁছলে অবরোধকারীরা পিছু হটে যায়।
বড়াইগ্রামে বিএনপি-জামায়াত ও আ.লীগের সংঘর্ষে আহত ২৫
বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে জেলার বড়াইগ্রামের রাজাকার মোড়ে বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এর আগে গত রাতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ উভয় পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে চিকিত্সাধীন বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের আটক করতে পুলিশ হাসপাতালে হানা দিলে ১৮ দলের কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৩/-৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। পরে হাসপাতাল থেকে ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার অবরোধের সমর্থনে সকাল থেকেই বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রামের রাজাকার মোড়ে অবস্থান নেয় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। সকাল ১১টার দিকে রাজাকার মোড়ে যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের জেরে জামায়াত-বিএনপির ৩ কর্মীকে মারপিট করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ খবর পেয়ে ১৮ দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুরনো রাজাকার মোড়ে বড়াইগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রবিউল করিমসহ ৫ আওয়ামী লীগ কর্মীর বাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৯ জনকে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার পর ১৮ দলের কর্মীদের ধরতে বড়াইগ্রাম সার্কেল এএসপি মাহফুজ্জামান আশরাফের নেতৃত্বে হাসপাতালে হানা দেয় পুলিশ। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশ এ সময় ৩-৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বড়াইগ্রাম পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক প্রধানসহ ৭ নেতাকর্মীকে আটক করে।
আটক হওয়া অন্যরা হলো শামিম আহম্মেদ (২৫), মনির (২৫), সাইফুল (২৮), শামিম হোসেন (২৮) , রবিউল (৩০) ও আবু হানিফ (৪০)। তবে আটক হওয়াদের অভিযোগ, চিকিত্সারত অবস্থায় তাদের আটক করা হয়েছে। গতকাল বুধবার হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলো আল আমিন (১৮), ইয়ারুল (২৪), ফিরোজ আহম্মেদ (৩২), হযরত আলী (২৬), মোরসালিন (১৯), হাজী সহির উদ্দিন (৫৬) ও খোরশেদ আলী (৬০)। তার আগে মঙ্গলবার রাতে রাজাকার মোড়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা মিছিলের সময় খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও দুলুসহ বিএনপি নেতাদের বিলবোর্ড ভাঙলে বিএনপি কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ শুরু হলে বড়াইগ্রাম থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল বারী রফিক, বিএনপি কর্মী খোরশেদ, রুপচাদ, বেলাল, রফিক, আনিসুর, হানিফ ও আশরাফসহ ১০ জন আহত হয়। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে এএসপি সার্কেল মাহফুজুজ্জামান আশরাফ বলেন, আটককৃতরা হাসপাতালে গিয়ে আওয়ামী লীগের আহত কর্মীদের ওপর হামলা করবে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনে মামলা করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এছাড়া ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ভোর থেকেই মাঠে নেমে আসে ১৮ দলের কর্মীরা। আহম্মেদপুর বাসস্ট্যান্ডে টায়ারে আগুন দিয়ে ও কাঠের গুঁড়ি ফেলে নাটোর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে পিকেটাররা। উপজেলা ১৮ দলের আহবায়ক সাবেক এমপি অধ্যক্ষ একরামুল আলমের নেতৃত্বে বনপাড়া বাজারে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এছাড়া ভোর থেকেই বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের রাজ্জাক মোড়, নাটোর-পাবনা মহাসড়কের ধানাইদহ, কদিমচিলান, দাঁইড়পাড়ায় অবরোধ করে ১৮ দল। র্যাব, বিজিবি ও পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। শহরে দোকানপাট খোলা থাকলেও জনসমাগম কম।
নরসিংদীতে পুলিশের লাঠিচার্জ, ৫ পুলিশসহ আহত ১০
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোরে নরসিংদীর মনোহরদীতে ট্রাকে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। সকাল ১০টায় জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে চিনিশপুরের ইউসিবি ব্যাংকের সামনে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে অবরোধ চলাকালে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর আবুল কাইয়ুম সহ বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়। পরে পুলিশ বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে আটক করে।
এদিকে জেলার শিবপুর, সদর উপজেলার মাধবদী ও পাঁচদোনায় অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকেই অবরোধকারীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া পলাশে লাঠি মিছিল করেছে উপজেলা ছাত্রদল।
পুলিশ জানায়, অবরোধকারীদের ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার দায়ে মনোহরদী ও সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সোনারগাঁয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন ১০ গুলিবিদ্ধসহ আহত অর্ধশতাধিক
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ১৮ দলের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোলপ্লাজা, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও কাঁচপুর চাঁদমহল এলাকায় বিএনপি, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পৃথকভাবে টায়ারে অগ্নিসংযোগ, মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। এ সময় পুলিশ মেঘনা এলাকা থেকে বিএনপির ৪ নেতাকর্মীকে আটক করে।
সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নানের নেতৃত্বে কয়েকশ’ নেতাকর্মী টায়ার জ্বালিয়ে ১ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোলপ্লাজা এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে, মহাসড়কে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ ও যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এ সময় অবরোধকারীরা ৮/১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ ও অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। উত্তেজিত নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ সময় উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় আফিয়া পেট্রোল পাম্পের সামনে বিএনপির কর্মীরা একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেয়। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের কারণে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশের গুলিতে থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম, পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি আবদুর রাহীম, থানা ছাত্রদল নেতা খায়রুল ইসলাম সজীব, যুবদল নেতা জামাল, সোহেল, জাসাস নেতা আবুল হাসেম রতন, সানাউল্লাহ সানু, সুজন, বাবুল, মোক্তার, শাহ আলী, তানভীর, পারভেজসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয় এবং অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ মেঘনা টোলপ্লাজা, নিউ টাউন ও বেপারী মার্কেটে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ খোকন, ওমর ফারুক, তবারক ও শরিফ নামে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। মেঘনা এলাকায় পুলিশের রায়ট কার ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
সোনারগাঁ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান খান জানান, বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জানমালের রক্ষার্থে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। এলাকায় ৪ প্লাটুন পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
রূপগঞ্জে ৮ গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় গতকাল বুধবার যুবদল, ছাত্রদল-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৮ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে ৩০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩ শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় যুবদলের ২০ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার সাদাত সায়েম সমর্থকরা রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ঢাকা বাইপাস সড়ক অবরোধ করে। এ সময় অবরোধকারীরা গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর করে ভুলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু মালিকানাধীন গাউছিয়া মার্কেটের ২৬টি দোকান ভাংচুর করে। ৪টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে আরও ৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। ভুলতা-মুড়াপাড়া সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে।
এতে নাজমুল, নয়ন, মাসুম, বাপ্পী, মুন্না, আল আমিন, বাদশা, সিয়াম গুলিবিদ্ধ ও যুবদলের দেলোয়ার হোসেন, ফটিক মিয়া, রাশিদুল হক, নুরবক্স, বাসেদ দেওয়ান, আনোয়ার, সালামত উল্লাহ, মিলন, সালাউদ্দিন, আলম, ছাত্রদলের বাদল, রাজিব, খলিল, মনির, আমজাদ, মোফাজ্জল, নবী হোসেনসহ ৩০ জন আহত হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ আকতার, লিয়ন, নজরুল, জাকির, পারভেজ, শরীফ, আজহারুল, মামুন, স্বপন, নোমান, করিম, সজল, করিমুল্লাহ, দ্বীন ইসলাম, কবির হোসেন, আলাউদ্দিন, সহিদুল্লাহ, মজিবুর, হাফেজ মিয়াসহ ২০ জন যুবদল ও ছাত্রদল কর্মীকে আটক করেছে। এছাড়াও দিপু সমর্থকরা ভুলতা, মর্তুজাবাদ, কালাদী, জিন্দা, আধুরিয়া, বরপা, মুড়াপাড়া, চনপাড়া, যাত্রামুড়া এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তারিফুজ্জামান জানান, যুবদল-ছাত্রদল মিছিল বের করে। রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাধা দেয়। এতে ত্রিমুখী সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়। পৃথক স্থান থেকে যুবদল ও ছাত্রদলের ২০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু বলেন, হামলা-মামলা ও হয়রানি করে বিএনপির আন্দোলন দমানো যাবে না। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আহবান জানান।
সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের গুলি, সাংবাদিক আহত
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে অবরোধকারী যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময়ে ইটের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রেস ক্লাবের ফটোসাংবাদিক বিশাল আহমেদ। এছাড়া ভাংচুর করা হয়েছে ইটিভির একটি গাড়িসহ কয়েকটি যানবাহন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ ও ১১/১২ রাউন্ড গুলি করে। এতে ৫/৬ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের ব্যানারে একটি মিছিল বের হয়। এ সময় তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ১১/১২ রাউন্ড গুলি করে। এ সময় ছবি তোলার সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রেস ক্লাবের ফটোসাংবাদিক বিশাল আহমেদ আহত হয়। একই সময় ইটিভির একটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে পিকেটাররা। আহত বিশাল আহমেদকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল হাজী ইব্রাহীম খলিল শপিং কমপ্লেক্সে মা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ভোরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়িতে বিএনপি নেতা আলী হোসেন প্রধান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাছান শরীফের নেতৃত্বে টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেড দেয় নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল মতিন জানান, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। তখন লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়েছে।
আড়াইহাজারে বিএনপি-পুলিশ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় যুবদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তায় টায়ার ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে অবরোধকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আড়াইহাজার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, অবরোধকারীরা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ২০ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ৩টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় অবরোধকারীরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এদিকে সকালে ইলুমদী এলাকায় বদরুজ্জামান খসরুর অনুসারী বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন অনু ও মহিলা দল নেত্রী পারভিন আক্তারের নেতৃত্বে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন